আজকের শিরোনাম :

‘টিকা গ্রহনে করোনা পুরোপুরি না কমলেও মৃত্যুঝুঁকি কমবে’

  ড. বে-নজীর আহমেদ

০২ মে ২০২১, ১৭:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. বে-নজীর আহমেদ। তিনি কালাজ্বর, ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ, জলাতঙ্ক ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার জন্য প্রশংসিত। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মুখ্য  বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ইউনিসেফের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়, সহায়তা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রে কাজ করেছেন। দেশে করোনার বিস্তার, টিকাদান কর্মসূচি ও রোগ প্রতিরোধের নানা কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন এই সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এহ্সান মাহমুদ। সাক্ষাৎকারটি এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল:

প্রশ্ন: আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণের এক বছর পরে চলতি বছরের মার্চ থেকে আবার করোনার প্রকোপ বেড়ে গেল। এই বৃদ্ধির জন্য ইউকে ও সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে। এত দিনেও আমরা করোনার ছড়িয়ে পড়াটা রোধ করতে পারলাম না কেন?

ড. বে-নজীর আহমেদ: সহজে বলতে গেলে, কমিয়ে আনতে না পারার কারণ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারা। সুযোগ পাওয়ার পরেও আমরা কয়েকটি কাজ করতে পারিনি। কয়েকটি কাজ ভালোভাবে করতে পারলে, এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে যখন করোনার সংক্রমণ কম ছিল তখন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এই পরিস্থিতি হতো না। তখন রোগী শনাক্ত কম হচ্ছিল। সেই সময়ে প্রতিটি করোনা রোগীকে যদি আইসোলেশনে পাঠানো যেত, রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছে, তাদের যদি আইসোলেট করা যেত তবে এভাবে করোনা বিস্তার লাভ করতে পারত না। সেই সময়ে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যেটি সংক্রমণ কমিয়ে আনতে পারে। উল্টো এমন কিছু কাজ হয়েছে, যেগুলো দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়তে সহায়ক হয়েছে। যেমন স্থানীয় সরকারের বেশ কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনী প্রচারণার মিছিল হয়েছে, সভা হয়েছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, ভোটকেন্দ্রে জনসমাগম হয়েছে। এগুলো করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছে। ওই সময়ে বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান যেগুলোতে জনসমাগম হয় তাতে নিরুৎসাহী করা হয়নি, দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চলেছে। করোনার জন্য কোনো বাড়তি নিয়ম মানা হয়নিএসব কারণে করোনা তখন ছড়িয়ে পড়েছে। যদি ওই সময়টাতে, করোনার সংক্রমণ কম থাকার সময়ে করোনাকে আরও কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা যেত, তাহলে এখনকার পরিস্থিতি অনেকটা এড়ানো সম্ভব হতো। এছাড়া আমাদের মনে একটা ধারণা হয়েছিল, আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। এর ফলে অনেকেই করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনি। এটাও করোনার বিস্তারে প্রভাব রেখেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, ইউকে ভ্যারিয়েন্ট। এটি করোনা বিস্তারে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার সময়ে বিশে^ও বহু দেশ ইংল্যান্ডের সঙ্গে বিমান চলচাল বন্ধ করে দিল। আমরা কূটনৈতিক সম্পর্কের দোহাই দিয়ে তা খোলা রাখলাম। এরপরে কোয়ারেন্টাইনের প্রসঙ্গ এলো। ইংল্যান্ড থেকে যারা ফিরবেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা গেল না নিয়ম মেনে। তাদের হোটেলে রাখা হলো, দেখা গেল তারা হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়ল। এমন করে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট দেশে প্রবেশ করেছে এবং দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন: আমরা যে বলছিইউকে ভ্যারিয়েন্টের জন্য করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, এটা আসলে কীসের ভিত্তিতে বলছি? করোনা নিয়ে আমাদের দেশে কোনো গবেষণা আছে কি?

ড. বে-নজীর আহমেদ: গবেষণা কিছু আছে, কিন্তু সরকার সেগুলোকে সেইভাবে উপস্থাপন করছে না। আমাদের দেশে বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ আছে, তারা প্রায় নিয়মিতই জেনোম সিকোয়েন্সিং করে যাচ্ছে। সেগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সমন্বয় করে যে একটা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা হচ্ছে না। গবেষণায় যে ফলাফল আসছে সেগুলোর সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা, হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা, মৃত্যুর সংখ্যাএসব বিশ্লেষণ করতে হয়। তবেই একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া সম্ভব, যার ভিত্তিতে করণীয় বিষয়ে নির্ধারণ করা যায়। এটা এখানে সঠিকভাবে হচ্ছে না। এগুলো করার জন্য আইইডিসিআর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আইইডিসিআরের সেই সক্ষমতা নেই। এগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে, এমন মানসম্মত লোকের ঘাটতি আছে। যেমন আইসিডিডিআর’বি প্রকাশ করল যে, ৮৩ ভাগ সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে তারা যেসব জেনোম সিকোয়েন্সিং করেছে তার ভিত্তিতে। এমন আরও গবেষণা দরকার। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। আর যে ক’জন বিজ্ঞানী আছেন, তাদের গবেষণা ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সরকার কিছু করছে না। তাই এগুলো সামগ্রিকভাবে কাজে আসছে না।

প্রশ্ন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন যে ব্রিফিং দিয়ে আসছে, সেখানে বাস্তবিক অর্থে করোনা পরিস্থিতির কতটা প্রতিফলন ঘটে?

ড. বে-নজীর আহমেদ: এই ব্রিফিংটা মানসম্মত না। এখানে অনেক কিছুর বিশ্লেষণ দেওয়া হয়, যেগুলো আসলে রোগতাত্ত্বিকভাবে সঠিক নয়। যেমন যখন বলা হচ্ছে গত ২৪ ঘণ্টায় এত সংখ্যক লোক শনাক্ত হয়েছে। এটা তো সঠিক নয়। সঠিক হলো- গত ২৪ ঘণ্টায় এতটি পরীক্ষার ফলাফল তারা পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২দিন আগে বা ৫দিন আগে। তাহলে সেটি তো তখন গত ২৪ ঘণ্টার বিষয় থাকছে না। এটা গণমাধ্যমেও ভুলভাবে প্রচার হয়ে আসছে। বলা হয়ে থাকে শনাক্ত হয়েছে এতজন রোগী? এটা কি ঠিক? একেবারেই নয়। একইভাবে বলা হয়ে আসছে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার এত। এটাও বলা ঠিক নয়। এটা তো আসলে সংক্রমণের হার নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরেন ২৫ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে ৫ হাজার রয়েছে যারা দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ফিটনেস পরীক্ষা করিয়েছে। তারা তো এমনিতেই সুস্থ। তাহলে তাদের সংখ্যাটাও সংক্রমণের হারের সঙ্গে মেলানো তো ঠিক হচ্ছে না। এখানে বলা উচিত ২৫ হাজার পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫ হাজার ফিটনেস পরীক্ষার জন্য। বাকিটা করোনা শনাক্ত পরীক্ষা। এর ভিত্তিতে যেটা আসবে, সেটাই হচ্ছে আসল সংখ্যা। এরপরে আমরা প্রতিদিন বলছি, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে এতজন। এই সংখ্যাটাও ঠিক নয়। কারণ, এখানে কাদের সুস্থ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে যাদের উপসর্গ ছিল, এখন নেই। এর বাইরে যাদের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি কিন্তু আক্রান্ত, তারা তো হিসাবের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। তাই যখন সুস্থতার হারটাও বলছি, সেটিও সঠিক বলছি না। তাই এগুলোকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমলে নিই না। এসব প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করে না।

প্রশ্ন: আমাদের দেশে যেটিকে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলা হচ্ছে, তা মোকাবিলায় সরকার ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আর সাধারণে যেটি ‘লকডাউন’ হিসেবে বলা হচ্ছে, সেটিও কার্যত ভেঙে পড়েছে। গণপরিবহন ছাড়া ঢাকায় সব চলছে। এরই মধ্যে শপিংমল খোলার ঘোষণা এসেছে। এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

ড. বে-নজীর আহমেদ: আমাদের জনস্বাস্থ্যের ভাষায় লকডাউন বলে কোনো শব্দ নেই। এটির নাম হলো মুভমেন্ট রেসট্রিকশন অর্থাৎ, চলাচল সীমিত করা। চলাচল সীমিত করার উদ্দেশ্য এই আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তা ছড়াবে না। চলাচল সীমিতকরণ নানা পর্যায়ে হতে পারে। যেমন আন্তঃজেলা চলাচল সীমিত করা। এর মাধ্যমে এক জেলা অন্য জেলায় বাস, লঞ্চ, ট্রেন এমনকি বিমানযোগেও চলাচল করা যাবে না। যেটি ৪ এপ্রিল থেকে চলছে। এর একটা সুফল পাওয়া যাচ্ছে এখন। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় করোনা ছড়াবে না। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচল সীমিত করা গেলেও শহরের মধ্যে কিন্তু লোকজন ঠিকই চলাচল করছে। এরপরে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো খুলে রাখা হয়েছে। তাই ভাইরাসটিকে একেবারেই ঘরেবন্দি করে রাখার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সামনের দিনে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে, তাতে করে লকডাউনের সুফল যতটুকু পাওয়া গেল, আরও বেশি সুফল পাওয়ার সুযোগ নেওয়া দরকার ছিল।

প্রশ্ন: করোনার টিকা মজুদ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? 

ড. বে-নজীর আহমেদ: টিকাদানে আমরা ভালো করেছি। প্রায় এক কোটির ওপরে টিকা আমরা পেয়েছি। এতে করে প্রায় ৫০ লাখ লোককে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়ার সুযোগ ছিল। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ৫৭ লাখ লোককে এক ডোজ করে টিকা দিয়েছি। বাকি যে টিকা আছে, তা দিয়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ লোককে সুরক্ষিত করতে পারব। এতে করে আমরা ফ্রন্টলাইনার যারা স্বাস্থসেবা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের সুরক্ষিত করতে পারলাম। বয়স্ক লোকদের, যাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি তাদের সুরক্ষিত করতে পারলাম। এটা আমাদের টিকার সফলতা। তবে প্রতি মাসে যে ৫০ লাখ করে টিকা পাওয়ার কথা ছিল, সেটি এখন অনিশ্চিত হয়ে গেল। ৩ কোটি টিকা পাওয়া গেলে আমরা দেড় কোটি লোককে টিকা দিতে পারতাম। পাশাপাশি কোভেক্স থেকে যদি ৩ কোটি টিকা আনাতে পারতাম তাহলে মোট ৩ কোটি লোককে টিকা দেওয়া যেত, সেটা পারলাম না। এটা আমাদের দোষ নয়। এটা এখনকার বৈশি^ক পরিস্থিতি। আমরা যেখান থেকে টিকা আনছি, ভারত তাদের নিজেদের দেশে রোগী বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ চাপের জন্য তারা টিকা দিতে পারছে না। এখন সরকার বিকল্প ভাবছে। রাশিয়া ও চীনের কথা আলোচনা হচ্ছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজারের টিকা পাওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এসব দিয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে যে সব লোক প্রথম ডোজ নিয়েছে, তারা যাতে দ্বিতীয়টি নিতে পারে। টিকা পাওয়ার পরে তা বিভিন্ন বয়সসীমার মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের টার্গেট নিতে হবে ২০২১ বা ২০২২ সালের মধ্যে যেন আট-দশ কোটি লোককে টিকার আওতায় আনা যায়। তাহলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে আমরা টিকার আওতায় আনতে পারব। এর ফলে আমাদের করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে। এতে মৃত্যুঝুঁকি কমবে। তবে করোনা পুরোপুরি কমানো যাবে না।

প্রশ্ন: বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার সুনির্দিষ্ট পরামর্শ কী?

ড. বে-নজীর আহমেদ: আমাদের ধারণা, সংক্রমণ কমে আসবে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমে আসবে। মৃত্যুও কমে আসবে। এখন স্বাস্থ্য বিভাগ একটি শ্বাস নেওয়ার সময় পাচ্ছে বলা যায়। এই সময়ে যে রোগীগুলো আসবে, তাদের প্রত্যেককে যদি আইসোলেশনে রাখা যায়, প্রত্যেককে ট্রেসিং করা যায়, যারা সংস্পর্শে আসবে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা যায় তাহলে সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনা যাবে। করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে ব্যাপক। পাশাপাশি, একটি বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, কষ্ট হলেও মানতে হবে, সামনের দিনে যেসব দেশে করোনার নতুন ধরন দেখা দেবে, সে দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখতে হবে। যেমন ভারতে এখন করোনার ডাবল, ট্রিপল ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় আমাদের এসব বিষয় কঠোরভাবে মানতে হবে। যদি তা না করতে পারি, তবে আবারও খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

ড. বে-নজীর আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সৌজন্যে: দৈনিক দেশ রূপান্তর

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ