বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার সুযোগ নেই : হাছান মাহমুদ
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০১৮, ১২:০৯
ঢাকা, ০৯ আগস্ট, এবিনিউজ : নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপি থাকার কোনো সুযোগ নেই। সংসদে যাদের প্রতিনিধিত্ব আছে তাদের দিয়েই নির্বাচনকালীন সরকার হবে। ফলে বিএনপিকে কোন কোন মন্ত্রনালয় দিতে হবে এমন কথাবার্তা অবান্তর। এমনটিই মনে করেন সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
সম্প্রতি বিএনপিপন্থী বৃদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদের দেওয়া চার শর্তের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভাবনার বিষয়ে জানতে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে এসব কথা বলেন হাছান মাহমুদ। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
সাংবাদিক: এমাজউদ্দীন আহমেদ বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে চারটি শর্তের কথা বলেছেন। তার মধ্যে প্রথম শর্ত হলো- বিএনপি চেয়ারপারসনসহ ২০ লাখ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
ড. হাছান মাহমুদ: বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে যতো মামলা আছে তার কোনোটিই রাজনৈতিক মামলা নয়। এগুলো ভাংচুর ও জ্বালাও পোড়াওয়ের অভিযোগে ফৌজদারী মামলা। এখন নির্বাচনের আগে কি ফৌজদারী অপরাধে অপরাধীদের- যারা সন্ত্রাস- চাঁদাবাজি করেছে সেসব অপরাধীদের ছেড়ে দিতে হবে? এসব অপরাধীসহ তাদেরকে যারা অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে, নির্দেশ দিয়েছে তাদের মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নাই। তাহলে তো নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্থ হবে। কোন আইনের বলে বা কোন ক্ষমতার বলে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের ছেড়ে দিতে হবে?
সাংবাদিক: সংসদ ভেঙে দেওয়ার একটা দাবিও তিনি করেছেন। যেটি বিরোধী দলীয় নেতারা বহু দিন ধরে বলে আসছেন।
হাছান মাহমুদ: এমাজ উদ্দীন আহমেদ সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু সংসদ ভেঙ্গে দিলে দেশে এক ধরণের ভ্যাকুয়াম তৈরি হবে। কোনো কারণে যদি নির্বাচন বাধাগ্রস্থ হলে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদ আবার যেকোনো সময় তা ‘কনভীন’ করতে পারে। কিন্তু সংসদ ভেঙ্গে দিলে সে সুযোগটা সীমিত হয়ে যাবে। ফলে সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। গতবারও সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হয়েছিল। যারা সংসদ সদস্য তারা সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা না নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবেন।
সাংবাদিক: নির্বাচনকালীন সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ তিন থেকে পাঁচটি মন্ত্রনালয়ও তারা চেয়েছেন।
হাছান মাহমুদ: সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী যেসব দল আছে তাদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠণের কথা আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভা সমিতিতে বলেছি। যেহেতু বিএনপি সংসদে নাই তাই তাদেরকে নির্বাচনকালীন সরকারে রাখার কোনো সুযোগ নাই। যেহেতু তাদেরকে নির্বাচন কালীন সরকারে রাখার সুযোগ নাই তাই তাদেরকে কোনো মন্ত্রণালয় দিতে হবে- এমন বক্তব্য অবান্তর।
সাংবাদিক: তাহলে কেমন হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার?
হাছান মাহমুদ: সংবিধানে নির্বাচন কালীন আলাদা সরকার গঠণ করার কোনো কথা বলা নেই। তারপরও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কালীন ছোট পরিসরে সরকার গঠন করেছিলেন। এবারো বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকবে। তবে সরকারের আকার ছোট হবে। বর্তমান সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে তাদের সমন্বয়েই আমরা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করব। এই সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
সাংবাদিক: এমাজউদ্দীন আহমেদ হঠাৎ করে কেন এমন শর্ত দিলেন। রাজনেতিক অভিজ্ঞতার জায়গা এটিকে কিভাবে দেখছেন?
হাছান মাহমুদ: এগুলো বিএনপি`র কথা। বিএনপি`র অধিকাংশ নেতাকর্মী নির্বাচনে আসার পক্ষে। কিন্তু বিএনপি নেতারা সরাসরি না বলে এমাজউদ্দীন সাহেবকে দিয়ে বলিয়েছেন।
সাংবাদিক: আপনি কী বিএনপি`র উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
হাছান মাহমুদ: আমি বিএনপি কে অনুরোধ করবো এসব দাবি দাওয়া ও শর্ত না দিয়ে তারা নির্বাচনে আসুক। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী দেশের আইন অনুযায়ী এসব দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।
সাংবাদিক: কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্ণেল অলি আহমেদ নির্বাচনকালীন সরকারে থাকছেন। আবার আপনি এক সভায় বলেছেন, মওদুদ আহমেদ আগামী দু`মাসের মধ্যে মত পাল্টাবেন। তাহলে কী পর্দার আড়ালে এমন কিছু ঘটছে?
হাছান মাহমুদ: কর্ণেল অলিকে নিয়ে এমন কোনো বিষয় আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে বিএনপি নেতা ব্যারিষ্টার মওদুদ সাহেবের তো দল পাল্টানোর অভ্যাস আছে। তিনি নিজে বলেছেন, ‘আগামী দু` মাসের মধ্যে দেশের রাজনীততে অনেক কিছু পাল্টে যাবে।’ তাই আমি বলছি রাজনীতি পাল্টাবে না তবে মওদুদ সাহেব অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে পাল্টে যায় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
সাংবাদিক: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছেন, ‘ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই’। যদি বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতেন?
হাছান মাহমুদ: প্রধানমন্ত্রী সত্য কথাই বলেছেন। এর দ্বারা বুঝা যায়, তিনি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জনগণের ভোটের উপর নির্ভর করেন। জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা করেন। জনগণের ভোট ছাড়া তো ক্ষমতায় আসা সম্ভব না। আমি- আমরা সবাই, পুরো আওয়ামী লীগ ভোটের জন্য জনগণের উপর নির্ভর করি।
সাংবাদিক: তাহলে কী এবারের নির্বাচন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মত হচ্ছে না?
হাছান মাহমুদ: গত নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় শতভাগ অংশগ্রহণমূলক হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। এবারো আমরা মনে প্রাণে চাচ্ছি বিএনপি`র সুবুদ্ধির উদয় হোক। তারা নির্বাচনে আসুক। সেটা রাজনীতি গণতন্ত্র, নির্বাচন, সংসদ সবকিছুর জন্য ভালো। বাকিটা তাদের উপর নির্ভর করছে।
সাংবাদিক: নির্বাচন সামনে রেখে জেলা- উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এটা কী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না?
হাছান মাহমুদ: দেখুন, আওয়ামী লীগ একটা বড় রাজনৈতিক দল। সারাদেশে এর লাখ লাখ নেতা কর্মী। কোটি কোটি সমর্থক। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে কিছু মতদ্বন্দ্ব থাকতে পারে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকাটাও স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। কারণ, আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দলে শেষ কথা। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই হবেন নৌকার প্রার্থী। অন্যরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তার জন্য কাজ করবেন। ফলে অন্তর্কোন্দল নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না।
সাংবাদিক: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য।
হাছান মাহমুদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের জন্য শুভকামনা।
সংগৃহিত
এবিএন/মাইকেল/জসিম/এমসি