আজকের শিরোনাম :

রামকে নিয়ে রসিকতা : অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২০, ১২:০৬

ভারতের শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে যে তিনি একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন।

চার লাইনের ওই পোস্টে রসিকতার ছলে রামায়ণের পরিচিত আখ্যানের সেই অংশটি লিখেছিলেন ওই অধ্যাপক, যেখানে রামচন্দ্র তার স্ত্রী সীতাকে এক পর্যায়ে পরিত্যাগ করেছিলেন।

কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ছাত্র সংগঠনের এক সদস্য এই নিয়েই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।

অযোধ্যায় যেদিন রামমন্দিরের ভূমিপুজো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সেদিনই রাতে ফেসবুকে চার লাইনের একটি ছোট পোস্ট দিয়েছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দ্য সেন।

এক পুরুষ ও এক নারীর মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথনের মাধ্যমে ফেসবুকে তিনি যা লিখেছিলেন, বাংলায় তার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘এই নাটক সেই ব্যক্তির জন্য - যিনি নিজের স্ত্রীকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন শুধু লোকে কী বলবে, সেই ভয়ে।’

শেষ লাইনে পুরুষটি বলছেন, ‘ও তুমি শ্রীরামচন্দ্রের কথা বলছ!’

এই পোস্টে হিন্দু দেব-দেবীদের অপমান করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক সদস্য।

অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জী বলছিলেন, এই পোস্টে কোনোভাবেই রামচন্দ্রের অপমান করা হয় নি।

‘যদি কোনো লেখা বা পোস্টে শ্রীরামচন্দ্র শব্দটি থাকে তাহলেই যদি বলা হয় যে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হচ্ছে, তা হলে তো খুব বিপজ্জনক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বলেছে বাক স্বাধীনতা কোনও ভাবেই হরণ করা যায় না,’ বলছিলেন চ্যাটার্জী।

তিনি আরও বলছিলেন, যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলি এখানে একেবারেই টেঁকে না।

রামায়ণের যা পরিচিত আখ্যান, তা বাল্মীকির রচিত রামায়ণ হোক বা কৃত্তিবাসের বাংলা রামায়ণ- বেশিরভাগ রামায়ণেই এই কাহিনীর উল্লেখ রয়েছে যে ১৪ বছরের বনবাস থেকে ফিরে এসে সীতাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন রামচন্দ্র।

তাই এটা কোনোমতেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হতে পারে না বলে মত দিয়েছেন বেদ-পুরাণ নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন অধ্যাপক রোহিণী ধর্মপাল।

তার কথায়, ‘স্বয়ং বাল্মীকিই তো লিখেছেন যে লোকের মুখের কথা শুনেই রাম সীতাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। এই কথাটাকে যদি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত বলা হয়, তাহলে তো বাল্মীকির রামায়ণকেই অস্বীকার করতে হয়।’

রোহিণী ধর্মপাল যেমন অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের ফেসবুক পোস্টের সঙ্গে মূল রামায়ণের কোনও সংঘাত দেখছেন না, তেমনই নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলছিলেন, রামচন্দ্রের সীতাকে পরিত্যাগ করার ঘটনাটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কতটা প্রজাবাৎসল্যের নমুনা, তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

‘এ ঘটনাটা রামচন্দ্রের প্রজা বাৎসল্যের পরাকাষ্ঠা কী না তা নিয়ে বহু মানুষেরই প্রশ্ন আছে। সীতাকে রাবণ অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল, তাই সীতা সচ্চরিত্র কী না, তা নিয়ে কিছু মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করলো আর তিনি স্ত্রীকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিলেন! এও তো বলেছিল তার প্রজারা যে রাবণের ঘর থেকে এনে যদি সীতাকে প্রাসাদে প্রতিষ্ঠা করেন, তাহলে সাধারণ লোকের ঘরের নারীরা যদি কোনও বেচাল করে, তাহলে তো স্বামীদের কিছু বলার থাকবে না।’ বলছিলেন শাশ্বতী ঘোষ।

তাই তিনি মনে করেন এই প্রশ্ন তোলা খুবই সঙ্গত।

মহাকাব্যের সঙ্গে অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের ফেসবুক পোস্টের কোনও বিরোধ আছে কী না, তা নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে, তেমনই কথা হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অজুহাতে বাক স্বাধীনতাই হরণ করার চেষ্টা হচ্ছে কী না, তা নিয়েও।

‘আমি যতটা বুঝেছি, ওই পোস্টটিতে কিছুটা শ্লেষ ছিল। সেটা নিয়ে এত বড় ইস্যু করার কোনও দরকার ছিল না,’ বলছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য।

তার কথায়, ‘এর পেছনে একটা রাজনৈতিক অঙ্ক আছে। তারা তো ভারতের সর্বত্রই এ ধরনের ঝামেলা পাকিয়ে বেড়াচ্ছে। যেভাবে মানুষের টুঁটি টিপে ধরা হচ্ছে, গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, তাকে যে কী ভাষায় নিন্দা করব বুঝতে পারছি না।’

যে ছাত্রটি অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে, তারই অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক শিক্ষককে কয়েক মাস আগে তিনদিন পুলিশ হেফাজতে থাকতে হয়েছিল।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ