আজকের শিরোনাম :

পাকিস্তান নির্বাচন: প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে ইমরান খান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০১৮, ২০:৫৯ | আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৮, ২১:০০

ঢাকা, ২৬ জুলাই, এবিনিউজ : পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে সবশেষ বেসরকারি ফলাফলে এখন পর্যন্ত এগিয়ে ইমরান খানের দল পিটিআই। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সূত্র উদ্ধৃত করে ইংরেজি দৈনিক ডন জানাচ্ছে, মোট ২৭২টি আসনের মধ্যে ১১৯টি আসনের আংশিক ফলাফলে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ইমরানের পিটিআই।

এখন পর্যন্ত ৪৯% অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম আসনের ফলাফলে ইমরান খানের দলের অগ্রযাত্রা দেখে পর্যবেক্ষকরা নিচ্ছেন তিনি পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

তবে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৭টি আসন পিটিআই প্রার্থীরা জিততে পারবে কিনা, তা নিয়ে এখনও প্রবল সন্দেহ রয়েছে। সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হলে, ইমরান খানকে কোয়ালিশন সরকার গড়তে সহযোগী খুঁজতে হবে। ইমরান খানের সমর্থকেরা ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমে উল্লাস করছেন।

এখন পর্যন্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) পেয়েছে ৬৪ টি আসনে এগিয়ে, বিলওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)'র এগিয়ে ৪৩টি আসনে।

পাকিস্তানের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বেসামরিক দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে যাচ্ছে। এর কারণে এবারের নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিশ্ব গণমাধ্যম।

এবার ১০ কোটি ৬০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৫০%-৫৫% শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনের আগে ইমরান কান বিবিসিকে বলেন, জিতলে তার নজরের কেন্দ্রে থাকবে পাকিস্তানের অর্থনীতি। পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির মূল্যমান সম্প্রতি ২০ শতাংশ পড়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী এবং রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেড়েই চলেছে। চীন থেকে আসা সস্তা কাপড়চোপড় আসায় পাকিস্তানের বস্ত্র খাত সঙ্কটে পড়েছে।

অর্থনীতিবিদরা সাবধান করছেন, ২০১৩ সালের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানকে হয়তো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে যেতে হবে।

বিবিসির সেকেন্দার কেরমানি বলছেন, সরকারি ব্যয় সঙ্কোচন সহ কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরবর্তী সরকারকে।

নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ

এদিকে, তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা সেইসঙ্গে বড় ধরণের ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন।ভোটের ফলাফল খুব ধীরে ধীরে প্রকাশ করায় তারা এমন অভিযোগ তোলেন।

নির্বাচনে ভোট গ্রহণ এবং ভোট গণনা নিয়ে শুরু থেকেই এমন নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

নির্বাচনের আগে থেকেই নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ- পিএমএল-এন অভিযোগ করেছে যে পিটিআইকে বিজয়ী করতে আদালতের সহায়তা নিয়ে সেনাবাহিনী কয়েকটি স্থানে তাদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযান চালিয়েছে।

এদিকে স্বাধীন গণমাধ্যম বলছে, পিটিআই এর বাইরে অন্য দলগুলোকে দমন করার প্রচেষ্টাও চালিয়েছে সেনাবাহিনী। যদিও সেনারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে মানবাধিকার কমিশনও নির্বাচনের বৈধতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, ভোট গণনার সময় তাদের পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

এমনকি নির্বাচনী শৃঙ্খলা ভেঙ্গে ফলাফলের সার্টিফাইড কপি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করে।

বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা বিশেষ করে পিএমএল-এন এর শক্তিশালী কেন্দ্র পাঞ্জাব প্রদেশে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণায় অস্বাভাবিক বিলম্ব হওয়ায় ফলাফলের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোট কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তাদের দেরি হচ্ছে।

এছাড়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইমরান খানকে জেতানোর চেষ্টা করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটাও অস্বীকার করেছে দলের নেতৃবৃন্দ।

কে এই ইমরান খান?

একসময়কার এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ১৯৯২ সালে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের জন্য বিশ্বকাপ জয় করেছিলেন।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেছেন তিনি।

প্লেবয় জীবনধারা এবং তিনটি বিবাহের কারণে গণমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন তিনি।

১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলটি চালু করেন কিন্তু দীর্ঘদিন তিনি নেতা হিসেবে পেছনের সারিতে ছিলেন। পাকিস্তানের দুর্নীতি এবং বংশীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে যে তার দল সামরিক মধ্যস্থতার সুবিধা নিয়েছে। যদিও ইমরান খান এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পাকিস্তানের এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক রক্তপাত দেখতে হয়েছে দেশটির সাধারণ মানুষকে।

নির্বাচন কেন্দ্রে হামলার পর ভোট পরিস্থিতি:

পাকিস্তানের এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক রক্তপাত দেখতে হয়েছে দেশটির সাধারণ মানুষকে।

এমনকি ভোটের দিনও একটি ভোটকেন্দ্রে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হন।

তবে স্থানীয় সাংবাদিক মনির আহমেদ জানান, "হামলার পর পর জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল ঠিকই, তবে খানিকক্ষন পরেই ভোটাররা আবারও ভোট দিতে এসেছেন। সবাই ভেবেছিল ভোট দেয়া হয়তো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে এমন কিছুই হয়নি। ভোটারদের মধ্যে এরপরও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে বেশ উতসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়।"

শাহবাজ শরীফ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনেন। কোন পথে হাঁটবে নওয়াজ শরীফের দল?

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল- পিএমএলএন সেইসঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছোট দলগুলো ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যানের দিকে ঝুঁকছে।

দলীয় নেতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফ তার টুইট বার্তায় অভিযোগ করেন, " যেভাবে জনগণের সিদ্ধান্তকে অসম্মানিত করা হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায়না।"

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে জেল খাটছেন নওয়াজ শরীফ।

পিটিআই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে নওয়াজ শরীফ ও বিলওয়াল ভুট্টো জোট গঠন করতে পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।

এদিকে, ভোট গণনায় মতো যদি সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও দেরী হয় তাহলে সেটি পাকিস্তানের জনগণের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

কেননা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে তারা আগে থেকেই বেশ উদ্বিগ্ন।

নারী ভোটারের উপস্থিতি:

তবে এবারের নির্বাচনে নারী ভোটারের উপস্থিতি আগের চাইতে ভালো ছিল বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের ডেইলি নিউজ পত্রিকার সাংবাদিক মনির আহমেদ।

গতবছর দেশটির নির্বাচন কমিশন নারী ও পুরুষ ভোটারের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে প্রতিটি এলাকায় অন্তত ১০ শতাংশ নারী ভোটারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছিল।

নির্বাচন কমিশনের এমন নিয়মের ব্যাপারে মনির আহমেদ বলেন, "আফগানিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন ভোটকেন্দ্রগুলোয় নারী ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এই নিয়ম বা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর কারণে বেলুচিস্তানে এবারের নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া পাকিস্তানের শহর কেন্দ্রীক যে ভোটকেন্দ্রগুলো রয়েছে যেমন, করাচি, লাহোর বা ইসলামাবাদ। সেখানে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বরাবরই ভাল থাকে।"

গতকাল ভোট গ্রহণের সময়সীমা একঘণ্টা বাড়াতে দলগুলো, নির্বাচনের কমিশনের কাছে অনুরোধ জানালেও কেন্দ্রগুলো নির্ধারিত সময়েই বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে সেই এক ঘণ্টা বাড়ানো হলেও ফলাফলে কোন পরিবর্তন আসতো না বলে জানান মি. আহমেদ। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 


এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ