আজকের শিরোনাম :

মিসরের প্রাচীন শবাধারের ভেতরে কঙ্কাল রহস্য

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৩:২২

ঢাকা, ২৩ জুলাই, এবিনিউজ : সপ্তাহ তিনেক আগে মিসরের প্রতœতত্ত্ববিদরা আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কালো গ্রানাইটের তৈরি বিশালাকৃতির একটি শবাধার উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই শবাধারটি প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো এবং এটি কেউ কখনো খুলেও দেখেনি।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে শবাধারটিকে ঘিরে ব্যাপক রহস্যের সৃষ্টি হয়। নানা রকমের জল্পনা কল্পনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে।

এমন কথাও শোনা যায় যে ওই শবাধারে কি তাহলে গ্রিক নেতা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের দেহাবশেষ রাখা আছে?

এই প্রশ্নের যখন ডালপালা গজাতে শুরু করে তখনই শবাধারটি উন্মুক্ত করেন বিশেষজ্ঞরা। এর ভেতরে পাওয়া যায় তিনটি মানুষের কঙ্কাল। লাল-বাদামি নোংরা পানিতে এসব কঙ্কাল ডুবে আছে। শবাধারটির ভেতর থেকে তখন তীব্র কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।

বাড়িঘর নির্মাণ কাজের সময় এই শবাধারটি পাওয়া যায়। এটি খোলার জন্যে তখন মিশরের সরকার প্রতœতাত্ত্বিকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয়।

মিসরের একটি সংবাদ মাধ্যম আল-ওয়াতান বলছে, শবাধারটির ঢাকনা মাত্র দুই ইঞ্চি উপরে তোলার সাথে সাথেই এর ভেতর থেকে এমন কটু গন্ধ বেরিয়ে আসতে শুরু করে যে প্রতœতত্ত্ববিদদের পক্ষে আর সেখানে থাকা সম্ভব হয়নি।

পরে মিসরের সামরিক বাহিনীর প্রকৌশলীদের সাহায্য নিয়ে শবাধারটি উন্মুক্ত করা হয়।

প্রাচীন নিদর্শন সংক্রান্ত সুপ্রিম কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা ওয়াজিরি বলেন, ‘আমরা সেখানে তিনজন মানুষের হাড়গোড় পেয়েছি। দেখে মনে হচ্ছে, একটি পরিবারের উদ্যোগেই নিহতদেরকে মমি করে এই শবাধারে রাখা হয়েছিল। তবে মমিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। দেহের মাংস পচে গলে রয়ে গেছে শুধু হাড়গুলো।’

তিন বলেন, তিনি নিজেও শবাধারটির ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দেখেছেন। কিন্তু তার কোন ধরনের ক্ষতি হয়নি।

মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র আল-আহরাম বলছে, স্থানীয় লোকজনের মধ্যে একটা ভীতি তৈরি হয়েছে যে এই শবাধারটির ভেতরে এমন এক ধরনের গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। এই আশঙ্কায় শবাধারটি যেখানে রাখা হয়েছে সেখান থেকে স্থানীয় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ রকম প্রাচীন শবাধারে যে ধরনের গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা নিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা শোনা যায়। এমন কথাও বলা হয় যে শবাধারটি খোলার অভিশাপে লোকজনের মৃত্যুও হতে পারে।

এর উদাহরণ হিসেবে বলা হয় ১৯২৩ সালের একটি ঘটনার কথা। সে বছর টোটেনখামুনের শবাধার উন্মুক্ত করার পরপরই লর্ড কারনার্ভন নামের এক ব্যক্তি, যিনি এই খননকাজে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন, তিনি বিষাক্ত একটি মশার কামড়ে মৃত্যুবরণ করেন।

তখন থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে শবাধারটির ভেতরে যে ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়েছিল তার কারণেই লর্ড কারনার্ভনের মৃত্যু হয়েছিল।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা এ ধরনের গুজব নাকচ করে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এফ ডি উল্ফ মিলার বলেন, শবাধারের ভেতরে তৈরি ব্যাকটেরিয়া কিম্বা মোল্ডের কারণে আজ পর্যন্ত কোনো প্রতœতত্ত্ববিদ বা পর্যটকের খারাপ কিছু হয়েছে এ রকম একটি উদাহরণও পাওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলেকজান্দ্রিয়ায় দুই হাজার বছরের পুরনো শবাধারটি থেকে যে তিনজনের কঙ্কাল পাওয়া গেছে তারা ফারাও আমলের সৈন্য হতে পারেন।

তারা বলছেন, তিনটি কঙ্কালের একটির মাথার খুলিতে এমন একটি আঘাত আছে যা দেখে মনে হয় যে সেখানে তীরের আঘাত লেগেছিল।

শবাধারটির উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় ফুট। লম্বায় তিন মিটার। বলা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত এরকম যতো শবাধার পাওয়া গেছে তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড়।

এর ওজন ২৭ টন। ৩২৩ খৃস্টপূর্বে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের মৃত্যুর পর যে টলেমেইক যুগের শুরু হয়েছিল ধারণা করা হয় এই শবাধারটি সেই আমলের।

বিশেষজ্ঞরা এখন এই শবাধারটির উপর গবেষণা করে বোঝার চেষ্টা করছেন এর ভেতরে যাদের কঙ্কাল পাওয়া গেছে তারা কোন সময়ের মানুষ এবং কী কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছিল।
সূত্র : বিবিসি 

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ