চেন্নাইয়ের ডিটেনশন ক্যাম্পে ১৪ বাংলাদেশিসহ তাবলিগের বহু বিদেশি সদস্য
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২০, ১৫:২৯
দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাতের সমাবেশে যোগ দিতে আসা ১২৯ বিদেশি তাবলিগ সদস্যকে চেন্নাইয়ের একটি বন্দি শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে।
ভারতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশি তাবলিগ সদস্য আটক আছেন, কিন্তু চেন্নাইয়ের মতো বন্দি শিবিরে তাদের রাখা হয়নি কোথাও। অভিযোগ উঠেছে, জামিন পাওয়া সত্ত্বেও আটক তাবলিগ সদস্যদের ছাড়া হয় নি।
চেন্নাইয়ের পুল্লাল কারাগারের ভেতরেই একটি ভবনকে বন্দি শিবির নাম দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৯টি দেশের ১২৯ তাবলিগ জামাত সদস্য আটক আছেন।
তাদের মধ্যেই বন্দি হয়ে আছেন বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা একে সামসুল হক।
সামসুল হকের ছেলে এহতেশাম ইবনে শামস বলছিলেন, মাস দুয়েক বাবার খোঁজই পাননি তারা। বাবা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দিল্লি গিয়েছিলেন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে লকডাউন হয়ে যায় ওখানে। অনেক চেষ্টা করেও খোঁজ পাচ্ছিলাম না। মাস দুয়েক পরে জানতে পারি যে বাবাকে চেন্নাইয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধরার সময়েই তো টাকা-পয়সা, মোবাইল সব নিয়ে নিয়েছিল। তাই কোনো যোগাযোগই করা যায়নি।
১২৯ বিদেশি তাবলিগ জামাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় তামিলনাডুর ১৫টি জায়গা থেকে মার্চ আর এপ্রিলের শুরুতে। তাদের মধ্যে ১২ নারীও আছেন। তার পর থেকে দুটি কারাগারে রাখা হয়েছিল তাদের, কিন্তু এখন চেন্নাইয়ের পুল্লাল জেল চত্বরেই একটি ভবনকে ডিটেনশান সেন্টার বা বন্দি শিবির বানিয়ে সেখানে রাখা হয়েছে।
ওই বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে সক্রিয় তামিলনাডুর এক রাজনৈতিক নেতা এম এইচ জাওয়াহিরউল্লা।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, ‘পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তামিলনাডু গণস্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী। বলা হয়েছে এরা রোগ ছড়াচ্ছিলেন। তাছাড়াও বিদেশী আইনের দুটি ধারা অনুযায়ী এঁদের বিরুদ্ধে ভিসার নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগও আনা হয়েছে। তামিলনাডুর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের সবাইকে চেন্নাইয়ের পুল্লাল জেলের শিশু-কিশোর বন্দিদের থাকার জন্য একটি ভবনে রাখা হয়।’
জাওয়াহিরউল্লা বলেন, ‘মাঝে একবার সবাইকে সইদাপেট জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন আবার পুল্লাল জেলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আইন অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকদের শুধু নির্দিষ্ট ৫টি বন্দিশালাতেই আটক রাখা যায়। যে কোনো জেলে তাদের রাখার নিয়ম নেই। এখন আবার তাদের চেন্নাই জেলের সেই শিশু-কিশোর বন্দিদের ভবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, কিন্তু জেলের ভেতরে হলেও বিশেষ আদেশ বলে সেটিকে বন্দি শিবির বা ডিটেনশান ক্যাম্প নাম দেওয়া হয়েছে। সেখানেও আইন ভাঙ্গা হয়েছে।
৮ নারীসহ ৯৮ তাবলিগ সদস্যকে জামিন দিয়েছে বিভিন্ন আদালত। জামিন পাওয়ার পরেও তাদের বন্দি শিবির থেকে ছাড়া হয়নি। আর বাকি ৩১ তাবলিগ সদস্যকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চ। কিন্তু তাদেরও পুলাল জেলের আরেকটি ভবনে রাখা হয়েছে, যেটিকে বিশেষ নাম দিয়ে বন্দি শিবির বানানো হয়েছে।
এম এইচ জাওয়াহিরউল্লা বলছিলেন, ‘একটি ভবনে বড়জোর ৩০-৪০ জন থাকতে পারে। কিন্তু সেখানে ৯৮ জনকে রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী নারীদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করার কথা, সেটা মানা হয় নি। পানীয় জলের সমস্যা আছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের ওই শিবিরে। জেলের অন্য বন্দীদের যে খাবার দেওয়া হয়, সেই একই খাবার তাবলিগ সদস্যদেরও দেওয়া হয়। বাকি যে ৩১ জন, তাদের এই ভবনটিতে আর রাখা হয়নি- সেটি সম্ভব হতো না। তাই অন্য একটি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিটা ব্যাপারেই তামিলনাডু সরকার আইন ভঙ্গ করেছে।’
অন্যদিকে খুলনায়, সামসুল হকের পরিবার রয়েছে চিন্তায়, কারণ তার হার্টের সমস্যা আছে। বন্দি শিবিরে কী চিকিৎসা হচ্ছে, তা অতদূর থেকে জানাও সম্ভব হচ্ছে না, কথাও বলা যাচ্ছে না তার সঙ্গে, বলছিলেন সামসুল হকের ছেলে এহতেসাম ইবনে শামস।
‘আমার বাবা হার্টের রোগী। সঙ্গে পাশের এলাকার একজন গেছেন, তার ডায়াবেটিস আছে। বন্দী শিবিরে ওষুধপত্র, চিকিৎসার কী ব্যবস্থা হচ্ছে জানতে পারছি না। কথা বলাও যাচ্ছে না,’ বলছিলেন শামস।
জাওয়াহিরউল্লার কথায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশি তাবলিগী সদস্য ভারতে এখন রয়েছেন। কিন্তু তামিলনাডু ছাড়া কোথাও তাদের বন্দী শিবিরে রাখা হয়নি। কোথাও মসজিদে, কোথাও হজ ভবনে থাকার ব্যবস্থা করেছে মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলো।
চেষ্টা করেও এ নিয়ে তামিলনাডু সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া জোগাড় করা যায়নি। বিদেশি তাবলিগ জামাতের সদস্যদের বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তুলেছে ওই বিদেশি নাগরিকদের যদি কালো তালিকাভুক্ত করে ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কেন এখনও ভারতে রেখে দেওয়া হয়েছে? কেন তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হয় নি!
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ