আজকের শিরোনাম :

বিরোধীদের ধুলোয় মিশিয়ে বিপুল জয়েও মোদি ঠিক মোদিতে নেই!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৮, ১১:৩৯

ঢাকা, ২১ জুলাই, এবিনিউজ : প্রত্যাশা মতোই বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে পর্যুদস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু বিপক্ষকে ধূলিসাৎ করে যে নিরঙ্কুশ জয় পেতে তিনি সাধারণভাবে অভ্যস্ত, ঠিক তেমনটা ঘটল না শুক্রবার।

এ দিন সকালে আচমকা আলিঙ্গনে যে লড়াইটা বিজেপি শিবিরে পৌঁছে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী, নিজের বক্তৃতায় মোদি তার জবাব দেবেন— এমনটাই আশা ছিল শাসক পক্ষের। কিন্তু রাত ৯টার পরে প্রধানমন্ত্রী যখন বলতে উঠলেন, তখন দেখা গেল, মোদি ঠিক মোদিতে নেই। রাজনীতির ময়দানে সাধারণভাবে নিজের নিয়মে খেলতে পছন্দ করেন মোদি। কিন্তু আজ তাকে খেলতে হলো রাহুলের ঠিক করে দেওয়া পথে। এবং প্রতি পদে বোঝা গেল, তিনি ঠিক স্বচ্ছন্দ নন। কটাক্ষের সুরে রাহুলের আলিঙ্গনের জবাব দিলেন, কিন্তু সেটা ঠিক প্রধানমন্ত্রীসুলভ হলো না। তার পরেও প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে যা বললেন, সেটা তার সরকারের বহুশ্রুত সাফল্যগাথা- বিরোধী দল এবং নেটদুনিয়ার একটা বড় অংশের মতে ‘ঘুমপাড়ানি’। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এমনকি বিজেপি সাংসদরাও।

অবশ্য দিনের শেষে বিজেপির ঝুলিতে একেবারে কিছুই নেই, এমনটাও নয়। প্রথমত, এ দিনের অনাস্থা ভোট বিপুল ব্যবধানে জিততে চেয়েছিলেন অমিত শাহেরা। সে জন্য দলের অসুস্থ সাংসদ পি এল পটেলকে লোকসভা কক্ষের বাইরে স্ট্রেচারে শুইয়ে পর্যন্ত রেখেছিলেন তারা। যাতে একটা ভোটও হাতছাড়া না হয়। অমিত শাহের ফোনের পরেও শিবসেনার মতো সব চেয়ে পুরনো শরিক গোটা অনাস্থা পর্ব বয়কট করেছে ঠিকই, কিন্তু এ দিন ভোটদাতা সাংসদদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন পেয়েছে বিজেপি।

অন্যদিকে, গরহাজির ছিলেন বিরোধী শিবিরের অনেক সাংসদ। বিতর্কে যোগ দেননি বিজেডি সাংসদরাও। ফলে সব মিলিয়ে আগামী লোকসভা ভোটের আগে অনাস্থা ভোটের ফল বিজেপির মনোবল বাড়াবে। 

এ দিন রাতেই মোদি টুইট করেন, ‘লোকসভা ও ১২৫ কোটি ভারতীয়ের সমর্থন এনডিএর সঙ্গে রয়েছে। যে সব দল আমাদের সমর্থন করেছে, তাদের ধন্যবাদ। দেশ বদলের এবং যুব প্রজন্মের স্বপ্নপূরণের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’ 

বিজেপি সূত্র বলছে, এই জয়ে বলীয়ান হয়ে আগামীকালই উত্তরপ্রদেশের জনসভা থেকে কার্যত লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দেবেন মোদি।

পাশাপাশি, এ বারের সংসদ অধিবেশনটাও সম্ভবত শান্তিতে কাটাতে পারবে বিজেপি। গণপ্রহার থেকে শুরু করে অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে সংসদে সরকারকে চেপে ধরার সুযোগ ছিল বিরোধীদের। কিন্তু অধিবেশনের গোড়াতেই অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে আলোচনা হয়ে যাওয়ার পরে আর সেই আক্রমণ দানা বাঁধার সুযোগ কম।

এ দিনের অনাস্থা ভোটের পেছনে বিরোধীদের মূল লক্ষ্য ছিল, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা যাচাই করে নেওয়া। নিজের বক্তৃতায় সেই চেষ্টাকেই আক্রমণ করেছেন মোদি। বিরোধী ঐক্য ভাঙার লক্ষ্যে তার দাবি, অনাস্থা প্রস্তাব তার সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আসলে কংগ্রেস এর মাধ্যমে দেখতে চাইছে তাদের প্রতি শরিকদের আস্থা রয়েছে কি না। সেই সঙ্গে মোদীর ইঙ্গিত, বিরোধী জোটে রাহুল একমাত্র নেতা নন। তার কথায়, ‘বাকিদের মধ্যে নিজেকে নেতা হিসেবে প্রমাণ করার পরীক্ষা করলেন এক জন।’

অতীতে দেবগৌড়া, ইন্দ্রকুমার গুজরালের মতো নেতাদের সঙ্গে কংগ্রেস কী রকম ব্যবহার করেছে, সেই উদাহরণও তুলে ধরেন মোদী। অন্য বিরোধী নেতাদের বোঝাতে চান, কংগ্রেসের সঙ্গে থাকলে অপমান সহ্য করেই চলতে হবে। মোদীর অভিযোগ, ‘একটি পরিবারের চোখে চোখ রেখে’ কথা বলার সাহস যাঁরাই দেখিয়েছেন— নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু থেকে শুরু করে মোরারজি দেশাই, চন্দ্রশেখর, শরদ পওয়ার, প্রণব মুখোপাধ্যায়- সবাইকে অপমানিত হতে হয়েছে।

আক্রমণের মূল লক্ষ্য রাহুল হলেও সনিয়াকেও ছাড় দেননি মোদি। অনাস্থা প্রস্তাব পেশের দিন সনিয়া বলেছিলেন, ‘কে বলেছে আমাদের সংখ্যা নেই?’ নাম না-করে সে জন্য তাকে বিঁধেছেন মোদি। মনে করিয়েছেন প্রায় ২০ বছর আগে লোকসভা ভোটের পরে সনিয়ার একই দাবি, এবং তা পূরণ করতে না-পারার কথা।

তবে শেষ পর্যন্ত অনাস্থা বিতর্কের আলোর বেশিরভাগটাই আজ শুষে নিলেন রাহুল। যদিও শাসক শিবিরের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করে আর ‘চোখ মেরে’ নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন রাহুল। একটা ভারতীয় সংস্কৃতির পরিচয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদা না রেখে রাহুল আসলে নিজের পায়েই কুড়ুল মেরেছেন। তার আচরণ শিশুসুলভ। অন্যদিকে, ম্রিয়মাণ মোদিকে দেখে উচ্ছ্বসিত বিরোধীরা। মোদির বক্তৃতা কেমন লাগল, এ প্রশ্নের জবাবে সংসদ ছাড়ার সময় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে রাহুল বলে গেলেন ‘দুর্বল’। সোনিয়াও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় নতুন কিছু নেই। সব পুরনো।’ আর সদ্য এনডিএ ছেড়ে অনাস্থা প্রস্তাব আনা টিডিপির শীর্ষ নেতা, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর মন্তব্য, ‘দুর্ভাগ্য, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন।’
খবর আনন্দবাজার পত্রিকা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ