ট্রাম্পের চাপে দাবি মেনে নিল ভারত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৭:৩৪
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, করোনা রুখতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে ভারতকে।
একেবারে স্পষ্ট ভাষায় ভারতকে হুমকি দিয়েছিলেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দাবি ছিল, ভারতকে অবিলম্বে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানির অনুমতি দিতে হবে। না হলে প্রত্যাঘাত করবে অ্যামেরিকা। ট্রাম্পের এই দাবি মেনে নিয়েছে ভারত। মোদী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সব দেশে করোনা ভয়াবহ আকার নিয়েছে, সেখানে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করা যাবে। এমনিতে ম্যালেরিয়া হলে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হয়। কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকী, করোনার প্রতিরোধক হিসাবেও এই ওষুধব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যামেরিকাতে গবেষকরা দেখেছেন, করোনার চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সাহায্য করছে।
কিন্তু দেশে যাতে এই ওষুধের অভাব না হয়, সে জন্য মোদী সরকার হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সহ মোট ২৬টি ওষুধ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং ভেন্টিলেটার রপ্তানির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আছে। ঘটনা হলো, জেনেরিক ওষুধের ক্ষেত্রেভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধান উৎপাদক ও রপ্তানিকারী। ভারতে চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীদেরও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের হুমকির পর ভারত প্রথমে ২৪টি ওষুধের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। কিন্তু হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও প্যারাসিটামলের ওপর থেকে তোলা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে জানিয়ে দেওয়া হয়, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা থাকবে। যে সব দেশে এই ওষুধ করোনার জন্য লাগবে, তাদের দেওয়া হবে। দু'দিন আগে ট্রাম্প ফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি বিশেষ করে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বলেন। এরপর রোববার ও সোমবার করোনা নিয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক হয়। দেশে আগামী দিনে কত ওষুধ লাগতে পারে, কতটা আছে তা খতিয়ে দেখা হয়। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, যা প্রয়োজন তার থেকেও ২৫ শতাংশ ওষুধ হাতে রেখে তারপরই রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে. ট্রাম্পের চাপের কছে নতিস্বীকার করতে হয়েছে ভারতকে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কোনওরকম রাখঢাক না করেই বলেছিলেন, ''ভারতের সিদ্ধান্তে আমি অবাক হয়েছি। এই সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয়নি। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোন করেছিলাম। অনেক বছর ধরে ওরা বানিজ্য-ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে আসছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, ওষুধের সরবরাহ আবার শুরু হলে আমরা ভারতের প্রশংসা করব। আর ওরা যদি সিদ্ধান্ত না বদলায় তো ঠিক আছে, তখন আমরাও প্রত্যাঘাত করব।'' এই হুমকির মুখে এ বার সিদ্ধান্ত বদল করলো ভারত। তবে করোনার বিরুদ্ধে লড়তে ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চীন। ভারতে চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক ছিলো না। অনেক জায়গায় চিকিৎসকদের রেনকোট পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছিল। চীনের কাছ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার পোশাক এসেছে। দেশেও ২০ হাজার নতুন পোশাক তৈরি হয়েছে। এর আগে ভারতের কাছে তিন লাখ ৮৭ হাজার পোশাক ছিল। এখন মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু সহ যে সব রাজ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব বেশি সেখানে বেশি করে ডাক্তারদের পোশাক পাঠানো হচ্ছে। ভেন্টিলেটার তৈরির ওপরেও এখন জোর দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৩৫৪ জন করোনায়আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গিয়েছেন পাঁচ জন। ফলে সব মিলিয়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হলো চার হাজার ৪২১ এবং মৃত্যু হলো ১১৪ জনের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে এখনও ভালো করে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। হলে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বাড়তো। এই অবস্থায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনে এক লাখেরও বেশি লোকের করোনা পরীক্ষা করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার আরও ৩৩টি করোনা হট স্পট চিহ্নিত করেছে, যে সব এলাকায় ১১ থেকে ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জয়সলমির, ঝুনঝুনু, টঙ্ক, লখনউ, গান্ধীনগর, নাগপুর, মাদুরাই, দেরাদুন, লেহ, সাহারানপুর আছে। এবিএন/জনি/জসিম/জেডিCentral Government has removed restrictions on the export of 12 Active Pharmaceutical Ingredients (APIs) and 12 formulations made from these APIs, with immediate effect: Directorate General of Foreign Trade, Ministry of Commerce and Industry pic.twitter.com/cVRSBm0K0P
— ANI (@ANI) April 6, 2020
এই বিভাগের আরো সংবাদ