আজকের শিরোনাম :

করোনাভাইরাস : ভারতে ওষুধ পাচ্ছে না ক্যান্সার রোগী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৮

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে ভারতে যে লকডাউন চলছে, তাতে এইডস, ক্যান্সার বা থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এইডস রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে।

আবার ব্লাড ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে, তাই থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের প্রয়োজনীয় রক্তের জোগানে টান পড়ছে।

ক্যান্সারের রোগীরা কেউ চিকিৎসা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউবা গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে ওষুধ আনতে সমস্যায় পড়ছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নজর এখন করোনার দিকে- তাই কঠিন রোগ ছাড়াও ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মতো রোগের সংক্রমণ যাতে না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে থাকেন ক্যান্সার রোগী কিশোর চ্যাটার্জী। কয়েক মাস আগে একবার অপারেশন হয়েছে। কিন্তু আবারও যন্ত্রণা শুরু হয়েছে পায়ে। চিকিৎসকের সঙ্গে যেমন জরুরি পরামর্শ করা প্রয়োজন তার, তেমনই দরকার নিয়মিত ওষুধ নিয়ে আসার। কিন্তু গ্রামের ওষুধের দোকানে তা পাওয়া যায় না! এ দিকে লকডাউনের জন্য কোনো যানবাহনও নেই।

চ্যাটার্জী বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমাকে হাসপাতালে যেতে হয় সেই গুয়াহাটিতে। সরকার বলছে রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমি কি ওষুধ কেনার জন্য বা রুটিন চেকআপের জন্য কী অ্যাম্বুলেন্স ডাকব? তাতে তো যাদের জরুরি প্রয়োজন আছে, তারা ওই পরিষেবাটা ব্যবহার করতে পারবে না! আবার গাড়ি ভাড়া করে যাব, তার জন্য অনেক টাকা চাইছে। বাস তো বন্ধ! আমি একা না। আমার মতো আরও বহু রোগী আছে যারা এ রকম অসুবিধার মধ্যে পড়েছে।’

ক্যান্সার রোগী চ্যাটার্জীর যেমন ওষুধ জোগাড়ের সমস্যা হচ্ছে, তেমনই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের কালঘাম ছুটছে রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে।

লকডাউন পরিস্থিতিতে ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সংগঠন রক্তদান শিবির করছে বা সামাজিক মাধ্যমে অনেকে আবেদন জানাচ্ছেন যে সরকারি ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে যেন তারা রক্ত দিয়ে আসেন, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বর্ধমান থ্যালাসেমিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।

সংগঠনটির প্রধান কানাই বৈরাগ্য বলছিলেন, ‘রক্ত সংগ্রহ একটা কঠিন কাজ হয়ে গেছে। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নেই, কারণ করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে রক্তদান শিবির হচ্ছে না। তাই যেসব থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্ত দরকার, তাদের দাতা নিয়ে আসতে হচ্ছে গাড়ি ভাড়া দিয়ে। আর সেই রক্তদাতারও করোনা সংক্রমণ আছে কি না, সেটাও পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। আর গাড়ি ভাড়া দিয়ে রক্তদাতা যদি যোগাড় করে না আনতে পারে রোগীর বাড়ির লোক, তাহলে তো সে মারাই যাবে!’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরেক ধরনের রোগীদের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে- তারা হলেন এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী।

এমনিতেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাই করোনাভাইরাস সংক্রমন থেকে বাঁচতে তাদের বাড়তি সতর্কতা নিতে হচ্ছে।

আবার নিয়মিত তাদের যে ওষুধ নিতে হয়- সেই এআরটি রোগীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছিয়েও দিতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে।

পশ্চিমবঙ্গে এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের নেটওয়ার্ক বিএনপি প্লাসের সভাপতি কিশোর কুমার সাউ বলছেন, এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কমে যায়। এ রকম একটা সংক্রমন যখন ছড়াচ্ছে, তখন নিজেদের আর পরিবারের মানুষদের নিরাপদে রাখতে রোগীদের বাড়তি সতর্কতা তো নিতেই হচ্ছে।

ক্যান্সার সার্জেন গৌমত মুখোপাধ্যায়ও স্বীকার করছিলেন যে কঠিন অসুখে যারা আগেই আক্রান্ত, তাদের এই লকডাউন পরিস্থিতিতে চিকিৎসার ব্যাঘাত হচ্ছেই।

‘কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসা পিছিয়ে গেলে যে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে তা হয়তো নয়, কিন্তু এটা একটা বিরাট মানসিক চাপ তৈরি করে। কেউ হয়তো জানেন যে ক্যান্সার ধরা পড়েছে, কিন্তু চিকিৎসা শুরু করতে পারছেন না,’ বলছিলেন ডা. মুখোপাধ্যায়।

ডাক্তার মুখোপাধ্যায়ের আরও একটা উদ্বেগের বিষয় হল গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নজর যেহেতু এখন করোনাভাইরাসের দিকে, তাই ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মতো যেসব রোগ এইসমেয়ে ছড়াতে শুরু করে, সেদিকে নজর না দিলে তা আরও একটা মহামারী না তৈরি করে দেয়।

এসব উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে একটা সুখবর, রক্তের আকাল মেটাতে কলকাতা পুলিশ গোটা এপ্রিল মাসজুড়ে কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটানা রক্তদান শিবির শুরু করেছে। তাতে হয়তো রক্তের আকাল কিছুটা মিটবে বলেই আশা করছেন চিকিৎসকরা।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ