৬১ হাজার কোটি টাকা চেয়ে মোদিকে মমতার চিঠি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২০, ১০:৪৩
করোনা বিপর্যয়ের জেরে কলকাতার বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থায় কেন্দ্রীয় সাহায্য হিসেবে কমপক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখলেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি আর্জি জানালেন, আরও নানা বিষয়ে রাজ্যের প্রাপ্য ৩৬ হাজার কোটি টাকা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার। ওই চিঠিতেই মুখ্যমন্ত্রী ডিভল্যুশন (কর, সেস ও সারচার্জ বাবদ যে অর্থ রাজ্য থেকে কেন্দ্র নিয়ে যায়, তার ফেরত পাওয়া অংশ) বাবদ কেন্দ্র যে ১১ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিয়েছে, তা বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী স্মরণ করিয়েছেন, কোভিড-১৯ নিয়ে উদ্ভূত অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে তিনি এই সাহায্য চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূল ভিত্তি অনুযায়ী। প্রসঙ্গত, এর আগে করোনার জেরে বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে আগামী ২০২০-’২১ আর্থিক বছরের জন্য ফিসকাল রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্টের (এফআরবিএম)-সীমা তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে গত ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এফআরবিএম-এর মাত্রা বাড়ালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে খোলা বাজার থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে রাজ্য।
এরই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দশটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে তামিলনাড়ু, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, মহারাষ্ট্র ও কেরল। তবে এই তালিকায় নাম নেই পশ্চিমবঙ্গের। কাজেই এই ভিডিও বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন না। সরকারি সূত্রে খবর, ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিবদের এই বৈঠকে যোগ দিতে হবে। বৈঠকে রাজ্যগুলির কাছ থেকে সেখানকার পরিস্থিতি জানতে চাইবেন মোদি। পাশাপাশি, ১৪ এপ্রিল লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর তা বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। ইতিমধ্যে ক্যাবিনেট সচিব অবশ্য লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে কি না, ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের অবস্থা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগ-ই-জামাতের ধর্মীয় জমায়েতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বহু অংশগ্রহণকারী। ইতিমধ্যে তাঁদের অনেকে নিজের নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন। সেই সমস্ত অংশগ্রহণকারীকে খুঁজে বের করার প্রসঙ্গও উঠতে পারে।
বৈঠকে না থাকলেও অবশ্য চিঠিতেই নিজের বক্তব্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি লিখেছেন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন, অন্যান্য রাজ্যের মতোই এ রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। লকডাউনের জেরে সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও কাজকর্ম বন্ধ হওয়ায় রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব সংগ্রহ বন্ধ। এসব বিপত্তি সত্ত্বেও কোনওভাবে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন, মজুরি ও পেনশন এ মাসে দিতে পেরেছি। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এসবের সঙ্গেই পূর্বতন সরকারের বিশাল ঋণের বোঝা। আমরা এখনও পর্যন্ত ঋণের সুদ ও আসলের অংশ মেটাতে পারছি। কিন্তু ভবিষ্যতে তা পারা যাবে কি না, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কেন্দ্রীয় সাহায্য কেন চাইছেন-চিঠিতে সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। মমতা লিখেছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজ্যের কন্যাসন্তান, পড়ুয়া, কৃষক, অসংগঠিত শ্রমিক, দুর্বলতর শ্রেণী, সংখ্যালঘু, এসসি, এসটি এবং ওবিসিভুক্ত মানুষকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষেবা আমরা দিয়ে চলেছি। এরই পাশাপাশি রাজ্যের প্রায় ৯ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিতে হচ্ছে। এই সময়ে তাঁদের যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, এই বিপর্যয় পর্বে রাজ্যের ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং তা নিয়ে কী কী ছাড় মিলতে পারে, তার প্রস্তাব কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী। নিজের আশঙ্কা ব্যক্ত করে মমতা লিখেছেন, যেভাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা বেহাল হচ্ছে, তাতে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও তা মেটানো সংক্রান্ত আমাদের প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলেও, এই পরিস্থিতিতে তা যথেষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, সে কারণেই বিনীতভাবে জানাচ্ছি, অপরিশোধিত বকেয়ার সঙ্গেই এই বিশেষ মুহূর্তে কমপক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল দেওয়া হোক রাজ্যকে। আর এ সাহায্য যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি মেনেই চাইছেন, চিঠিতে তারও উল্লেখ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ