আজকের শিরোনাম :

করোনাভাইরাস: ভারতে সংক্রমণ আসলে কতটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২০, ১৯:৫৭

ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আসলে কত ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে তা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ দেশটিতে সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে খুবই কম পরিমাণে - বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের কথা, ভারত হয়তো ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের 'তৃতীয় পর্যায়ে' পৌঁছে গেছে বা তার খুব কাছাকাছি চলে গেছে - অর্থাৎ স্থানীয় লোকদের থেকেই অন্যরা সংক্রমিত হচ্ছেন।

"এমন কিছু রোগী পাওয়া গেছে যারা বিদেশ থেকে আসেন নি, অথবা বিদেশ থেকে সংক্রমণ নিয়ে ফিরেছেন এমন ব্যক্তির সংস্পর্শেও আসেন নি। কিন্তু তবুও তাদের দেহে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে - যা তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের লক্ষণ" - বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় টাস্ক ফোর্সের সমন্বয়ক, ডা. গিরিধার গিয়ানি।

তিনি অবশ্য এটাও বলেন যে, ভারত যে এখনই তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

"কিন্তু এটা নিশ্চিত যে তৃতীয় পর্যায়ের একেবারে দোরগোড়ায় রয়েছে ভারত" - বলেন ডা. গিয়ানি।

তার এ সংশয়ের কারণ হলো, ভারতে এখন প্রতি দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র ১৮ জনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এক পরিসংখ্যানে প্রতীয়মান হচ্ছে যে ভারতে একশোরও বেশি পরীক্ষাগারে এখন প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজারের মতো করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব।

সংক্রমণের প্রকৃত ব্যাপকতা ঠিক কতটা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, ইতিমধ্যেই ভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ভারত।

তবে উপসর্গ থাকা মানুষদের নমুনা আরও ব্যাপক হারে পরীক্ষা না করলে চিত্রটা পরিষ্কার হবে না - এমনটাই বলছেন তারা।

"সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটা বিষয় বোঝাতে আমি সক্ষম হয়েছি যে যে তৃতীয় পর্যায় আসার জন্য অপেক্ষা না করে এখনই প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা দরকার। সত্যিই যদি তৃতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ পৌঁছে যায়, তখন কিন্তু আর কিছুই করার থাকবে না," বলছিলেন গিরিধার গিয়ানি।

তার কথায়, প্রতিটা বড় বা ছোট শহরে প্রচুর আই সি ইউ বেডের প্রয়োজন হবে - যার অর্ধেকের সঙ্গে ভেন্টিলেটার প্রয়োজন হবে। দিল্লিতেই প্রায় হাজার তিনেক, মুম্বাইতে আড়াই হাজার এবং ব্যাঙ্গালোরের মতো শহরে দুহাজার আই সি ইউ বেড দরকার।

একই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার হারও বাড়াতে হবে বলে জানালেন ডা. গিয়ানি।

"ব্যাপক হারে পরীক্ষা একারণেই করা হচ্ছে না, যে অদূর ভবিষ্যতে যদি প্রচুর সংখ্যক রোগীর পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়, তাদের জন্যও তো কিট রাখতে হবে! এখনই যদি সব কিট শেষ করে ফেলা হয়, তখন কী হবে! সেজন্যই এখন শুধুমাত্র তিনটি উপসর্গ আছে - এমন মানুষদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে নতুন করে পরীক্ষা কিট আনা হচ্ছে।"

যে কিট দিয়ে এখন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত দামী - প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা একেকটি কিটের দাম।

তবে ভারতীয় গবেষণাগারগুলি তার থেকে অনেক কম দামে কিট তৈরি করার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। হায়দ্রাবাদের কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণাগার - সেন্টার ফর সেলুলার এন্ড মলিকিউলার বায়োলজিতেও চলছে এমনই কিট উদ্ভাবনের কাজ।

সি সি এম বি-র পরিচালক রাকেশ মিশ্র বলছিলেন, তাদের গবেষণাগার থেকে যে কিট তৈরি হবে তার দাম এক হাজার টাকার মতো হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এমন কি চার থেকে পাঁচশো টাকাতেও দাম নেমে আসতে পারে।

তাদের গবেষণাগারে তৈরি করা নমুনা পরীক্ষা কিট ১০০ শতাংশ নির্ভুল ফলাফল দিচ্ছে কী না, সেটা আর সপ্তাহ কয়েকের মধ্যেই জানা যাবে।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ