ট্রাম্পের ভারত সফর: দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতা বিস্তার মূল উদ্দেশ্য
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৪৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে দুই দিনের ভারত সফর শেষ করেছেন। যদিও তিনি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তারে আগ্রহী কিন্তু সামরিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি নয়াদিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তারের চেষ্টা করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গতকাল মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে তিনশ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘অ্যাপাচে ও এমএইচ-৬০ রোমিও হেলিকপ্টারসহ অত্যাধুনিক মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ভারতের সঙ্গে তিনশ' কোটি ডলারের চুক্তির মধ্যদিয়ে দুই দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং এই চুক্তির ফলে দুই দেশের প্রতিরক্ষাগত সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’ এ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন, গত আট মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে এটা তার পঞ্চম দফা সাক্ষাত। তিনি বলেন, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে আমেরিকা বেশ কিছু লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে। প্রথমত, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ক্রেতার তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে ভারতের অবস্থান। তাই ভারতের মতো একটি লোভনীয় অস্ত্রের বাজার ধরে রাখা ওয়াশিংটনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের মতো বিশাল অস্ত্রের বাজার দখলের চেষ্টা করছেন। অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার বিক্রির চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা ভারতের অস্ত্রের বাজারে তাদের জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করছে। এর আগে আমেরিকা ভারতের কাছে সমুদ্রে টহল দেয়ার কাজে ব্যবহৃত বিশেষ বিমান বিক্রি করেছিল।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারের পেছনে আমেরিকার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভারতের মতো বিশাল অস্ত্রের বাজার থেকে রাশিয়াকে বিতাড়িত করা। গত কয়েক দশক ধরে ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের যোগানদাতা হচ্ছে রাশিয়া। এ কারণে আন্তর্জাতিক অস্ত্রের বাজারে মস্কোকে ওয়াশিংটন তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশটির অস্ত্রের বাজার ছিনিয়ে নেয়া। এরইমধ্যে দিল্লি যদি মস্কোর কাছ থেকে অস্ত্র কেনে তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে আমেরিকা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টির জন্য এখন প্রকাশ্যেই অন্য দেশের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি শরীক দেশগুলোর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি নীতি নির্ধারন করে দিচ্ছেন। আমেরিকার আইন অনুযায়ী কোনো দেশ যদি রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখে তাহলে মার্কিন সরকার সেদেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এরই মধ্যে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু ভারত এ পদক্ষেপ নিলে আমেরিকার সঙ্গে সামরিক সামরিক সহযোগিতা বাধার সম্মুখীন হবে বলে ওয়াশিংটন হুমকি দিয়েছে।
শীতল যুদ্ধ চলাকালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রতিরক্ষা ও পরমাণু ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে ওঠে। এ ছাড়া দুই দেশই ব্রিক্স জোটের সদস্য। তাই বলা যায়, ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরের পেছনে ওয়াশিংটনের বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে মস্কোর কাছ থেকে নয়াদিল্লিকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং এই দুই দেশের সম্পর্ককে দুর্বল করে দেয়া। এ ছাড়া ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ কারণে আর্থ-রাজনৈতিক ও সামরিকসহ সব ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে আমেরিকা।
এবিএন/মমিন/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ