আজকের শিরোনাম :

মঙ্গোলীয় চেহারার শিক্ষার্থীদের 'করোনভাইরাস' বলে হেনস্থা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:১১

"তিনজন আমাদের কাছে এসে আমাদের 'করোনাভাইরাস' বলে ডাকতে শুরু করে। আমি তাদের প্রতিবাদ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, কিন্তু আমাদের করোনাভাইরাস বলেই ডাকতে থাকে।"

ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের একজন ছাত্র, যে নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি, মুম্বাইয়ে তার সাথে হয়ে যাওয়া ভীতিকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন এভাবেই। একদিন সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি।

"চেম্বুরের শিবাজী চকের কাছ দিয়ে আমি আমার এক বান্ধবীকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। সেখানেই হঠাৎ একদল লোক এসে এরকম ব্যবহার করতে শুরু করে। মুম্বাইয়ের মত শহরে যখন এরকম কিছু হয়, তখন তা সত্যিই দুঃখজনক।"

তবে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া তিনি একমাত্র ব্যক্তি নন। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর যারা মুম্বাইয়ের টাটা ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সাইন্সে (টিআইএসএস) পড়েন, এমন অনেকেই এধরণের হয়রানির শিকার হয়েছেন।

তাদের বক্তব্য 'মঙ্গোলয়েড মুখাবয়ব ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গঠন' থাকার কারণে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন তারা।

এই ধরণের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ফোরাম (এনইএসএফ) একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও ঘটনা স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠান অধ্যয়নরত উত্তর পূর্বাঞ্চলের শিক্ষার্থী কী ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছে, তা জানতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছে বিবিসি মারাঠি।

করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে বৈষম্য

ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের চীনা নাগরিক বা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন কোনো দেশের নাগরিক হিসেবে ভুল করা হচ্ছে বলে উঠে এসেছে এনইএসএফ'এর বিবৃতিতে। ১০ই ফেব্রুয়ারি নাগাল্যান্ড থেকে আসা এক ছাত্র ও তার বান্ধবীর সাথে ঘটে বিব্রতকর এই ঘটনা ঘটনাটি ঘটে।

"শুধু যে অনুমতি না নিয়ে নাগাল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের ভিডিও করা হচ্ছিল - যেই ভিডিওতে তাদেরকে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য জীবাণুবাহী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছিল - তাই নয়, তাদের যখন প্রশ্ন করা হয় যে কেন তারা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান করছে না, তখন ঐ নাগাল্যান্ডের শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়া হয় এবং গালাগালিও করা হয়", জানানো হয় বিবৃতিতে।

নাগাল্যান্ড থেকে আসা ছাত্রীটি হতবাক ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং এই ঘটনার পর থেকে তাকে টিআইএসএস ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় বলে জানান ঐ প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্র ও এনইএসএফ'এর সদস্য জিত হাজারিকা।

তিনি বলেন, "প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সকল কর্তৃপক্ষকে আমাদের এই আশঙ্কার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে যে ক্যাম্পাসের ভেতরে আমরা নিরাপদ এবং এখানে আমরা বৈষম্যের শিকার হবো না। স্থানীয় হাউজিং সোসাইটিগুলোর মানুষকে সচেতন করার কাজ করছি আমরা।"

"মুম্বাইয়ে এরকম ঘটনা ঘটবে, তা আমরা আশা করিনি।"

মনিপুর অঞ্চলের আরেক ছাত্র রিচার্ড কামেই মনে করেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ এধরণের ইস্যুতে অনেক সংবেদনশীল হলেও অন্যান্য জায়গায় মাঝেমধ্যেই এরকম ঘটনা ঘটে থাকে।

"লোকাল ট্রেনে ভ্রমণ করার সময় মানুষজন নানারকম মন্তব্য করে। আমি যদি নিজের মতও থাকি, বা ফোনে কথা বলতে থাকি, মানুষ হয় আমাকে উদ্দেশ্য করে হাসি ঠাট্টা করে। তারা তাদের আচরণে বোঝানোর চেষ্টা করে যে আমি তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট।"

"এই করোনাভাইরাস আতঙ্কে আবারো মানুষের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টি উঠে এসেছে।"

নাম প্রকাশ না করে আরেক ছাত্র বলেন, "আমার স্বীকার করছি যে আমরা দেখতে ভিন্নরকম, কাজেই মানুষের প্রতিক্রিয়াও অন্যরকমই হবে। কিন্তু মুম্বাইয়ের মত মেগাসিটিতে যে এরকম ঘটনা ঘটবে, তা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি।"

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বৈষম্যমূলক ব্যবহারের প্রতিবাদ করতে যেয়ে আরো বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা।

"আমাদের কেউ কেউ যখন প্রতিবাদ করতে যায়, তখন অনেক মানুষই উত্তেজিত হয়ে জবাব দেয় বা সহিংস হয়ে ওঠে। তাই অনেকসময়ই আমরা চুপচাপ সহ্য করে যাই।"

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ