করোনাভাইরাস : উহান থেকে বিদেশিদের সরিয়ে নেয়া শুরু
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:০৪
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু চীনের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিকে সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া পরিকল্পনা করেছে যে, চীন থেকে ফেরত আসা তাদের ৬০০ নাগরিককে মূল ভূখণ্ডে নেয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখবে, যা মূল ভূখণ্ড থেকে ২ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া শুরু করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, তার দেশের নাগরিকদের দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখা হবে। এ ঘোষণার পর সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে কারণ এই দ্বীপটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বন্দি শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই শিবিরগুলোর বেহালদশা এবং এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে সেখানে ৪ সদস্যের একটি শ্রীলংকান পরিবার রয়েছে। কিন্তু প্রায় এক হাজার মানুষকে ধারণ করার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের পাশাপাশি নিজেদের ৫৩ নাগরিককে ফিরিয়ে আনতে ক্যানবেরার সঙ্গে একযোগে কাজ করবে নিউজিল্যান্ড।
প্রায় ২০০ জাপানি নাগরিক উহান থেকে বিমানে করে টোকিওর হানেডা বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। আরও ৬৫০ জাপানি বলেছেন, তারা ফিরে যেতে চান এবং দেশটির সরকার বলেছে যে তারা আরও ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করছে।
জাপানের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ফিরে আসা নাগরিকদের মধ্যে অনেকে জ্বর এবং কাশিতে ভুগছেন। তবে উপসর্গ দেখা না দিলেও ফিরে আসা সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।
বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে তাদের একটি নিয়ন্ত্রিত ওয়ার্ডে রেখে পরীক্ষা করা হবে এবং এগুলোর ফল না আসা পর্যন্ত তাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে।
বুধবার, যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কিছু মার্কিন নাগরিকও উহান শহর ছেড়ে গেছে।
সিএনএনের তথ্য মতে, তাদের কম পক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে বিমান বন্দরের হ্যাঙ্গারে তৈরি করা বিশেষ ব্যবস্থায় থাকতে হবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরও তাদের প্রায় ২০০ নাগরিককে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে যারা ফিরে আসতে চান। কিন্তু কিছু কিছু ব্রিটিশ নাগরিক কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে অভিযোগ তুলেছেন যে, তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
আলাদাভাবে, দুটি বিমান ইউরোপের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার কথা রয়েছে, এর মধ্যে প্রথম ফ্লাইটে ২৫০ ফরাসি নাগরিক চীন ছাড়বেন।
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইটে তাদের ৭০০ নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু তাদের আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, সংক্রমণের শিকার নাগরিকদের সব খরচ সরকার বহন করবে। এ পর্যন্ত, দেশটিতে ৪ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এরই মধ্যে হংকং চীনের মূল ভূখণ্ডের সাথে আন্তঃসীমান্ত ভ্রমণ বন্ধের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। উহানের সাথে সাথে পুরো হুবেই প্রদেশই যানবাহন চলাচলের দিক থেকে অচল হয়েছে পড়েছে।
প্রতিনিয়তই চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে এবং আরও সংক্রমণের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ভাইরাসটিকে ‘ডেভিল বা খুবই খারাপ প্রকৃতির’ বলে উল্লেখ করেছেন।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রাদুর্ভাবটি শীর্ষে উঠতে আরও ১০ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।
বুধবার এনএইচসি বলেছে, চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের সি ফুড মার্কেটে অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্য থেকে এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। এই ভাইরাসের কারণে শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর ও তীব্র সংক্রমণ হয় যার কোনো নির্দিষ্ট নিরাময় বা প্রতিষেধক নেই।
এরই মধ্যে স্টারবাকস চীনে তাদের অর্ধেকেরও বেশি আউটলেট বন্ধ করেছে, এ ছাড়া অর্থনৈতিক প্রভাবও মারাত্মক হতে শুরু করেছে।
এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ