আজকের শিরোনাম :

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০৯ | আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১২:১১

বহুল প্রতীক্ষিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেখানে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিচ্ছেদ্য রাজধানী রাখার অঙ্গীকার আছে।

তিনি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রেরও প্রস্তাব করেছেন এবং পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতির ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তার।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, তার প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘শেষ সুযোগ হতে পারে’।

এই প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে এটি নাকচ করে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘আমি ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুকে বলছি, জেরুজালেম বিক্রির জন্য নয়, আমাদের সব অধিকার বিক্রি হবে না এবং এ নিয়ে দর কষাকষিও হবে না। এবং আপনাদের চুক্তি, ষড়যন্ত্র পাস করা হবে না।

এই নীলনকশা, যা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের সমাধান করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে সেটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের দায়িত্বে রচিত হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভ করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি, সেসময় পশ্চিম তীরে সেনা মোতায়েন জোরদার করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

এই যৌথ ঘোষণা এমন এক সময় এলো যখন ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু উভয়ই নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন।

মার্কিন সেনেটে অভিশংসনের বিচারের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প এবং অন্যদিকে মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি চেয়ে করা প্রস্তাব বাতিল হয়েছে। দুজনই কোনো ধরনের অপরাধ করার কথা অস্বীকার করেছেন।

ইসরায়েলে থাকা মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান বলেন, এ ঘোষণার সময়টা কোনো রাজনৈতিক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট করে নির্ধারণ করা হয়নি, এটা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তৈরি করাই ছিল।
এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহু দখলকৃত পশ্চিম তীরের ৩০% ইসরায়েলের সাথে যুক্ত করার কথা ভাবছেন, এ বিষয়ে রবিবার মন্ত্রিসভার ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

পশ্চিম তীরের বসতিতে ৪ লাখেরও বেশি ইসরায়েলি বাস করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব বসতি অবৈধ, যদিও ইসরায়েলের এনিয়ে দ্বিমত রয়েছে।

ফ্রিডম্যান বলেন, পশ্চিম তীরের অংশ যুক্ত করা নিয়ে ইসরায়েলকে ‘মোটেই অপেক্ষা করতে হবে না।’

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে?
‘আজ ইসরায়েল শান্তির পক্ষে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে,’ হোয়াইট হাউসে নিজের কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকদের বলেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, ‘আমার দূরদৃষ্টি বলছে, এটা উভয় পক্ষের জন্যই একটি জয়ের সুযোগ, একটি বাস্তবসম্মত দ্বি-রাষ্ট্রের সমাধান যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার মুখে থাকা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদার প্রতি হুমকি দূর করবে।’

ট্রাম্পের প্রস্তাবগুলো হলো-
>> যুক্তরাষ্ট্র সেই সেসব এলাকার ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেবে, যা ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলের অংশ। এই পরিকল্পনায় একটি আনুমানিক মানচিত্রের কথা বলা হয়েছে, যা ট্রাম্পের মতে ভূমি এবং সীমানাগত ত্যাগ যা ইসরায়েল করতে আগ্রহী।

>> এই মানচিত্রটি ‘ফিলিস্তিনি ভূমির আয়তন দ্বিগুণ করবে এবং পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি রাজধানী করার সুযোগ তৈরি করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একটি দূতাবাস গড়বে বলে জানান মিস্টার ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের দ্য প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন-পিএলও বলে, মিস্টার ট্রাম্পের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের তাদের উল্লেখিত ‘ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের’ ১৫% এর ওপর নিয়ন্ত্রণ দেবে মাত্র।

>> জেরুজালেম ‘ইসরায়েলের অবিচ্ছেদ্য রাজধানী থাকবে’। পবিত্র এই শহরকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়ই। ফিলিস্তিনিদের দাবি অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমের যে অংশ দখল করে নিয়েছে তা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী।

>> ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জনের সুযোগ’ বলেছেন- কিন্তু তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

>> কোনো ফিলিস্তিনি বা ইসরায়েলিকেই তাদের বাড়ি থেকে উৎখাত করা হবে না- এটা থেকে বোঝা যায় যে, ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরে বসতি থাকবে।

>> ইসরায়েল জর্ডানের বাদশাহর সাথে কাজ করবে এটা নিশ্চিত করতে যে, জেরুজালেমে ইহুদিদের পবিত্র অঞ্চল টেম্পল মাউন্ট এবং মুসলিমদের আল-হারাম আল শরিফ যাতে সংরক্ষিত থাকে। এই অঞ্চলটি পরিচালনায় গঠিত ট্রাস্টটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে জর্ডান।

>> ট্রাম্পের প্রস্তাবিত মানচিত্রে ফিলিস্তিনের জন্য যে ভূমি বরাদ্দ করা হয়েছে তা ৪ বছরের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং এতে কোনো ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে না। এই সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা চুক্তি সম্পর্কে পড়াশোনা করে, ইসরায়েলের সাথে সমঝোতা করবে এবং ‘রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মানদণ্ড অর্জন করবে। ফিলিস্তিনিরা দরিদ্রতা এবং সহিংসতার মধ্যে রয়েছে, যারা তাদের সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থায় গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে তাদের দ্বারা শোষিত হচ্ছে। আরো ভাল জীবন তাদের প্রাপ্য।

তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে এই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরকে বিভক্ত করা হবে না। ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে আমরা একটি সংলগ্ন এলাকা তৈরি করবো, যখন সন্ত্রাসবাদ প্রত্যাখ্যানসহ রাষ্ট্র হওয়ার জন্য মানদণ্ড অর্জনের সব শর্ত পূরণ হবে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার এই পরিকল্পনা নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনা করতে মস্কোতে যাবেন মিস্টার নেতানিয়াহু।

এর কী ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে?
নিজের বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, জেরুজালেমকে রাজধানী না করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ‘যে কোনো ফিলিস্তিনি, আরব, মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান শিশুর জন্য মেনে নেয়া অসম্ভব। আমরা হাজারবার বলেছি, না, না, না। আমরা শুরু থেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা করেছি এবং আমরা সঠিক ছিলাম।

ফিলিস্তিনের জঙ্গী গোষ্ঠী হামাস যা গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে, তারাও এই চুক্তি নাকচ করেছে এবং বলেছে যে, এর লক্ষ্য হচ্ছে ‘ফিলিস্তিনিদের জাতীয় প্রকল্প নিঃশেষ করে দেয়া’।

জাতিসংঘ বলেছে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগে যখন ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও গাজা দখল করে নেয় সে অঞ্চলে সীমান্ত রেখা স্থাপনের মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রের সমাধানে অটল থাকবে তারা।

মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, জাতিসংঘ এমন একটি শান্তি চুক্তি চায় যা জাতিসংঘের প্রস্তাবনা, আন্তর্জাতিক আইন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্মতির ভিত্তিতে হবে।

ইসরায়েলের মানবাধিকার গোষ্ঠী বি'সালেম বলে, এই প্রস্তাবটি এক ধরনের জাতি-বিদ্বেষ তৈরি করবে।

এটা বলে যে, ফিলিস্তিনিদের পরিণত করা হবে ‘ক্ষুদ্র, বেষ্টিত, বিচ্ছিন্ন ছিটমহলে, যাদের নিজেদের জীবনের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।’

ইসরায়েলের পিস নাউ সংস্থা বলে, এই পরিকল্পনা বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন এবং আকর্ষণীয়। বসতিগুলোকে ইসরায়েলের সাথে যুক্ত করার সবুজ সংকেত দেয়ার বিনিময়ে ত্রুটিযুক্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা অবাস্তব এবং এটি স্থিতিশীলতা আনবে না।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব ফিলিস্তিনিদের আহ্বান জানিয়েছেন এই পরিকল্পনাটি নিয়ে ‘আসল এবং ন্যায্যভাবে বিবেচনা করতে এবং এর মাধ্যমে সমঝোতা আলোচনায় ফিরে যাওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে কিনা তা বিবেচনা করতে।’

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ