আজকের শিরোনাম :

এনআরসি : চিঁড়ে নিয়ে হঠাৎ সরগরম ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ১১:০৮

চিড়া নিয়ে ভারতের সামাজিক মাধ্যম এখন সরগরম। চিঁড়ে ভারতের অনেক রাজ্যেই জনপ্রিয় খাবার, বাংলাতেও তাই। কিন্তু এই চিরাচরিত খাবার খেতে গেলে কি এখন দুবার ভাবতে হবে? কারণ, কাউকে চিঁড়ে খেতে দেখলে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসকদল বিজেপির এক মন্ত্রী তাকে হয়তো বাংলাদেশি ভেবে বসতে পারেন।

কৈলাশ বিজয়বর্গীয় নামে এই নেতা বলেছেন, তার বাড়িতে কাজ করতে আসা কয়েকজন শ্রমিককে তিনি ‘বাংলাদেশি’ বলে চিনে ফেলেছেন, কারণ তারা ‘পোহা’ খাচ্ছিলেন।

পোহা হচ্ছে চিঁড়ে দিয়ে তৈরি একরকম পোলাওয়ের মতো খাবার- যা মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, ওড়িশা অথবা দক্ষিণের কর্ণাটকে জনপ্রিয় পোহা। অনেকটাই বাঙালিদের চিঁড়ের পোলাওয়ের মতো এই পোহা- তবে একটু ঝাল।

বিজেপি নেতার এ মন্তব্যের পরই সরগরম হয়ে ওঠে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া।

অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলতে শুরু করেছেন, চিঁড়ে যে শুধু বাংলাদেশিরাই নন ভারতের নানা অংশের লোকেরাও খান- এই তথ্য তো বিজয়বর্গীয়র অজানা থাকার কথা নয়।

কারণ তিনি যে অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ করে তার জন্ম এবং রাজনীতির শুরু যেখানে- মধ্যপ্রদেশের সেই ইন্দোর শহরে চিঁড়ে দিয়ে তৈরি ‘পোহা’কে একরকম জাতীয় খাদ্যই বলা যায়।

টুইটারে স্বপ্না মদন নামে একজন লিখেছেন, ‘আমি পাঞ্জাবি, আমি এখন পোহা খাচ্ছি, এর সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।’

অনেকেই পোহা আর চিঁড়ের নানা খাবারের ছবিও পোস্ট করছেন, কেউ আবার বানিয়েছেন ছড়া!

নূপুর রঞ্জন মিশ্র নামে একজন প্রশ্ন করেছেন, পোহা আবার কবে থেকে বাংলাদেশি খাবার হলো? 

‘চিঁড়ে যে ভারতের সব প্রান্তেই খাওয়া হয়- এই তথ্য তো মি. বিজয়বর্গীয়র অজানা থাকার কথা নয়। এমনকি মহাভারতেও চিঁড়ের কথা পাওয়া যায়। কৃষ্ণর কাছে চিঁড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদামা। মহাভারতের কাহিনী তো পশ্চিমভারতের।’ বলছিলেন খাদ্য-গবেষক ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুষ্পেশ পন্থ।

‘মি .বিজয়বর্গীয়র কথা যদি মানতে হয় তাহলে কৃষ্ণ বা সুদামাও বাংলাদেশি ছিলেন!’ ব্যঙ্গ করে বলেন অধ্যাপক পন্থ।

সকালবেলায় পোহা আর জিলিপি একসঙ্গে খেতে ভালবাসেন মধ্যপ্রদেশের মানুষ, তাই ডিশটার নামই হয়ে গেছে 'পোহা-জলেবি'। যদিও খাবারটার উৎস অবশ্য ইন্দোর লাগোয়া মহারাষ্ট্রে।

সর্ষে আর জিরে ফোঁড়ন দিয়ে তাতে বেশ ভাল পরিমাণে কারিপাতা, পেঁয়াজ, লঙ্কা ভেজে নিয়ে তাতে ভেজানো চিঁড়ে ঢেলে দেওয়া হয়। তার পর তাতে হলুদ আর লবণ দিয়ে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় পোহা। তাতে ছড়িয়ে দিতে হয় লেবুর রস।

‘খাবারটার উৎস মহারাষ্ট্রে। সেখানে কান্দা - পোহা নামে পরিচিত চিঁড়ের এই খাবার। ছত্রপতি শিবাজীর সেনাপতি হোলকারদের মাধ্যমে পোহা ইন্দোরে আসে, আর সিন্ধিয়াদের হাত ধরে তা পৌঁছয় গোয়ালিয়ারে। আর এখন তো ভারতের নানা রাজ্যেই অতি জনপ্রিয় খাবার হয়ে গেছে এই পোহা,’ বলছিলেন মি. পন্থ।

ইন্দোর বা মধ্যপ্রদেশের শহরে-গ্রামে - অলিতে গলিতে দেখা যায় চটজলদি খাবার এই ‘পোহা-জলেবি’র দোকান। শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, আজকাল অনেক নামী-দামী হোটেলেও সকালের জলখাবারের মেনুতে উঠে এসেছে এই পোহা।

এমনকি অনেক বেসরকারি বিমানেও ইনস্ট্যান্ট পোহা পাওয়া যায়।

তাই চিঁড়ে যে শুধু বাংলাদেশিরা খান না, এটা মি. বিজয়বর্গীয় ছোট বয়স থেকেই নিশ্চয়ই জানেন।

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে বিবিসির- সংবাদদাতা সুরেইয়া নিয়াজি বলছিলেন, ‘বিজয়বর্গীয় যে শহরে মন্তব্যটা করেছেন, সেখানকার মানুষের সকাল শুরু হচ্ছে পোহা-জলেবি ছাড়া, এটা ভাবাই যায় না। ইন্দোরেই সবথেকে ভাল পোহা হয়। কিন্তু সেই ইন্দোরেই কেন তিনি শ্রমিকদের চিঁড়ে দিয়ে বানানো পোহা খেতে দেখে তাদের বাংলাদেশি বলে মনে করলেন, এটা খুবই আশ্চর্যের।’

সামাজিক মাধ্যমেও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করছেন অনেকে। আবার আগামী সপ্তাহে হিন্দু বাঙালীদের যে সরস্বতী পুজো আছে, তার পরের দিন দেবী মূর্তির সামনে দই-চিঁড়ে দেওয়াটা একটা রীতি।

কেউ মজা করে বলছেন, এবার তো তাহলে দেবীকে দই-চিঁড়ে দেওয়া যাবে না!

পুষ্পেশ পন্থের কথায়, ‘ধনীরাও আজকাল পোহা খায় ঠিকই, কিন্তু চিঁড়ে আদতে গরীব মানুষের সকালের খাদ্য। আর কিছু যোগাড় না করতে পারলে শুধু জল দিয়েই চিঁড়ে খেয়ে নেয় তারা। রুটির দাম বেশি, আর তার সঙ্গে ডাল বা সব্জি কিছু একটা লাগেই।’

‘এভাবে গরিব মানুষের খাবার নিয়ে বাংলাদেশি বলে অপমান করার অধিকার কারও নেই।’

তবে সমালোচনা শুরু হওয়ায় মি, বিজয়বর্গীয় এখন বলছেন, যে তার মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তবে সত্যিই তার বাড়িতে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের মধ্যে কেউ বাংলাদেশি ছিলেন কিনা, নাকি তিনি সেটা অন্য কোনো কারণে বলেছেন, সেটা খুঁজে বার করতে কাজে নেমে পড়েছে মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস সরকার।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ