আজকের শিরোনাম :

নাগরিকত্ব আইন : আসামে বিক্ষোভে আহত আরও একজনের মৃত্যু

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:১৭

আসামের গৌহাটিতে সহিংস বিক্ষোভে আহতদের মধ্য থেকে আজ রবিবার সকালে আরও একজন মারা গেছে। এ নিয়ে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ৩ জনের প্রাণহানি হল।

গত দুই দিনের বিক্ষোভকারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ২৭ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ জন গৌহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের জের ধরে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের গৌহাটিসহ ১০টি সংবেদনশীল এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে।

তবে গৌহাটি ও দিব্রুগড় এলাকায় বিকেল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে।

কারফিউ শিথিল করার কারণে, সকালে গৌহাটির জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। সিটি বাস ছাড়াও দূরপাল্লার বাস এবং ব্যক্তিগত যানবাহন চলতে দেখা গেছে।

এদিকে রবিবারও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-আসুসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

বিবিসি জানিয়েছেন, এর আগে শনিবার বিকেল পর্যন্ত কিছু কিছু দোকানপাট খুলেছিল। যেখান থেকে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছে। কিন্তু বিকেল চারটার পর থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে শুরু করে।

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও সেটি আরো ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ থাকবে।

কারফিউ শিথিল করা হলে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করার কথা জানিয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-আসু। গৌহাটিতে রবিবার তাদের একটি সমাবেশ করার কথা আছে।

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বরপেটাতে রবিবার মুসলিম সংগঠনগুলোর একটা বড় সমাবেশ হওয়ার কথা আছে। এ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে নানা জায়গাতে বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে বিক্ষোভ সমাবেশের পাশাপাশি বিজেপির নেতাদের বাড়ি এবং রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি জোটের অংশ আসাম গণপরিষদের নেতাদের দপ্তরের সামনেও বিক্ষোভ করছে অনেকে।

এর বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে যে, লোকসভা নির্বাচনে আসামে বেশ ভালো ভোট পেয়েছিল বিজেপি। স্থানীয়রা মনে করছে, যাদের তারা এতো ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলো সেই সরকারই আবার নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন আনছে। এটা মানতে পারছে না অনেকে।

শহরের দেয়ালে দেয়ালে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা রয়েছে। স্লোগান রয়েছে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে।

চাপে পড়ে শনিবার রাতে আসাম গণপরিষদও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করবে। সেই সাথে তারা আসাম পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করার জন্য দিল্লিতে একটা প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা জানিয়েছে।

নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বাংলাভাষী মুসলিমরাও। তবে তাদের সাথে অসমীয়া সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের পার্থক্য রয়েছে।

অসমীয়া সংগঠনগুলো আসলে নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের আসামের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিরোধিতা করছেন।

তারা বলছেন যে, আসাম চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশ থেকে আসা কোনো ধর্মের মানুষকেই নাগরিকত্ব দেয়া যাবে না।

সাথে তারা এটাও বলছেন যে, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার কোনো জায়গা নেই। এটা সংবিধান পরিপন্থী।

পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বাংলাভাষী মুসলমানরা যে প্রতিবাদ করছে সেখানেও ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার বিরোধিতা রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক রয়েছে যে, তাদের একটা অংশকে এই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন করে দেয়া হতে পারে।

তারা বলছেন যে, এনআরসির মাধ্যমে যে ১৯ লাখ নাম বাদ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে অমুসলিমরা হয়তো এই আইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবেন তবে মুসলমানরা কিন্তু বাদই রয়ে যাবেন। তাদেরই হয়তো রাষ্ট্রহীন করে দেয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ