আজকের শিরোনাম :

কেনিয়ায় রাস্তাঘাটে হয়রানির বিরুদ্ধে এক নারীর ব্যতিক্রমী লড়াই

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩৩

আফ্রিকার কিবেরা এলাকার মেয়েরা চলতি পথে যে হয়রানির শিকার হন সেই অভিজ্ঞতার কথা রাস্তাঘাটে এবং ক্যানভাসে লিখে রাখছেন, যেন সবার সামনে যৌন হয়রানির ক্ষতিকর চিত্র তুলে ধরা যায়। কিবেরা হলো আফ্রিকার বৃহত্তম অস্বীকৃত জনবসতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

জুবেইদা ইউসুফ সারাজীবন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির কিবেরাতে বসবাস করেছেন এবং তিনি যতদূর মনে করতে পারেন যে, রাস্তাঘাটে হয়রানির শিকার হওয়া তার জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

পুরুষরা এ জাতীয় কথা বলবে, ‘তুমি খুব মোটা। তোমার মা কি কসাই? ঈশ্বর কি তোমার ওপর তার শেষ মাটির টুকরোটি ব্যবহার করেছেন? কারণ তোমার স্তন এবং পেছন, দুটাই অনেক বড়।’

‘আমরা যখন রাস্তায় বের হই তখন এই ধরণের কথাগুলো মাথায় নেয়া খুব অসহ্য হয়ে ওঠে,’ বলেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণী।

তবে সময়ের সাথে সাথে, জুবেইদা ইউসুফ এসব পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করা শিখেছেন এবং তিনি কিবেরার অন্য নারীদের এমন পরিস্থিতিতে কড়া জবাব দিতে সহায়তা করছেন।

যেখানে কিছু নারী বলছেন যে ওই ধরনের পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের শক্তিহীন বোধ করেন।

চক এবং মার্কার ব্যবহার করে, ‘চক ব্যাক’ নামে প্রচারণা শুরু করেন মিস ইউসুফ এবং অন্য মেয়ে ও নারীরা।

এর অংশ হিসেবে তারা রাস্তাঘাটে হওয়া হয়রানির অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে শুরু করেন।

তাদের আশা, এই প্রচারণাটি রাস্তার যৌন হয়রানির ক্ষতিকর প্রকৃতি নিয়ে আলোচনার জন্ম দেবে।

‘আজকাল, পুরুষরা যখন আমাকে অপমান করে, আমি থামি এবং তাদের মুখের সামনে জিজ্ঞাসা করি, তারা কেন আমাকে অপমান করছে। তবে এটাও ঠিক যে, কম বয়সী মেয়েদের জন্য এ ধরণের জবাব চাওয়া কঠিন হতে পারে,’ তিনি বলেন।

‘এ কারণেই এ ধরনের প্রচারণাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আরও বেশি বেশি জবাব দিতে হবে এবং মানুষদের বলতে হবে যে নারীদের সাথে এইভাবে কথা বলা ঠিক নয়।’

‘মর্মাহত’ বার্তা
‘আমার দেহকে শ্রদ্ধা করুন,’ রাস্তার লেখা এমন একটি লেখা যেন চিৎকার করছিল।

অন্যদিকে, সোয়াহিলি ভাষায় লেখা এমন অনেক লেখায় প্রকাশ পেয়েছিল বিরক্তিকর সব বার্তা।

‘উনারিংগা, ওয়েওয়ে নি ভাজো (আপনি মনে করেন আপনি আমাদের জন্য অনেক ভাল, কিন্তু আপনি নিজে এখনও একজন কুমার)। ‘চুরা হাই’ (এই গালি দিয়ে যৌনকর্মী বোঝানো হয়। সোয়াহিলি ভাষায় যার আরেক অর্থ ‘ব্যাঙ’)।

২০ বছর বয়সী ক্যারোলিন এমউইকালি, যিনি নিজেও একজন কিবেরার বাসিন্দা, স্বীকার করেছেন যে তাকে উদ্দেশ্যে করে বলা কিছু গালাগালি তার ভেতরে এতো গভীর ক্ষত রেখে গেছে যে, সেই ধারণা ওই অপরাধীদেরও নেই।

‘আপনি এই রাস্তা ধরে হাঁটবেন এবং আপনাকে উদ্দেশ্য করে কোন লোক নোংরা কিছু বলবে না, এমনটা হয় না। কখনো কখনও আমাদের পশুর সাথে তুলনা করা হয়। এটি অনেকের আত্মমর্যাদার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন আমি কোথাও বসে ভাবি, আমার প্রশ্ন জাগে: আমি কি আসলেও এতোটা মূল্যহীন অথবা আমি কি এতোটাই কুৎসিত যেটা ওই লোক আমাকে নিয়ে বলেছে?’

তবে সমস্যা হলো, এটি কেবল রাস্তাঘাটে হয়রানির মানসিক পীড়া নয়।

নারীদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই
জাতিসংঘের মতে, বিভিন্ন দেশে রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানির বিষয়ে চূড়ান্ত ও তুলনামূলক জাতীয় তথ্য এবং নীতিমালার অভাব এই সমস্যা মোকাবেলায় এবং জনসমাগম স্থানে মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি।

বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ২০১৯ সালে পাঁচটি শহরে রাস্তাঘাটে হয়রানির বিষয়ে সমীক্ষা চালায়।

সেখান থেকে জানা গেছে, সমীক্ষার জন্য সাক্ষাৎকার নেয়া ১০ জন নারীর মধ্যে একজনেরও কম কর্তৃপক্ষকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

এর কারণ হলো, কর্তৃপক্ষ কী করতে পারে সে সম্পর্কে নারীরা অনিশ্চিত ছিল এবং রাস্তাঘাটে এ ধরনের হয়রানিকে ‘গুরুতর’ অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে কিনা সেটা নিয়েও ছিল তাদের প্রশ্ন।

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে, রাস্তাঘাটে হয়রানির ঘটনা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীর অংশগ্রহণ কমিয়ে আনা অব্যাহত রেখেছে। প্রায়শই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে নারীদের আচরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়।

‘আমি কিছু নির্দিষ্ট জায়গা এবং পরিস্থিতি এড়িয়ে চলি। যখন আমি দেখি যে এক দল পুরুষ কোথাও একসাথে জড়ো হয়ে আছে, আমি সেখানে যাই না,’ এমউইকালি বলেন।

‘এমন কিছু জায়গাও রয়েছে, যেখানে সন্ধ্যা নামার পর আমাকে বাইরে দেখা যাবে না। এর মধ্যে এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল।’

যেহেতু বিশ্বে এখন লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে নানা দিসব পালন করা হচ্ছে, তাই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে।

যখন এই জাতীয় অপরাধের প্রসঙ্গ আসে তখন নারীরা বিশ্বব্যাপী আরও শক্ত পদক্ষেপ ও বিচারের দাবিতে মিছিল করছে।

এমউইকালি এবং অন্য নারীরা রাস্তায় লিখতে থাকায় কিছু লোক চারপাশ থেকে জড়ো হন। তারা স্বীকার করে যে রাস্তাঘাটে হয়রানি, নারীদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে সেটা সম্পর্কে জানতে পেরে তাদের চোখ খুলে গিয়েছে।

‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মানসিকতা হল আমরা নারীদের ওপর আধিপত্য করতে পারবো। আমরা মনে করতাম যদি আমি কোনও মেয়ের সাথে কথা বলি তবে তাকে অবশ্যই ফিরে কথা বলতে হবে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত আমরা জানতাম না যে এটি ঠিক ছিল না। আমরা এখন ধীরে ধীরে শিখছি,’ বলেন ২৫ বছর বয়সী উইলসন মাইনা।

২৬ বছর বয়সী জাইরাস ওমুল্যান্ডো আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা বিষয়গুলো সম্পর্কে এখন আরও ভাল করে জানি। আমরা যৌন ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কিত বিষয়গুলি এবং একে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি।’

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ