শ্রীলংকার মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো কোন মুসলিম নেই
সাউথ এশিয়ান মনিটর
০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৫০ | অনলাইন সংস্করণ
তিন সপ্তাহ পার করছে, দুই ভাই, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজপাকসার নেতৃত্বাধিন শ্রীলঙ্কা সরকার। একটি মন্ত্রিসভাও গঠন করা হয়েছে। এতে দুইজন তামিল থাকলেও দেশের স্বাধীনতার পরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন মুসলিম সদস্য নেই।
মন্ত্রিসভা গঠনে ১৬ নভেম্বরের ভোটের ধরনের প্রভাব পড়েছে। বেশিরভাগ সিনহলি ও তামিলদের একটি অংশ গোতাবায়াকে ভোট দেয়। প্রায় কোন মুসলমানই তাকে ভোট দেয়নি।
এর প্রতিক্রিয়ায় মুসিলম রাজনৈতিক দল অল সিলন মাক্কাল কংগ্রেসের (এএলএমসি) নেতা রাশিদ বাথিউদ্দিন বলেন যে, মন্ত্রিসভায় কোন মুসলিম না থাকা ঠিকই আছে, কারণ মুসলমানরা গোতাবায়াকে ভোট দেয়নি।
তবে গোতাবায়ার দল শ্রীলংকা পদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) সূত্র জানিয়েছে যে তারা ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনের জন্য জোটে অংশ নিতে মুসলমানদের প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এসএলপিপি’র আশা সাধারণ নির্বাচনের আগে মুসলমান নেতারা তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া এসএলপিপি নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন ওইসব মুসলিম বুদ্ধিজীবদের আগামী বছর মার্চে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয় যারা তার নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছেন। জনসংখ্যার ১০% মুসলমান ও ১২% তামিল।
২১ এপ্রিল ইস্টার হামলার পর থেকেই মুসলিম রাজনীতিকদের বিতর্কিত করা হয়। ওই হামলা চালায় ৯ শ্রীলংকান মুসলিম। শ্রীলংকায় কট্টর মত বিস্তারে সহায়তা করার অভিযোগও ওঠে কয়েকজন মুসলিম মন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
তবে এএলএমসি নেতা বাথিউদ্দিন বলেন, সব শ্রীলংকানের উপর যেন আইন ন্যায্যভাবে প্রয়োগ করা হয় তা নিশ্চিত করা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার দায়িত্ব। বিদেশী সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন যে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে যুক্ত থাকার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। তিনি জানান যারা তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে তাদের কেউ প্রমাণ দিতে পুলিশের কাছে হাজির হয়নি। যারা এই অভিযোগ তুলছে তারা মুসলিম ও সিনহলিদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়।
আরেক বিতর্কের কেন্দ্র ইস্টার্ন প্রভিন্সের সাবেক গভর্নর এম এল এ এম হিসবুল্লাহ। তিনি কট্টরপন্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় একটি ‘ওহাবি বিশ্ববিদ্যালয়’ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
তবে বিগত সরকারের আমলে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটি ২১ এপ্রিল হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে থিউদ্দিন ও হিসবুল্লাকে সব ধরনের সন্দেহ থেকে মুক্তি দিয়েছে।
কিন্তু নতুন সরকারের আমলে ওই তদন্ত আবার শুরু হতে পারে বলে সূত্র আভাস দিয়েছে। ওই হামলার বিচার করা হবে বলে খ্রিস্টানদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন গোতাবায়া। তিনি ফের তদন্ত করে অপরাধিদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন।
গত শুক্রবার কলম্বোর আর্চবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রনজিত তদন্ত কমিশনের কাছে চার ঘন্টার বেশি সময় ধরে সাক্ষ্য-প্রমাণ দেন। তার এই সাক্ষ্য নতুন সরকারের আমলে ইস্টার হামলার তদন্তের শুনানিতে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া কমিশনের সদস্যদের ডেকে দ্রুত দায়ি ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার নিদের্শ দেন। এ ব্যাপারে তার পূর্ণ সমর্থনের কথাও ঘোষণা করেন।
কমিশনকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাদের সংগ্রহ করার তথ্য-প্রমাণ এটর্নি জেনারেলকে (এজি) আমলে নিতে হবে এবং তাকে দায়ী ব্যক্তি ও যাদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই হামলার ঘটনা ঘটেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
গত সরকারের আমলে হামলার পরপরই গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগ নিরপরাধ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দেশের পত্র-পত্রিকায় অনেক খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নামকরা মুসলিম আইনজীবী মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন অন্তবর্তী মন্ত্রিসভা নিয়ে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা না হয়। তিনি বলেন যে মুসলমানরা শিগগিরই মূলধারার অংশ হবে।
মুসলমানদের নতুন প্যারাডাইম হতে পারে তারা শ্রীলংকা মুসলিম কংগ্রেস বা এসিএমসি’র মতো জাতিগত ও ধর্মভিত্তিক দলের মধ্যে সীমিত না থেকে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো যেমন: এসএলপিএফ, এলএলপিপি ও ইউএনপি’র সঙ্গে যোগ দিতে পারে।
১৯৮০’র দশকের শেষ দিকে লঙ্কার মুসলমানরা আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করে। তার আগ পর্যন্ত দেশের মূল ধারার সঙ্গেই রাজনীতি করেছে মুসলমানরা। তামিলদের মতো আলাদা কোন ভূখণ্ডের দাবি মুসলমানরা কখনো করেনি।
শ্রীলঙ্কান মুসলমানদের আলাদা রাজনৈতিক দলকে দেশে বর্তমান জাহরানের মতো গ্রুপগুলোর দ্বারা কট্টর মনোভাব বিস্তারের জন্য দায়ি করা হচ্ছে।
হিসবুল্লাহ তার সাক্ষ্যে বলেন যে নির্বাচনের সময় জাহরান তার কাছে নারী-পুরুষকে পুরোপুরি আলাদাভাবে বিবেচনা করা দাবি জানান এবং বলেন যে সাধারণত নির্বাচনী প্রচারণায় যেভাবে লাউড স্পিকারে গান বাজানো হয় তা বাজানো যাবে না। তবে এই দাবির কাছে তিনি নতি স্বীকার করেননি।
২০০৯ সালের যুদ্ধ অবসানের পর বৌদ্ধ জাতীতাবাদী গ্রুপগুলোর উত্থান ঘটে এবং মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা বাঁধে।
এই দাঙ্গা বাঁধানের জন্য বদু বালা সেনা (বিবিএস)-কে দায়ি করা হয়। যদিও সংগঠনটি তা অস্বীকার করা হয়। তারা জানিয়েছে যে পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর সংগঠন বিলুপ্ত করা হবে। রাজাপাকসা সরকারের আমলে দেশ নিরাপদে থাকবে বলে বিবিএস নেতারা মনে করেন।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ