আজকের শিরোনাম :

সোমবার শুরু হচ্ছে ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করাতে মরিয়া কেন্দ্র সরকার

  সমৃদ্ধ দত্ত

১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:২৮ | আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:৪০ | অনলাইন সংস্করণ

ভারতে আগামীকাল সোমবার থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। আসন্ন অধিবেশনে মোদি সরকার একঝাঁক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিলটি পাশ করাতে নরেন্দ্র মোদি মরিয়া, সেটি হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি এর আগে লোকসভায় পাশ হয়ে গেলেও, ষোড়শ লোকসভার সময়সীমায় রাজ্যসভায় পাশ করানো যায়নি। তার আগেই লোকসভা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং সাধারণ নির্বাচন সামনে চলে আসে। সেই কারণে বিলটিও বাতিল হয়ে যায়। তাই সপ্তদশ লোকসভায় ফের ওই বিলটি পেশ করে রাজ্যসভায় আনতে হবে। এবং গত বাজেট অধিবেশনের ধারাবাহিকতা মেনে এবার বিলটি পাশ করাতে সরকার পক্ষ মরিয়া।

সরকারি সূত্রের খবর, আসামের ধাঁচে এনআরসি নিয়ে অতি তৎপরতা না দেখিয়ে আপাতত মোদি সরকার চাইছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটিকে আগে পাশ করাতে। এই সংশোধনী বিলের প্রধান প্রতিপাদ্য হল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ওইসব দেশের যেসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে চলে এসেছে, তারা এ দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। এই তালিকায় থাকবে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়। অর্থাৎ এই ৬টি ধর্মাবলম্বী মানুষ যদি ওই তিন দেশ থেকে ভারতে চলে এসে আশ্রয় ও নাগরিকত্ব চায়, তা হলে তারা আবেদন করতে পারে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার পাশাপাশি, ১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইন এবং ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স আইনেও এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই ভাবেই কার্যত মুসলিম সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যারা বেআইনিভাবে এদেশে বসবাস করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যে হিন্দুরা বিগত বছরগুলিতে চলে আসছে, এই বিলটি পাশ হওয়ার ফলে তাদের ক্ষেত্রে আর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা দেওয়া হবে না।

উ঩ল্লেখ্য, এনআরসি চালু করতে হলে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রাখতে হবে ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি, অসমের এনআরসির মতোই কোনও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণও আরোপ করা যাবে না। অসমের এনআরসির ক্ষেত্রে বরং সিংহভাগ হিন্দুই বেআইনি নাগরিক হয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ এনআরসি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে যত মুসলিম অনুপ্রবেশকারী এসেছে, তার থেকে বেশি হিন্দু অনুপ্রবেশকারী এসেছে। কিন্তু এই তালিকা নিয়ে অসমে প্রবল ক্ষোভবিক্ষোভও চলছে। আর তাই বাংলার হিন্দু সমাজ যাতে কোনওভাবে আতঙ্কিত না হয়, সেই লক্ষ্য নিয়ে আপাতত এনআরসি নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকেই প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিল অনুযায়ী এখন কোনও বহিরাগত ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকত্বের আবেদন করে, তা হলে তাকে আবেদন করার আগে একটানা ১১ মাস ভারতে থাকতে হবে। আর সব মিলিয়ে ১১ বছর ভারতে বসবাস করতে হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হচ্ছে। অর্থাৎ ৬ বছর ভারতে থাকলেই ওই বিশেষ ৬টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। সংসদের এই অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে আজ সংসদ ভবনে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার ডাকা ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রায় সব দলের নেতানেত্রী। শিবসেনাও প্রতিনিধি পাঠায়। বৈঠক চলাকালীনই তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশ্ন করেন, দিদি কেমন আছেন?

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ