আজকের শিরোনাম :

অন্য দেশের বহিষ্কৃত আইএস জিহাদিদের ভবিষ্যত কী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ১২:৩৩

ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে, এমন বিদেশি নাগরিকদের তুরস্ক থেকে বহিষ্কারের কাজ শুরু করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। যদিও ব্রিটেনসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র এসব নাগরিকদের ফেরত নিতে একেবারেই ইচ্ছুক নয়।

জিহাদি গ্রুপে যোগ দেয়া নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করে ইতিমধ্যেই জার্মানি, ডেনমার্ক এবং যুক্তরাজ্য তাদের দেশে ফেরা ঠেকানোর ব্যবস্থা করেছে।

কিন্তু তুরস্ক বলছে, দেশটি জার্মান, ফরাসী, ড্যানিশ এবং আইরিশসহ কুড়িটির বেশি ইউরোপীয় দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

এই নাগরিকদের যখন তুরস্ক থেকে বহিষ্কার করা হবে, কী ঘটবে তাদের ভাগ্যে?

তুরস্কের অবস্থান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের কয়েকশ জিহাদি দেশটির বিভিন্ন কারাগারে বন্দি আছে।

এ মাসের শুরুতে আঙ্কারা আভাস দেয় যে, সংশ্লিষ্ট দেশ নাগরিকত্ব খারিজের ঘোষণা দিলেও তুরস্ক বিদেশি জিহাদিদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করতে যাচ্ছে।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু বলেন, ‘জিহাদিদের নাগরিকত্ব বাতিল করার এক নতুন এক ধারণা চালু হয়েছে এখন। তারা বলছে, জিহাদিদের যে দেশে ধরা হয়েছে সেখানে তাদের বিচার করতে হবে।আমার ধারণা এটা নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক আইন। কিন্তু এটা মেনে নেয়া সম্ভব নয়।’

বিদেশি নাগরিকদের কী করা হয়?
সাধারণত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অন্য দেশে আটক হলে একজন বিদেশি নাগরিককে কনস্যুলার সহযোগিতা দেয়া হয় এবং এ ক্ষেত্রে ওই নাগরিকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেয়, বিশেষ করে আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজে।

এখন তুরস্কের বিভিন্ন ক্যাম্পে যেসব আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা আটক রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে কোনো দেশের সরকার বলে থাকে যে আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি তাদের কর্মকর্তাদের জন্য বিপজ্জনক।

এখন পর্যন্ত যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তারা তুরস্কে বন্দি হয়েছিলেন নাকি সিরিয়াতে আটক হয়েছিলেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।

কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ তাদের যেসব নাগরিক আইএসে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের ফেরত নিতে ইচ্ছুক নয়।

দেশের মধ্যে তাদের বিপক্ষে জনমত এবং যেসব আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি তাদের হতে হবে, সেসব জটিলতা এড়ানোর চেষ্টা, এই অনিচ্ছার পেছনে একটি বড় কারণ বলে ধারণা করা হয়।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের পরিষ্কার নির্দেশনা হচ্ছে, প্রত্যেক দেশকে তার নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশলেট বলেন, ‘বিদেশি পরিবারগুলোর সদস্যদের যদি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বিচার শুরু করা না হয় তা হলে অবশ্যই তাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে।’

তিনি বলেন, একজন নাগরিক অন্য দেশে গুরুতর অপরাধের জন্য সন্দেহভাজন, নাকি তাকে অন্য কোন কারণে আটক করা হয়েছে, সেই বিষয়টির দায়িত্ব প্রত্যেকটি দেশকে আলাদা করে নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একজন নাগরিকের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয়া অবৈধ একটি কাজ।

যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন তাদের কী হয়েছে?

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে জার্মান, ড্যানিস এবং মাকিন তিনজন আইএস জিহাদি যোদ্ধাকে ১২ই নভেম্বর বহিষ্কার করে তুরস্ক।

মার্কিন নাগরিক গ্রিসের স্থল সীমান্তে আটকে ছিলেন বহুক্ষণ, যেহেতু তিনি নিজ দেশে ফেরার বদলে অন্য কোথাও যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গ্রিস তাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আবার তুরস্কে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ডেনমার্কের নাগরিক আইএস যোদ্ধাকে কোপেনহেগেনে পাঠানোর পরই তাকে গ্রেফতার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

জার্মানি জানিয়েছে, তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের দেশের নাগরিককে ফেরত পাঠানো হবে। এটি নির্ভর করবে অতীতে জার্মানি আইএস সদস্যদের ফেরত নিয়েছে এবং তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অথবা তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে সেটার ওপর।

ফ্রান্সের দাবি ছিল সিরিয়া বা ইরাকে আটক তাদের নাগরিক আইএস সদস্যদের সেই দেশে বিচার করা হোক। এ বছরের শুরুতে ইরাকে চারজন ফরাসি ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেবার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৪ সালে তুরস্কের সাথে দেশটির একটি সমঝোতা হয় যে, ফ্রান্স কিছুটা নীরবেই বেশ কিছু ফরাসি জিহাদিকে ফেরত নেবে যাদের ফ্রান্সে পৌঁছানোর পরই গ্রেফতার করা হয়।

কোন কোন দেশ গেফতার নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়, যেমন যুক্তরাজ্য শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করার পর তিনি এখনো সিরিয়ার ক্যাম্পে বন্দি রয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের ওই সিদ্ধান্তের পেছনে ধারণা করা হয়েছিল, শামীমা তার মায়ের সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চাইতে পারেন। যদিও বাংলাদেশ সে দায়িত্ব না নিয়ে বলেছিল, শামীমার দায়িত্ব যুক্তরাজ্যকেই নিতে হবে।

আইনি জটিলতা
তুরস্ক কাউকে বহিষ্কার করার পর সেই ব্যক্তিকে যদি তার দেশ ফেরত না নিতে চায়, অথবা সে নিজে নিজ দেশে ফিরতে না চায়, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন পক্ষ জড়িয়ে পড়ে।

যেমন সিরিয়ায় আটক এক ব্যক্তি ইরাকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি থাকার পর তাকে বাহরাইনে তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র তার পাসপোর্ট বাতিল করে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ রকম ঘটনা আরও থাকতে পারে যেগুলো প্রকাশ্যে জানানো হয়নি।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ