আজকের শিরোনাম :

আইএসের সাবেক বিদেশি যোদ্ধাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে কারা?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৩১

যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, তারা তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া বিদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অসম্মতি জানিয়েছে। এসব নাগরিক বর্তমানে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কাছে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বন্দি রয়েছে বলে জানানো হয়।

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর তুরস্কের সেনা অভিযান শুরু করলে ওই এলাকায় বন্দি এমন হাজার হাজার নাগরিকের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এটা সত্য যে পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশগুলো সন্দেহভাজন আইএস সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে অনিচ্ছুক। এই গ্রুপে যোগ দেয়া নাগরিকদের বিষয়ে জন অভিমত এবং আইনি চ্যালেঞ্জের বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এমন অনেক বিদেশি নাগরিক নিজ উদ্যোগেই দেশে ফিরেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে সিরিয়ায় আইএস তাদের শক্ত ঘাঁটি হারানোর আগেই এটি করেছে তারা।

এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় অন্য দেশ- যেখান থেকে বেশিরভাগ আইএস যোদ্ধা এসেছে সেসব দেশকে নিজেদের নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন সরকার।

তবে এসব দেশ তাদের নিতে চায় না জানিয়ে সেই আহ্বান নাকচ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের বছরের পর বছর ধরে রাখতে চায় না এবং এটা যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের জন্য কড়া মূল্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক বাহিনীর (এসডিএফ) হাতে আসলে কত জন বিদেশি নাগরিক রয়েছে এবং তাদের ফিরিয়ে নিয়েছে কোন দেশ?

সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিদের পরিবারের সদস্যরা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য নির্মিত বেশ কয়েকটি আশ্রয় শিবিরে রয়েছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় আশ্রয় শিবির আল-হল। এতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ রয়েছে, যাদের মধ্যে ৯৪ ভাগই নারী এবং শিশু। আর তাদের মধ্যে ১১ হাজার বিদেশি নাগরিক।

এ ছাড়া এসডিএফ বলছে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কারাগারগুলোয় ১২ হাজারের বেশি সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধা বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার বিদেশি নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে (যারা সিরিয় বা ইরাকি নন)।

গত আগস্টে মার্কিন সরকারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিদেশি প্রাপ্তবয়স্ক যোদ্ধাদের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে যা এর চেয়ে কম। এত বলা হয়, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৫০টি দেশের ২ হাজার বিদেশি নাগরিক রয়েছে। তাদের মধ্যে ৮০০ ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত এবং বাকিরা মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়ার নাগরিক।

এই তথ্য বিবেচনা করে, গত বছর কিংস কলেজের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টাডি অব র‍্যাডিকালাইজেশন এক পরিসংখ্যানে বলে যে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪১ হাজারের বেশি বিদেশি নাগরিক ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস'এ যোগ দিয়েছে।

কোন দেশ কি তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে?
জাতিসংঘ বলছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে যদি সিরিয়ার আইএস যোদ্ধাদের বিচারের আওতায় আনা না হয় তা হলে দেশগুলোর উচিত তাদের নাগরিকদের দায়-দায়িত্ব নেয়া। অনেক দেশই তা মানতে অসম্মতি জানিয়েছে। জনগণের অভিমত, আইএসে যোগ দেয়া নাগরিকদের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপে জটিলতা এড়াতে এই অসম্মতি জানিয়েছে তারা।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সরকারি উদ্যোগে বিদেশি নাগরিকদের প্রত্যাবাসনকে ‘পিসমিল’ বা ব্যবস্থাপনাহীন ও আংশিক বলে উল্লেখ করেছে।

সংস্থাটি বলছে, ১২শরও বেশি বিদেশি নাগরিক বিশেষ করে শিশুদের সিরিয়া এবং ইরাক থেকে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, রাশিয়া, কসোভো এবং তুরস্কে প্রত্যাবাসিত করা হয়েছে।

কিন্তু অন্য কয়েকটি দেশও কিছু নাগরিককে ফিরিয়ে নিয়েছে-
ফ্রান্স : ১৮ টি শিশু
যুক্তরাষ্ট্র : ১৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু
জার্মানি : ১০ জনেরও কম
অস্ট্রেলিয়া : ৮টি শিশু
সুইডেন : ৭টি শিশু
নরওয়ে : ৫টি শিশু

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বিদেশি নাগরিকদের ইরাকি বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে এবং সে দেশের আদালতে বিচার করা হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে চার জন ফরাসি নাগরিককে ইরাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। যদিও এই বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে সে সময় অনেক সমালোচনা হয়েছে।

অনেক দেশের সরকার নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে যাতে করে দেশে ফিরে আসতে না পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাজ্যের শামিমা বেগমের কথা, যিনি সিরিয়ায় এসডিএফের পরিচালিত শিবিরে আটক রয়েছেন। এর চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক বিদেশি নাগরিক যারা আইএসে যোগ দিয়েছিল তারা মার্চে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে জিহাদিদের সর্বশেষ এলাকা দখলে যাওয়ার আগেই নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্টাডি অব র‌্যাডিকালাইজেশনের হিসাবে, বিশ্বব্যাপী এই সংখ্যা ৭ হাজার ৭১২ থেকে ৮ হাজার ২০২ এর মধ্যে। তাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় ফেরার পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে প্রত্যাবাসনকারীরাও রয়েছেন। তবে প্রত্যাবাসনকারীদের সংখ্যা খুবই কম।

জোয়ানা কুক এবং গিনা ভ্যালে, যারা এই পরিসংখ্যানের সহযোগী লেখক, বিবিসিকে বলেন, ‘অনেক সরকারই প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে এতিমদের, ফিরিয়ে আনতে বেশি ইচ্ছুক।’
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ