ট্রাম্প কি আবারো অভিশংসনের মুখে পড়তে পারেন?
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৯:২৩
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। এর আগে কয়েকবারই মার্কিন কংগ্রেসে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ঝুঁকির মুখে পড়েছিলেন তিনি। এখন আবার কথা উঠেছে, ট্রাম্পকে ঘিরে সর্বশেষ যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে - তার জন্য তাকে ইমপিচ করা যেতে পারে কিনা।
সে এক বিচিত্র ঘটনা - যাতে জড়িয়ে পড়েছেন মি. ট্রাম্প আর ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন, যিনি বারাক ওবামার সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এতে আরো জড়িয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মাইল দূরের দেশ ইউক্রেন, আর তেল-গ্যাস ব্যবসার স্বার্থ।
কিছুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন যেন তারা বাইডেন পরিবারের কথিত 'দুর্নীতির' ব্যাপারে তদন্ত করে, কারণ জো বাইডেনের ছেলে হান্টার ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির পরিচালক ছিলেন।
মি ট্রাম্প চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু তিনি এটা স্বীকার করেছেন যে জুলাই মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ফোনে কথা বলার সময় তিনি জো বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টারের 'দুর্নীতির' প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।
এ নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে শুরু হয়েছে হৈচৈ । খবরটা বেরুনোর পরই ডেমোক্র্যাটদের কেউ কেউ শোর তুলেছেন যে মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে অভিশংসন প্রস্তাব আনতে হবে।
সিনিয়র ডেমোক্র্যাট এ্যাডাম শিফ - যিনি এর আগে ট্রাম্পকে অভিশংসন করার বিরোধী ছিলেন - এবার তিনিও বলছেন, মি. ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে হয়তো সীমা লংঘন করেছেন।
ব্যাপারটা কী?
সেটা ২০১৪ সালের কথা। তখন জো বাইডেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, এবং ইউক্রেনের ব্যাপারে মার্কিন নীতি কি হবে তার একজন মুখ্য নির্ধারক।
আর ঠিক সে সময়ই তার ছেলে হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি বুরিসমার একজন পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।
তখনই প্রশ্ন উঠেছিল যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের ছেলে যদি ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির পরিচালক হন - তাহলে এক্ষেত্রে মি বাইডেন পক্ষপাতহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কি না, অর্থাৎ এখানে একটা 'স্বার্থের সংঘাত' হচ্ছে কিনা।
তখন ইউক্রেন রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট সদ্য ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। সেই সময়টা জো বাইডেন ঘন ঘন ইউক্রেন সফরে যাচ্ছিলেন।
২০১৬ সালে মি. বাইডেন ইউক্রেন সরকারের ওপর চাপ দিয়েছিলেন - যাতে তারা তাদের শীর্ষ কৌঁসুলি ভিক্টর শোকিনকে বরখাস্ত করে। মি. বাইডেন নিজেই বেশ গর্ব করে এই চাপ দেবার কথা স্বীকার করেছিলেন এক বক্তৃতায়।
তিনি বলেছিলেন, "আমি ওদের (ইউক্রেনীয়দের) বললাম, আমি এখানে ৬ ঘন্টা আছি। তোমরা যদি শোকিনকে বরখাস্ত না করো, তাহলে তোমাদের যে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ পাবার কথা, তা দেয়া হবে না।"
এ চাপের কারণ কী? কারণ হলো বুরিসমা কোম্পানির মালিকের দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন এই শোকিন।
মি. ট্রাম্প এবং তার মিত্রদের অভিযোগ, মি বাইডেন তার ছেলেকে সুরক্ষা দেবার জন্যেই এ কাজ করেছিলেন। তবে জো বাইডেন বলেন, তিনি তার ছেলের সাথে কখনো তার ব্যবসা নিয়ে কথা বলেন নি।
যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটছে?
যারা নিজের পরিচয় গোপন রেখে কোন দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেয় তাদের বলে 'হুইসলব্লোয়ার'।
এমনই একজন গোয়েন্দা হুইসলব্লোয়ার সম্প্রতি একটি অভিযোগ দায়ের করেন যে মি ট্রাম্পের সাথে একজন বিদেশী নেতার কথা হয়েছে এবং সেখানে কিছু একটা 'অঙ্গীকার' করা হয়েছে।
এই অভিযোগটি মার্কিন কংগ্রেসের হাতে তুলে দেবার কথা। কিন্তু গত সপ্তাহে খবর বেরোয় যে ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগটি হস্তান্তর করতে দিচ্ছে না - ব্যাপারটা আটকে দিয়েছে।
মার্কিন আইন অনুযায়ী কোন অভিযোগ 'জরুরি' এবং 'বিশ্বাসযোগ্য' বলে বিবেচিত হলে সাত দিনের মধ্যে তা কংগ্রেসকে জানাতে হবে।
মি ট্রাম্প বলছেন, তিনি গত ২৫শে জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে যে কথা বলেন - তাকে অভিনন্দন জানানোর জন্যেই, তবে তাতে দুর্নীতির কথা উল্লেখ ছিল, উল্লেখ ছিল মি. বাইডেন ও তার ছেলের নামেরও।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন তিনি অন্যায় কিছু করেন নি, এবং যে অভিযোগ উঠেছে তা দলীয় সংকীর্ণতাপ্রসূত।
মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে, মি. ট্রাম্প প্রায় আটবার মি. জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে তিনি হান্টার বাইডেনের ব্যাপরে তদন্তের জন্য তিনি তার আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির সহযোগিতা নেন।
এ ঘটনা নিয়ে মার্কিন রাজনীতি ও সংবাদ মাধ্যমের জগতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
প্রশ্ন হচ্ছে : একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট কি তার সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীর পরিবারের ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য অন্য একটি দেশের নেতাকে আহ্বান জানাতে পারেন? এ ঘটনার জন্য মি ট্রাম্পকে কি অভিশংসন করা যায়?
এবিএন/মমিন/জসিম