আজকের শিরোনাম :

মালালার বিরুদ্ধে ভারতে হঠাৎ কেন আক্রমণের ঝড়?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:৫০

কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলে ও সেখানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে ভারতে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাই। তাকে ভারতীয়দের পরামর্শ, আগে নিজের দেশ পাকিস্তানের দিকে তাকান।

সারা বিশ্ব জুড়ে শিশুদের শিক্ষার অধিকারের চ্যাম্পিয়ন, পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই যখন ২০১৪তে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান, সেই পুরস্কার তাকে ভাগ করে নিতে হয়েছিল ভারতের প্রবীণ মানবাধিকার কর্মী কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে।

অসলোতে পুরস্কার নিতে গিয়ে তখন ৬০ বছরের সত্যার্থী ও ১৭ বছরের মালালা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব আর আস্থার মাধ্যমেই দুদেশের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

"দুই দেশের শিশুদের মধ্যে সহিষ্ণুতা ও শান্তির বীজ বপন করতে পারলেই ইনশাল্লাহ ভারত ও পাকিস্তান আবার দুই ভাইয়ের মতো পাশাপাশি থাকতে পারবে", নরওয়েতে দাঁড়িয়ে সেদিন বলেছিল মালালা।

তবে মালালা ইউসুফজাই তারও অনেক আগে থেকেই ভারতে সুপরিচিত একটি নাম।

তালেবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যেভাবে তিনি সোয়াত উপত্যকায় মেয়েদের পড়াশুনোর অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন তার জন্য ভারতেও তার অনুরাগী ও গুণগ্রাহীর সংখ্যা কম নয়।

কিন্তু দিনকয়েক আগে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে মালালার টুইট ও জাতিসংঘকে সেখানে হস্তক্ষেপের আবেদন সেই গোটা ছবিটাকেই আমূল বদলে দিয়েছে।

ভারতে বহু রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, তারকা ও সাধারণ মানুষ মালালার বিরুদ্ধে ক্রমাগত টুইট করে চলেছেন, তাকে আগে নিজের দেশ পাকিস্তানের পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সোজা কথায়, কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলে মালালা ইউসুফজাই রাতারাতি ভারতে ভিলেনে পরিণত হয়েছেন।

গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মালালা টুইট করেছিলেন, "দশকের পর দশক ধরে কাশ্মীর যে দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কবে তার অবসান হবে আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।"

তিনি আরও লেখেন, "শিশু-সহ প্রায় হাজার চারেক মানুষকে ইচ্ছেমতো জেলে আটক করে রাখা হয়েছে, আমি তাদের কথা ভেবে শঙ্কিত।"

কাশ্মীরে চল্লিশ দিনেরও বেশি হল শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, মেয়েরা বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে - সে কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

গত সপ্তাহে তিনি যে কাশ্মীরে বসবাসকারী ও সেখানে কর্মরত বহু সাংবাদিক, মানবাধিকার আইনজীবী ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা বলেছেন, সেটাও জানাতে ভোলেননি।

সেই সঙ্গেই মালালা জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের প্রতি আবেদন জানান, "কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপনারা কাজ করুন, কাশ্মীরিদের কন্ঠস্বর শুনুন এবং বাচ্চাদের নিরাপদে স্কুলে ফিরতে সাহায্য করুন!"

এর পর থেকেই ভারতে মালালা-র বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে।

বিজেপি এমপি ও কর্নাটকের সাবেক মন্ত্রী শোভা কারান্ডলাজে মালালাকে ব্যঙ্গ করে টুইট করেছেন, "নোবেলজয়ীকে অনুরোধ করব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কথা বলার জন্যও একটু সময় খরচ করুন।"

"আপনার নিজের দেশে সংখ্যালঘু (হিন্দু, শিখ) মেয়েদের কীভাবে নির্যাতিত ও জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে, সেটার বিরুদ্ধেও মুখ খুলুন।"

হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই টুইট করেন, কাশ্মীরি মেয়েদের জন্য তার উদ্বেগের আড়ালে মালালা আসলে পাকিস্তানের 'এজেন্ডা'কেই সমর্থনের চেষ্টা করছেন।

ভারতীয়রা যে মালালার 'প্রকৃত চেহারা' বুঝতে পারছেন, তাতেও তার উচ্ছ্বাস গোপন করেননি ওই শিবসেনা নেত্রী।

ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ ও শ্যুটার হিনা সিধুর আক্রমণ ছিল আরও কঠোর ভাষায়।

হিনা মালালার উদ্দেশে লেখেন, "তাহলে আপনি বলছেন কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতেই তুলে দেওয়া উচিত, যে পাকিস্তানে শিক্ষার হাল এতোটাই ভাল যে পড়াশুনো করতে গিয়ে আপনার প্রাণ যেতে বসেছিল?"

"তারপর আপনাকে দেশ থেকে এমনভাবে পালিয়ে যেতে হল যে আপনি আর ফিরতেই পারলেন না? তার চেয়ে বরং আপনি আগে পাকিস্তানে গিয়েই আপনার দরদ দেখান না কেন!"

এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর মন্তব্য করেছিলেন, মালালা আসলে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যই নন।

এখন আবার সেই পুরনো বিতর্ককে টেনে এনে বলিউড অভিনেতা ও বিজেপি এমপি পরেশ রাওয়াল লিখেছেন, "শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর যে সঠিক ছিলেন, মালালা নিজেই সেটা প্রমাণ করে দিলেন।"

বলিউডের চিত্র পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেছেন, মালালা আসলে নাকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন।

"চীনে যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত নির্যাতন চলছে সেটা নিয়ে তিনি কিছু বলছেন না কেন? কারণ কি এটা তার (সিআইএ) এজেন্ডার অংশ নয়!", টুইট করেছেন মি অগ্নিহোত্রী।

মালালা ইউসুফজাইকেই সরাসরি 'সাম্প্রদায়িক' বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি।

শুধু তারকা বা রাজনীতিবিদরাই নন, ভারতে বহু সাধারণ মানুষও সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিযোগ করছেন মালালা আসলে ভারতকেই আন্তর্জাতিক স্তরে অপদস্থ করতে চাইছেন।

সরকারি দমনপীড়নের কারণে গত আগস্ট মাসে একটি কাশ্মীরি স্কুলছাত্রী তার পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেনি - এই জাতীয় ভিত্তিহীন খবর টুইট করে মালালা আসলে 'ফেক নিউজ' ছড়াচ্ছেন বলেও অনেকে লিখেছেন।

তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে মালালা ইউসুফজাইয়ের সাম্প্রতিক পোস্টগুলি থেকেই স্পষ্ট, এখন বাইশ বছর বয়সে পৌঁছে তিনি কাশ্মীরিদের দুর্দশা ও যন্ত্রণা নিয়ে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ