আত্মহত্যা ঠেকাতে যেসব দেশে কীটনাশক নিষিদ্ধ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:২৭
প্রতি বছর আনুমানিক দেড় লাখের মতো মানুষ আত্মহত্যা করে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পান করে।
জাতিসংঘ এসব পণ্যের সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা কমাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রায় দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে বেশকিছু কীটনাশক নিষিদ্ধ করেছে এবং দেখা গেছে আত্মহত্যায় মৃত্যুর পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সেখানে।
তবে অন্যান্য দেশে আত্মহত্যায় ব্যবহার করা হয় এমন বেশিরভাগ বিষাক্ত কীটনাশক এখনো সহজলভ্য।
১৯৯০-এর সময় থেকে সারা বিশ্বে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার সংখ্যা কমে প্রায় অর্দ্ধেকে নেমে এলেও এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামাঞ্চলে এখনো এটি মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
১৯৮০ এবং ’৯০-এর দশকে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বেশি আত্মহত্যার হার ছিল শ্রীলঙ্কায়। আর তার মধ্যে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশই ছিল কীটনাশক পান করে।
তবে, এসব পণ্য নিষিদ্ধকরণে দুই দশকের বেশী সময় ধরে দেশটির সরকারের নেয়া পদক্ষেপের ফলে সামগ্রিক আত্মহত্যার হার হ্রাস পেয়েছে ৭০%।
কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করা মানুষের সংখ্যা এখনো কমেনি, বরং হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে। এতে প্রমাণ হয় যে, আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের সংখ্যা কমেনি, তবে সেসব কীটনাশক কম বিষাক্ত ছিল।
কৃষিক্ষেত্রের জন্যে কীটনাশকের প্রতিস্থাপনে এসেছে কম বিষাক্ত কীটনাশক।
অত্যন্ত বিপজ্জনক কীটনাশকের নিরাপদ বিকল্পের ব্যবহারে কৃষির ফলন কম হয়েছে এমন প্রমাণ বেশি পাওয়া যায়নি, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।
এই সময়ে অবশ্য স্বাস্থ্য সেবার মানও উন্নত হয়েছে।
ভারতের সরকারি তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করে মারা গেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার মানুষ। যার মধ্যে কীটনাশকের কারণে মারা গেছে ২৪ হাজার।
ভারতের চন্ডীগড় মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডা. আশীষ ভাল্লা বলছেন, সাধারন মানুষ প্রায়শই আত্মহত্যার বিষয়টিকে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার ভয়ে লুকিয়ে রাখে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিশ্লেষক দেখেছেনে যে, ভারতে নিবন্ধিত কীটনাশকের মধ্যে অন্তত দশটি অত্যন্ত বিষাক্ত। আর সেগুলোই অধিকাংশক্ষেত্রে আত্মহত্যায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসবের অনেকগুলোই ভারত সরকার নিষিদ্ধ করছে বা ২০২০ সালের মধ্যে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার নির্দেশিকা অনুযায়ী এখনো এক ডজনেরও বেশি অত্যন্ত বিপজ্জনক কীটনাশক সহজলভ্য রয়ে গেছে।
২০০০ সালের পর থেকে একই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বাংলাদেশেও। ফলে হ্রাস পেতে শুরু করেছে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার। তবে কীটনাশক-বিষক্রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০১২ সালে এক ধরনের অত্যন্ত বিষাক্ত আগাছানাশক নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে কীটনাশক-বিষক্রিয়াজনিত আত্মহত্যার সংখ্যা হ্রাস পায় তাৎক্ষণিকভাবেই। আর সামগ্রিক মৃত্যুহার হ্রাসেও এটি প্রভাব ফেলে।
২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত চীনে চালানো এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সেখানে আত্মহত্যার সংখ্যা কমেছে এবং কীটনাশক পানে মৃত্যুর হার অত্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- এ বিষয়ে দেশটিতে কঠোর বিধি নিষেধ প্রয়োগ, কৃষিতে কমসংখ্যক মানুষের সংশ্লিষ্টতা, নগরায়ন বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন এবং বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন।
২০০১ সাল থেকে ৫ বছরে ২১টি কীটনাশককে নিষিদ্ধ করেছে চীন।
দেশটির কীটনাশক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের প্রধান ডা. দিল্লী শর্মা বলেন, এর মধ্যে কয়েকটি স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত কারনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে কয়েকটি বর্জন করা হয় বিশেষ করে আত্মহত্যায় ব্যবহারের কারণে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি
এবিএন/সাদিক/জসিম
তথ্যসূত্র : বিবিসি
এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ