আজকের শিরোনাম :

মুক্ত ধর্ম চর্চার অধিকার চায় শয়তানের পূজারীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০১৯, ১৭:৩০

শয়তান সম্পর্কে যা জানা যায় - তার সবই ভুল। শয়তানের মন্দির নিয়ে তৈরি নতুন একটি তথ্যচিত্রে এমনটাই অন্তত প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে।

নামে কিছুটা মিল থাকলেও শয়তানের মন্দির আসলে শয়তানের গির্জা থেকে ভিন্ন। ১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে শয়তানের গির্জা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চ্যাট শো সেলিব্রেটি অ্যান্টন ল্যাভে।

শয়তানের উপাসনাকারীরা কি মানব বলি দেয়? এটা ভুল। তারা কি রক্তপান করে? সেটাও ভুল।

ব্ল্যাক ম্যাস বা কালো পোশাকে সমাবেশ করে? সেটা কিছুটা ঠিক। শয়তানের মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০১৩ সালে।

পরে এক বিবৃতিতে তুলে ধরা হয় মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যসমূহ।

বলা হয়, সব মানুষের মধ্যে দয়া এবং সহানুভূতি জাগিয়ে তোলা, অত্যাচারী কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করা, বাস্তবিক সাধারণ জ্ঞান এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করা, এবং মানুষের মনের ইচ্ছানুযায়ী মহৎ সাধনা অনুসরণের জন্য মানব বিবেক দ্বারা পরিচালিত হওয়াই এর উদ্দেশ্য।

'হেল স্যাটান?' - এই নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা পেনি লেন।

তিনি এই চলচ্চিত্রে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে, রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে খ্রিস্ট ধর্ম মার্কিনীদের জীবনে কথিত যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, তা কমিয়ে আনতে শয়তানের মন্দির কিভাবে কাজ করছে।

এই তাত্ত্বিক বিশ্বাস থেকেই, ওকলাহোমা সিটির ওকলাহোমা স্টেট ক্যাপিটাল ভবনের সামনে 'টেন কমান্ডমেন্টস' বা দশ প্রতিজ্ঞা'র একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির প্রস্তাব আসে।

এ বিষয়ে মন্দিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, শয়তান দেবতা বাফোমেটের মূর্তি প্রতিষ্ঠার স্থান বরাদ্দ দেয়ার মাধ্যমে মহাজাগতিক ধর্মীয় ভারসাম্য রক্ষা করা হবে।

সেই সাথে সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পক্ষে একটি মতবাদ প্রচার করাও সম্ভব হবে।

এ নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের ট্রেইলারটিতে মন্দিরের মুখপাত্র লুসিয়েন গ্রিভস বলেন, "আমরা চাই যে যুক্তরাষ্ট্র একটি খ্রিস্টান জাতি কিনা তা মানুষ পুর্নমূল্যায়ন করুক। কারণ আসলে এটি নয়।"

চলচ্চিত্রের নির্মাতা পেনি লেন বলেন, "ওকলাহোমায় থাকার সময়ে যখন এর অনুসারীরা তাদের প্রচারণা চালাচ্ছিল তখনই মন্দিরটি সম্পর্কে জানতে পারি আমি।"

"প্রথম দিকে আমার মনে হয়েছিলো যে তারা হয়তো মজা করার জন্য এ ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি যে, তাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার সদস্য রয়েছে," লেন বলেন।

"আমি যতই এটি সম্পর্কে যত জানছিলাম, ততই এটি আরো বেশি সমৃদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, উত্তেজক এবং আকর্ষণীয় মনে হচ্ছিল।"

পুরো চলচ্চিত্রটি আসলে নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরের মুখপাত্র বুদ্ধিমান ও চতুর গ্রিভস এবং তার অনুসারী শয়তান পূজারীদের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে।

তারা মানুষকে রক্তদান করে, গৃহহীনদের জন্য মোজা সংগ্রহ করে, সমুদ্র সৈকতের আবর্জনা পরিষ্কার করে, স্কুলগামী শিশুদের জন্য ছুটির পরে যাওয়ার মতো ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে।

এসব ক্লাবে মন্দিরের মতবাদ শিক্ষা দেয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে-

ক্সযৌক্তিক কারণ মেনে সব সৃষ্টির প্রতি সমবেদনা এবং সহানুভূতি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে,

ক্সমানুষ মাত্রই ভুল করে। তবে আমরা যদি ভুল করি তাহলে তা সংশোধনের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এর মাধ্যমে কারো ক্ষতি হলে তা পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

যদিও শয়তানের আরাধনা হিসেবে বিভিন্ন নাটক এবং সিনেমায় ব্ল্যাক ম্যাস বা কালো পোশাক পরে শয়তানের পূজার রীতিকে অশুভ হিসেবেই তুলে ধরা হয়, শয়তানের এই উপাসকরা অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, তারা কেউই শয়তানকে আধ্যাত্মিক কোন সত্ত্বা হিসেবে বিশ্বাস করেন না।

বরং হিব্রু ভাষায় স্যাটান বা শয়তান বলতে যে অর্থ বোঝানো হয় অর্থাৎ "বিরোধী" বা "বিপক্ষের শক্তি" হিসেবেই মনে করেন তারা।

লেন বলেন, "তারা যে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসটাকে একটা বিমূর্ত কিংবা কাল্পনিক চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছে, এই বিষয়টিকে আমার কাছে অতটা জটিল বা কঠিন মনে হয় না।"

"এটা আসলে মন ভোলানো কোন চমক নয়। বরং এটা এক ধরণের স্বীকারোক্তি যে, ধর্ম হচ্ছে এমন একটা বিষয় যেটিকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে হয়, কিন্তু প্রমাণ করা যায় না।"

"আমি বুঝতে পেরেছি যে, কোন কিছু গুরুত্বপূর্ণ এটা বোঝার জন্যই জোর করে কোন কিছুতে বিশ্বাস করা দরকার নেই। আমার মনে হয় মানবাধিকারটা মৌলিক বিষয়। আমি অন্যদের মানবাধিকার রক্ষায় জীবনও দিতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয় না যে, পৃথিবীতে মানবাধিকারই একমাত্র আক্ষরিক বস্তু।"

"মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় যেমন, ভালোবাসা, অধিকার, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা-এগুলো আসলে বস্তুগত কোন বিষয় নয় বরং এগুলো সবই ধারণা মাত্র।"

তথ্যচিত্রটিতে প্রাধান্য পেয়েছে শয়তান দেবতা বাফোমেটের মূর্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে চিত্রিত করা, তারপরও এটিতে "শয়তানী আতঙ্ক" এর বিষয়টিও দেখানো হয়েছে। ৮০ এবং ৯০ এর দশকে এই আতঙ্ক পুরো যুক্তরাষ্ট্রে গান, ভিডিও গেমসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো।

কট্টর ডানপন্থী খ্রিস্টান সংস্থা এবং কর্তৃপক্ষ প্রায় সবখানে এবং সবকিছুতেই শয়তানের উপস্থিতির চিহ্ন দেখতে পায়।

"গত ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও এক ধরণের বিশ্বাস ছিলো যে, শয়তানের পূজারীরা সংঘবদ্ধ, গুপ্ত এবং তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করে বেড়ায়, তারা শয়তানের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্ম যেমন মানুষ হত্যা, পশু নির্যাতন এবং শিশু ধর্ষণ করে থাকে," লেন ব্যাখ্যা করে বলেন।

"এর কারণে অনেকেরই জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি অনেককে দীর্ঘ সময় ধরে কারাভোগ করতে হয়েছে।"

"কিন্তু এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যাবে যে, শয়তানের পূজারী বলতে আসলে কেউ নেই। নেই কোন গুপ্ত সংগঠনও। বরং আসল শয়তান লুকিয়ে ছিলো শয়তান ধরার কার্যক্রমে। সেসময় আসলে সমাজের অংশ হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হয়েছে যে মানুষের সক্ষমতা কতখানি," লেন বলেন।

তিনি বলেন, "অবশ্য এ নিয়ে জনসম্মুখে কোন আলোচনা হয়নি। অনেকটা আড়ালেই তার শুরু এবং শেষ হয়েছে। আমার মনে হয় যে, শয়তানের মন্দির চায় যে মানুষ সে সময়টাকে মনে রাখুক যে তখন আসলে কি হয়েছিলো।"

গ্রিভস নিজেও হত্যার হুমকির শিকার হয়েছেন এবং মূর্তি উদ্বোধনের দিন বুলেট প্রতিরোধী ভেস্ট পড়েছিলেন তিনি।

লেন বলেন, "বোঝাই যাচ্ছিল যে নিজের পরিবারের পরিচয় গোপন রাখতে বেশ সচেতন থাকেন তিনি।"

"আমার মনে হয় যে এটা কোন গর্হিত কাজ নয় কারণ, অনেক মানুষ রয়েছে যারা শুধু মজা করার জন্য হলেও আপনার পরিবারকে ভয় দেখাতে পারে।"

লেন বলেন, "আমার চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছে তাদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত আমি। কারণ আমার ছবিতে অভিনয় করে বাইরের বিশ্বে নিজেদের প্রতি হুমকি ডেকে এনেছে তারা। এটা আমি ভালো করেই জানি এবং এ নিয়ে আমি চিন্তিত।"

"ধর্ম বিশ্বাসীদের নিয়ে আমি সারা জীবনই খুব দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতাম। আমি জানি যে এটা শুনতে খুব খারাপ শোনায়, তবে আমি বলতে চাই। আমার মনে হয়েছে যে, ধর্ম হচ্ছে মানুষের এক ধরণের মানসিক অসুস্থতা যার চিকিৎসা জরুরী। আমি এটা বুঝিনি। আমি আসলে জন্মেছি নাস্তিক হয়ে," লেন বলেন। বাসস

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ