আজকের শিরোনাম :

গ্রীনল্যান্ড বিতর্ক: ডেনমার্ক সফরে যাচ্ছেন না ট্রাম্প

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০১৯, ১৮:০২

গ্রীনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করতে রাজী নন, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর এমন জবাবের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেদেশে তার সফর বাতিল করেছেন।

আগামী ২ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ডেনমার্ক সফরে যাওয়ার কথা ছিল। ডেনমার্কের রাণী তাঁকে এই সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রীনল্যান্ড কিনে নিতে আগ্রহী। গ্রীনল্যান্ড ডেনমার্কের একটি স্বশাসিত অঞ্চল।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেডে ফ্রেডরিকসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে 'আজব' বলে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি আশা করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়াস নন, আসলে মজা করার জন্যই এমনটা বলেছেন।

কিন্তু এসব কথাচালাচালির পর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে ঘোষণা করেন যে তিনি আর ডেনমার্ক সফরে যেতে চান না। কারণ ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী গ্রীনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলতে কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ডেনমার্ক সফর বাতিল করা হয়েছে।

ডেনমার্কের রাজপরিবার থেকেও বলা হয়েছে, এই সফর যে বাতিল করা হয়েছে, সেটি তাদের জানানো হয়েছে। রাজপরিবারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে তারা বিস্মিত।

অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে ডেনমার্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কার্ল স্যান্ডস টুইট করেছিলেন, "মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে ডেনমার্ক প্রস্তুত!"

মিস্টার ট্রাম্প অবশ্য এর আগে নিশ্চিত করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র গ্রীনল্যান্ড কিনে নিতে আগ্রহী। গত রোববার যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কোন জায়গার সঙ্গে গ্রীনল্যান্ড বিনিময় করতে চান কিনা, জবাবে তিনি বলেছিলেন, "অনেক কিছুই করা সম্ভব।" তিনি এটিকে বিরাট এক সম্পত্তি কেনার চুক্তি বলে বর্ণনা করেছিলেন।

এরপর তিনি গ্রীনল্যান্ডের এক ছোট্ট শহরের ছবির ওপর তার বিশাল ট্রাম্প টাওয়ারের ছবি বসিয়ে সেই ছবি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ।

গ্রীনল্যান্ড এবং ডেনমার্ক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে

মিস্টার ট্রাম্পের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিলেন গ্রীনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের কর্মকর্তারা।

গ্রীনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কিম কিলসেন বলেছিলেন, "গ্রীনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র সহ সবদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সহযোগিতার জন্য গ্রীনল্যান্ডের দরোজা খোলা আছে।"

আর ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেছিলেন, 'এটা নিশ্চয়ই এপ্রিল ফুল'স ডে'র কোন রসিকতা।"

ডেনমার্কের পিপলস পার্টির একজন মুখপাত্র সোরেন এসপারসেন বলেছিলেন, "যদি তিনি সত্যিই এরকম কিছু ভেবে থাকেন, তাহলে বলতে হবে তিনি একদম উন্মাদ হয়ে গেছেন।"

গ্রীনল্যান্ডের ব্যাপারে কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এত আগ্রহ

বলা হচ্ছে গ্রীনল্যান্ডের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই আগ্রহের কারণ সেখানকার খনিজ সম্পদ। কয়লা, দস্তা, তামা এবং লোহার মতো খনিজে সমৃদ্ধ গ্রীনল্যান্ড।

তবে প্রাকৃতিক সম্পদে যত সমৃদ্ধই হোক, গ্রীনল্যান্ড এখনো ডেনমার্কের ওপর অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক নির্ভরশীল।

গ্রীনল্যান্ডের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার হার খুব বেশি। লোকজন সাংঘাতিকভাবে মদপানে আসক্ত। বেকারত্বের হার খুব উঁচু।

গ্রীনল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান যেরকম কৌশলগত জায়গায়, সেটাও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহের একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় যাওয়ার একটা সোজা পথ বরাবর গ্রীনল্যান্ডের অবস্থান। কাজেই নিরাপত্তার দিক থেকে এর গুরুত্ব আছে।

গত শতকে যখন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়, তখন থেকেই সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান ঘাঁটি আছে। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নানা ধরণের নজরদারি চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ঘাঁটি।

উত্তর মেরু অঞ্চলে যেহেতু বরফ গলে নতুন সমূদ্রপথ খুলে যাচ্ছে, তাই সেখানকার গুরুত্ব বাড়ছে। চীনও এখন উত্তর মেরুর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

গত বছর চীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি গ্রীনল্যান্ডে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু সেই পরিকল্পনা থেকে তারা সরে এসেছে।

একজন রিপাব্লিকান কংগ্রেস সদস্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে এক চতুর ভূ-রাজনৈতিক চাল বলে বর্ণনা করেছেন।

গ্রীনল্যান্ডের অবস্থান কোথায়

অস্ট্রেলিয়াকে বাদ দিলে (এটি আসলে একটি মহাদেশ), গ্রীনল্যান্ড হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। এটি ডেনমার্কের একটি স্বশাসিত অঞ্চল। এর অবস্থান উত্তর আটলান্টিক আর উত্তর মেরু সাগরের মাঝখানে।

আয়তনে মূল ডেনমার্কের চেয়ে গ্রীনল্যান্ড প্রায় ৫০ গুন বড়। ডেনমার্ক থেকে এর দূরত্ব দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। এর সবচেয়ে কাছাকাছি জনঅধ্যূষিত দেশ হচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ড।

গ্রীনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজার। বেশিরভাগ মানুষই উপকুল বরাবর বিভিন্ন শহরে থাকে। জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ হচ্ছে আদিবাসী ইনুইট সম্প্রদায়ের। গ্রীনল্যান্ডের রয়েছে নিজস্ব পার্লামেন্ট। তবে তাদের সরকারের ক্ষমতা সীমিত।

গ্রীনল্যান্ডের ৮০ শতাংশ এলাকা বরফে ঢাকা। তবে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে অনেক এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। এতে করে গ্রীনল্যান্ডের খনিজ সম্পদ আহরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র গ্রীনল্যান্ডের অনেক জায়গায় পরমাণু বর্জ্য ফেলেছিল। এখন বরফ গলতে শুরু করায় সেসব বিষাক্ত বর্জ্য উন্মুক্ত হয়ে পড়বে বলে আশংকা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র কি এর আগেও গ্রীনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছে?

১৮৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম গ্রীনল্যান্ড কেনার চেষ্টা চালিয়েছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এন্ড্রু জনসন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর তখন গ্রীনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেছিল, সেখানে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। কাজেই এটি কেনার জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

কিন্তু এরপর এ নিয়ে আর কোন কিছু আগায়নি। ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সময় যুক্তরাষ্ট্র আবার গ্রীনল্যান্ড একশো মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়ার প্রস্তাব পাঠায় ডেনমার্কের কাছে। এর আগে আলাস্কার কিছু অঞ্চলের সঙ্গে গ্রীনল্যান্ড বিনিময়ের কথাও ভেবেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ