আজকের শিরোনাম :

লাদাখে একদিকে উৎসব, অন্যদিকে ক্ষোভ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১১:৩৭

ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুভাগ করে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। তা নিয়ে কাশ্মীরের মানুষদের মধ্যে যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে অনেক প্রতিবেদনই গত কয়েকদিনে বিবিসিসহ নানা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

কিন্তু যে লাদাখ অঞ্চলকে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য থেকে পৃথক করে দেওয়া হলো, সেখানকার মানুষ কী বলছেন? কী প্রতিক্রিয়া সেখানকার মানুষের? সেটা জানতেই আমরা পৌঁছিয়েছিলাম লাদাখ।

কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু আর লাদাখ- এই তিনটি অঞ্চল নিয়েই ছিল জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য। এর মধ্যে জম্মু এবং কাশ্মীর উপত্যকাকে নিয়ে একটি আর লাদাখকে আলাদা করে দিয়ে আরও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরি করেছে ভারত সরকার।

লাদাখের একটা অংশ- লেহ্-তে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ। আর ১৯৯৯ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য সুপরিচিত কার্গিল জেলার বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান। বৌদ্ধ অধ্যুষিত লেহ্-র মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই জম্মু কাশ্মীর রাজ্য থেকে আলাদা হতে চাইছিলেন। তাই যখন ভারতের পার্লামেন্ট তাদের সেই দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নেয়, তার পর থেকে সেখানে চলছে উৎসব। চিরাচরিত পোশাকে সেজে মানুষ সেখানে নাচ করছেন। লেহ্-র বাজারে যখন নাচ হচ্ছে, তখনই পাশের জেলা কার্গিলের মূল বাজারে হাজির নজিরবিহীন সংখ্যায় নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা।
একটু প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখলেই আটক করা হচ্ছে। কয়েকজনকে আমাদের সামনেই আটক করল পুলিশ।

ওখানকারই এক ব্যবসায়ী শাহনাজ ভার বিবিসিকে বলছিলেন, ‘এর আগে কার্গিল বাজারে একসঙ্গে এত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী আর জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের উপস্থিতি দেখি নি আমি। মানুষের মনে ক্ষোভ রয়েছে। শিক্ষিত যুবক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ বলছেন যে কারও সঙ্গে কথা না বলে কেন এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো!’

শহর থেকে দূরে, পাকিস্তানি সীমানার থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরের শেষ ভারতীয় গ্রাম লাতু-র বাসিন্দা আসগর আলি। তার ক্রিকেট প্রেম সর্বজনবিদিত। তাই তাকে ক্রিকেট চাচা বলে ডাকে সকলে। তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল যখন তিনি গ্রামের মাঠে ব্যাটিং করছিলেন।

দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেভাবে বলগুলোকে মেরে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাচ্ছিলেন, সেটা যেন কোনও একটা রাগের বহিঃপ্রকাশ!

পরে বলছিলেন, ‘বছর কুড়ি আগে যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ৪৫। সৈনিকরা আহত হয়ে পড়ে থাকত। আর আমি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনতাম। গ্রামের অনেকেই আহত সৈনিকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন। তারপরে সৈনিকদের পৌঁছিয়ে দিতাম তাদের ছাউনিতে। সবরকমভাবে বাহিনীকে সাহায্য করছিলাম। কিন্তু সেই কার্গিলের বাসিন্দাদের সঙ্গে সুবিচার করা হলো না এটা।’

কার্গিলের সিনিয়ার সাংবাদিক সাজ্জাদ কার্গিলী বলছিলেন, ‘লাদাখ অঞ্চল আবহমান কাল থেকেই সরাসরি কাশ্মীরের সঙ্গেই যুক্ত জোজিলা পাসের মাধ্যমে। বরফ যতক্ষণ না পড়ছে, ততক্ষণ কাশ্মীরের সঙ্গেই আমাদের মূল যোগাযোগ। যে কোনো প্রয়োজনে, তা খাবার মজুদ করা হোক বা অন্য কোনো দরকার, আমরা কাশ্মীরেই যাই।’

কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তে এখন কাশ্মীরকে লাদাখের থেকে পৃথক হয়ে যেতে হলো।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ