আজকের শিরোনাম :

ভারতের সুপারিশে শীর্ষ বীরের সম্মান পেয়েছিলেন যে পাকিস্তানি সৈনিক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০১৯, ১১:০৫

এ রকম ঘটনা খুব কমই হয়, যেখানে শত্রু সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে বাহাদুরি আর অসীম সাহসের জন্য সম্মান জানাচ্ছেন অন্য দেশের এক সেনা অফিসার, আবার সেই শত্রু দেশের কাছে সুপারিশও করছেন যাতে ওই সৈনিকের বীরত্বকে সম্মান জানানো হয়।

১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে এ রকমই এক ঘটনা ঘটেছিল। টাইগার হিলের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন, কর্নেল শের খাঁয়ের বীরের মতো লড়াই দেখে ভারতীয় বাহিনীও মেনে নিয়েছিল যে তিনি সত্যিই এক ‘লৌহপুরুষ’।

সেদিনের ওই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ব্রিগেডিয়ার এম এস বাজওয়া। ‘সেদিন যখন টাইগার হিলের লড়াই শেষ হয়েছিল, ওই পাকিস্তানি অফিসারের অসীম সাহসকে স্যালুট না করে উপায় ছিল না। আমি ’৭১-এর যুদ্ধেও লড়াই করেছি। কিন্তু কখনো পাকিস্তানি বাহিনীর কোনো অফিসারকে একেবারে সামনে থেকে লড়তে দেখিনি। অন্য পাকিস্তানি সৈনিকরা কুর্তা-পাজামা পরে ছিলেন, কিন্তু এই অফিসার একাই ট্র্যাক-সুট পরে লড়ছিলেন,’ স্মৃতিচারণ করছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া।

সম্প্রতি কার্গিল যুদ্ধের ওপরে ‘কার্গিল : আনটোল্ড স্টোরিজ ফ্রম দা ওয়ার’ [কার্গিল : যুদ্ধ ক্ষেত্রে না বলা কাহিনি] নামের একটি বই লিখেছেন রচনা বিস্ত রাওয়াত।

তিনি জানাচ্ছিলেন, ‘ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ পাকিস্তানি বাহিনীর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির সদস্য ছিলেন। টাইগার হিলের ৫টি জায়গায় তারা নিজেদের চৌকি তৈরি করেছিল। প্রথমে ভারতের ৮ নম্বর শিখ রেজিমেন্টকে ওই পাকিস্তানি চৌকিগুলো দখল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা ব্যর্থ হয়। তার পর ১৮ নম্বর গ্রেনেডিয়ার্সদেরও শিখ রেজিমেন্টের সঙ্গে পাঠানো হয়।’

‘তারা কোনওরকমে একটি চৌকি দখল করে। কিন্তু ক্যাপ্টেন শের খাঁ পাল্টা হামলা চালান পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে,’ জানাচ্ছিলেন রাওয়াত।

প্রথমবারের জবাবী হামলায় ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি বাহিনী। কিন্তু সেনা সদস্যদের আবারও জড়ো করে দ্বিতীয়বার হামলা চালান তিনি। যারা ওই লড়াইয়ের ওপরে নজর রাখছিলেন, সবাই বুঝতে পারছিলেন যে এটা আত্মহত্যার শামিল। সবাই বুঝতে পারছিল যে ওই মিশন কিছুতেই সফল হবে না, কারণ ভারতীয় সৈনিকরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল।

মৃতদেহের পকেটে চিরকুট
ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার কথায়, ‘ক্যাপ্টেন শের খাঁ বেশ লম্বা-চওড়া চেহারার ছিলেন। অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। আমাদের এক সৈনিক কৃপাল সিং আহত হয়ে পড়ে ছিলেন। হঠাৎই উঠে মাত্র ১০ গজ দূর থেকে একটা বার্স্ট মারেন। শের খাঁ পড়ে যান।’

সেই সঙ্গেই পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার জোর ধীরে ধীরে কমে আসছিল। ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার বলেন, ‘ওই লড়াইয়ের শেষে আমরা ৩০ জন পাকিস্তানি সৈনিককে দাফন করেছিলাম। কিন্তু আমি অসামরিক মালবাহকদের পাঠিয়ে সেখান থেকে ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের শবদেহ নিচে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করি। ব্রিগেড হেড-কোয়ার্টারে রাখা হয়েছিল তার দেহ।’

ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ে মরদেহ যখন পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হলো, তখন তার জামার পকেটে একটা ছোট্ট চিরকুট লিখে দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া। তাতে লেখা ছিল, ‘ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ অফ ১২ এন এল আই হ্যাজ ফট ভেরি ব্রেভলি এন্ড হি শুড বি গিভেন হিজ ডিউ’ [অর্থাৎ, ১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাকে সম্মান জানানো উচিত]।

ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া বলছিলেন, ‘যদি আমি তার শব নিচে না নামিয়ে আনতাম বা জোর করে তার দেশে ফেরত না পাঠাতাম, তা হলে তার নামই হয়তো কোথাও উল্লেখিত হতো না। তাকে পাকিস্তানের সব থেকে বড় সম্মান ‘নিশান-এ-হায়দার’ দেওয়া হয়েছিল, যেটা ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরম বীর চক্রের সমান।’

পাকিস্তানে যখন ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের দেহ পৌঁছিয়েছিল, তার পরে তার বড় ভাই আজমল শের বলেছিলেন, ‘আল্লাহর আশীর্বাদ, যে আমাদের শত্রু দেশেরও দয়া-মায়া আছে। কেউ যদি বলে তারা দয়া-মায়াহীন, আমার তাতে আপত্তি আছে। কারণ তারা ঘোষণা করেছে কর্নেল শের একজন হিরো।’
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ