আজকের শিরোনাম :

কঙ্গোর ইবোলা পরিস্থিতি নিয়ে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা

  বিবিসি

১৮ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪৩ | আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৯, ১২:০৬ | অনলাইন সংস্করণ

আফ্রিকার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে প্রাণঘাতী অসুখ ইবোলার প্রাদুর্ভাবকে একটি 'বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা' হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সংস্থাটি বলছে এটি এখন একটি "আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য সংকট।"

জেনিভাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গিব্রাইয়াসুস এই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

তবে সীমান্ত বন্ধ করে দেবার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা হয়নি।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে তার সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কবার্তা হিসেবে ঘোষণাটি এসেছে। এমন সতর্কবার্তা এর আগে এ পর্যন্ত চারবার দিয়েছে সংস্থাটি।

তার একটি ছিল পশ্চিম আফ্রিকাতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলা ইবোলার প্রাদুর্ভাবে এগারো হাজার মানুষের মৃত্যুর পর।

ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে ইবোলা সংক্রমণে এ পর্যন্ত ১৬০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান মি. গিব্রাইয়াসুস সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "বিশ্ববাসীর নজর দেয়ার সময় এসেছে।" এই ঘোষণার ফলে সেটি হয়ত কিছুটা সম্ভব হবে বলে তিনি নিজেই মন্তব্য করেছেন।

কতটা ভয়াবহ এই প্রাদুর্ভাব?

এবার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে যে ইবোলা ভাইরাসের যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে সেটি ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ।

এর শুরু ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে। দেশটির দুটি প্রদেশে প্রথম এটি দেখা দেয়।

এ পর্যন্ত আড়াই হাজার ব্যক্তি এতে আক্রান্ত হয়েছেন।

যাদের মধ্যে তিনভাগের দুইভাগই মারা গেছেন। প্রতিদিন ১২ জন করে নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

ইবোলার লক্ষণ কী?

ইবোলা একটি ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হলে খুব হঠাৎ করে জ্বর দেখা দেয়। খুব দুর্বল লাগে।

মাংসপেশি খুব ব্যথা হতে থাকে। গলায়ও খুব ব্যথা হয়।

এর পরবর্তী ধাপ হল বমি ও ডাইরিয়া দেখা দেয়। শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তপাত হতে থাকে।

সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির কেটে যাওয়া ত্বক, তার মুখ, নাক, বমি, রক্ত, মল বা শরীরের অন্য ধরনের তরল কোন পদার্থের সংস্পর্শে এলে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।

কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?

আফ্রিকাতে নানা দেশে চলমান রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংঘাতের কারণে ইবোলার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধু এ বছরের জানুয়ারি থেকেই ইবোলা চিকিৎসা কেন্দ্র বা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর ১৯৮টি হামলা হয়েছে যাতে সাতজন নিহত হয়েছে এবং ৫৮ জন আহত হয়েছে।

আর একটি সমস্যা হল স্বাস্থ্যকর্মীদের অবিশ্বাস করছেন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অনেকেই।

আর চিকিতসার সময় অসুস্থ ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখা হয়, যার ফলে তারা চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাতে সংক্রমিত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

সংক্রমিত হয়েছেন এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়াও একটি বড় সমস্যা।

এমন অনেক রোগীও পাওয়া গেছে যারা কখনো কোন ইবোলা রোগীর সংস্পর্শ আসেননি।

চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা এমএসএফ-এর কর্মকর্তা ট্রিশ নিউপোর্ট বলেছেন, "প্রাদুর্ভাব শুরুর এক বছর ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নত এখনো দেখা যাচ্ছে না।"

তিনি আরও বলছেন, "এখানে দীর্ঘ সহিংসতা আর সংঘাতের কারণে জটিল এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার কারণে বিদেশী কাউকে অবিশ্বাস করার একটা প্রবণতা রয়েছে।"

এটি কি অন্যান্য দেশেও ছড়াতে পারে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে এটি ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

উগান্ডায় ইতিমধ্যেই রোগটি কয়েকজনের মধ্যে সনাক্ত হয়েছে।

ঝুঁকিতে রয়েছে রুয়ান্ডা কারণ দেশটির সাথে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর সীমান্তবর্তী অঞ্চল গোমা'তে ইবোলা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তবে এখনই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

এই রোগের প্রতিষেধক রয়েছে

রোগটির প্রতিষেধক রয়েছে এবং সেটি ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর।

দেড় লাখের বেশি মানুষকে সেই প্রতিষেধক দেয়াও হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জনগোষ্ঠীর সকলকে সেটি দেয়া হয়নি।

শুধুমাত্র যারা কোন ইবোলা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন অথবা তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদেরকে ওই প্রতিষেধক দেয়া হয়েছে।

পশ্চিম আফ্রিকাতে এর আগেরবারের মহামারী যখন চলছিলো তখন এই রোগের প্রতিষেধক প্রস্তুত হয়েছে।

এবারের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সবার জন্য সেটি সহজলভ্য করা হয়েছে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ