আজকের শিরোনাম :

হংকংয়ে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কে এই জাশুয়া উং?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০১৯, ১১:২৩

জাশুয়া উং হংকংয়ের ২২ বছর বয়সী এক ছাত্র। তিনি হংকংয়ের প্রবল বিক্ষোভের একজন কেন্দ্রীয় আন্দোলনকারী এবং গতকালই মাত্র সে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে।

কারাগার থেকে বের হওয়ার পরই তিনি জানান, বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন বিক্ষোভে তিনিও যোগ দিতে যাচ্ছেন ।

এই বিল অনুসারে অপরাধীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণ করার বিধান রয়েছে। হংকংয়ের বেইজিংপন্থি নেতা ক্যারি লামের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

যদিও লাম শনিবারই ওই বিল স্থগিত করেছেন এবং এটি বিতর্ক জন্ম দেয়ায় ক্ষমা চেয়েছেন, তবে বিক্ষোভ নিরসনে কোনো লক্ষণ নেই।

জাশুয়া উং কে?
২০১৪ সালের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন যা আমব্রেলা মুভমেন্ট হিসেবে পরিচিত হয় সেই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

সেই আন্দোলনে দাবি ছিল, বেইজিংপন্থি নেতাদের তালিকা থেকে বেইজিংয়ে অনুমোদিত কোনো নেতার বদলে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রার্থী ওং এবং অন্যান্য ছাত্র নেতারা সেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন।

তখন ৭৯ দিন ধরে হাজার হাজার মানুষ হংকংয়ের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক সড়কে ক্যাম্প গেড়ে বসে এবং শহরটি স্থবির হয়ে পড়ে।

ছাত্র বিক্ষোভকারীরা, কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ব্যাপ্টিস্ট মন্ত্রীদের সাথে পরবর্তী সময় বেআইনি সমাবেশের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে বন্দি হন।

বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে উংকে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দুটি আলাদা কারাদ-াদেশ দেয়া হয়; কিন্তু দণ্ডাদেশের মেয়াদ কমিয়ে দেয়ার পর সোমবার (১৭ জুন) সে মুক্তি পায় ।

সোমবার কারাগার ছাড়ার পরই লামের পদত্যাগের দাবি তুলে উং বলেছেন, ‘ক্যারি লামকে সরে যেতে হবে। হংকংয়ের নেতা হওয়ার উপযুক্ত নন তিনি।’

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লামের অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ঢেউ ২০১৪ সালের আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ওং ইতোমধ্যেই বলেছেন যে, তিনি এ বিক্ষোভে যোগ দেবেন।

জাশুয়া উং বলেন, ‘এখন এটাই সময় জোরালো কণ্ঠে আমাদের অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরার।’

তিনি মনে করেন এ প্রত্যর্পণ আইনের সংশোধন হংকংয়ের মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকারকে দমন করার চেষ্টা করছে। ‘আমি নাগরিক অবাধ্যতা এবং যে কোনধরনের সরাসরি অ্যাকশন সমর্থন করি কারণ এই প্রত্যর্পণ আইনের সংশোধন আমাদের মৌলিক মানবিক অধিকারকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।’

যখন নাগরিকরা নির্দিষ্ট কিছু আইনকে মানতে অস্বীকৃতি জানায় তখন সে পরিস্থিতিতে বোঝানো হয় সিভিল ডিসওবিডিয়েন্ট হিসেবে।

বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে উং বলেন, ‘আমাদের দাবি এ আইনের সাময়িক স্থগিতাদেশের পরিবর্তে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। আদৌ কেন প্রত্যর্পণ আইন নয়।’

জাশুয়া উং বলেন, ‘আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি তা হলো, নাগরিক আইন অমান্য করা এবং সরাসরি অ্যাকশনের মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্বকে বোঝানো যে হংকংয়ের মানুষ মুখ বুজে থাকবে না।’

তিনি বিশ্বাস করেন, কর্তৃপক্ষে পরবর্তী ধরপাকড় অভিযান এ বিক্ষোভকারীদের থামিয়ে রাখতে পারবে না। ‘পুলিশ যখন হংকং এ টিয়ার গ্যাস, পিপার স্প্রে ছোড়ে কিংবা কোনো আন্দোলনকারীকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করে তখন তা একটি পরিষ্কার বার্তা দেয়: সরকার, শাসকগোষ্ঠী, সমগ্র একটি নাগরিক প্রজন্মকে সাধারণ বাসিন্দা থেকে বিদ্রোহী হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’

কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের দাঙ্গাবাজ হিসেবে অভিহিত করায় তীব্র সমালোচনা করেছেন উং।

তিনি বলেন, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে নিগৃহীত করেছে, এমনকি ক্যারি লাম বিক্ষোভকে দাঙ্গা বলে দাবি করেছেন। আমরা তাকে ক্ষমা চাইতে আহ্বান করছি। গত কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ ছিল আইনের প্রতি নাগরিক অবাধ্যতা, দাঙ্গা নয়।’

হংকংয়ের সামনে এখন কী?
আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন ওং আরও মানুষের সমাগমের মাধ্যমে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ক্যারি লামের ওপর চাপ বাড়াবেন।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে আমরা মূল্য দিচ্ছি পিপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাসের মোকাবেলা করে, এমনকি রক্তপাতও।’

শিগগিরই বিশাল জনসমাগমের প্রত্যাশার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। ‘আমার বিশ্বাস এখনো পর্যন্ত যে সমাবেশ কয়েছে তা সবচেয়ে বিশাল বলা যাবে না। ভবিষ্যতে দশ লাখের বেশি হংকং বাসিন্দা আবারও রাস্তায় নেমে আসবে।’

তিনি বলেন, হংকংয়ের জন্য চূড়ান্ত সমাধান হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের নেতা স্বাধীনভাবে নির্বাচনের অধিকার তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

এই দাবিতেই আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি এবং এজন্যই আমরা গণতন্ত্রের দাবিতে লড়াই করছি।

আয়োজকরা বলছেন, ২০ লাখের বেশি মানুষ রবিবার ওই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে, পুলিশের ভাষ্যমতে সেই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার।

যদিও শনিবার বিলটি স্থগিত করেন লাম।

এ আন্দোলন ২০১৪ সালের আমব্রেলা মুভমেন্টকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অনেক মানবাধিকার গ্রুপের মতে, পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ এসেছে।

হংকং ও চীনের সম্পর্ক
১৯৯৭ সালে চীনের কাছে সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত ১৮৪১ সাল থেকে ব্রিটিশ কলোনি ছিল হংকং। বর্তমানে ‘এক দেশ দুই পদ্ধতি’ নীতির অধীনে এটি চীনের অংশ।

হংকংয়ের বেশিরভাগ লোক জাতিগতভাবে চীনা বংশোদ্ভূত। চীনের মূল ভূ-খণ্ডে নেই এমন স্বাধীনতা হংকংয়ের জনগণ এখনো উপভোগ করছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, তা হুমকির মুখে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রত্যর্পণ বিলটি পাস হলে হংকং পরিণত হবে আরেকটি চীনা নগরে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ