আজকের শিরোনাম :

মিমি-নুসরাতের কি পার্লামেন্টে শাড়ি পরা উচিত ছিল?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০১৯, ২১:০৪

তারা দুজনেই টালিগঞ্জের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা। দুজনেই কেরিয়ারের মধ্যগগনে, পরস্পরের ভাল বন্ধু - এবং কয়েক সপ্তাহ আগে রাজনীতিতেও একই সঙ্গে পা রেখেছেন, একই দলের হয়ে।

এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র চমকপ্রদ উত্থানের মধ্যেও এবারে তৃণমূলের হয়ে প্রায় তিন-সাড়ে তিন লাখ ভোটের বিপুল ব্যবধানে জিতে সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই দুই অভিনেত্রী - মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহান।

কিন্তু এখন তারা নতুন করে আবার খবরের শিরোনামে, কারণ ভারতের পার্লামেন্টের সামনে পশ্চিমা পোশাকে তোলা তাদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ধুন্ধুমার ফেলে দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে সদ্য বিপুল ভোটে লোকসভায় জিতে আসা মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহানের ওই ছবিগুলোকে অনেকেই যেমন 'ট্রোল' করছেন, তেমনি তারা আবার অনেকের প্রশংসাও কুড়োচ্ছেন।

বিজেপি-র শাড়ি-পরিহিত অন্য অভিনেত্রী এমপি-দের সঙ্গেও তাদের পোশাকের তুলনা চলছে।

মিমি চক্রবর্তী নিজে অবশ্য বিবিসিকে বলেছেন, তিনি এসব সমালোচনা গায়ে মাখছেন না - বিজেপির আর এক এমপি, অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলিও জানাচ্ছেন পার্লামেন্টে কোনও ড্রেস কোড থাকা উচিত নয় বলেই তার বিশ্বাস।

এমপি হওয়ার পর এ সপ্তাহেই মিমি ও নুসরাত প্রথম দিল্লিতে পার্লামেন্ট চত্বরে পা রেখেছেন।

কিন্তু তারপর পার্লামেন্টের সামনে দুজনের যে ছবিগুলো টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে তারা পোস্ট করেছেন, তা নিয়েই এখন বিতর্ক তুঙ্গে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ তাদের জ্ঞান দিচ্ছেন, 'এটা ফিল্মি সেট নয় যে ওভাবে পোজ দেবেন' - কেউ আবার বলছেন ওরা ভুলে গেছেন 'এটা দেশের পার্লামেন্ট, কলকাতার নিক্কো পার্ক নয়'।

মিমি চক্রবর্তী নিজে অবশ্য এদিন বিবিসিকে বলছিলেন তিনি এই সব 'ট্রোল'দের এতটুকুও আমল দিচ্ছেন না।

তার কথায়, "আমি খুব ভাল করে জানি আমার কাজটা কী, আর আমি কী করতে যাচ্ছি।"

"আর মিডিয়ারও বলিহারি, এই ট্রোলদের এত গুরুত্ব দিয়ে মাথায় তোলারই বা দরকারটা কী বুঝতে পারি না!"

"আসলে আমি নেগেটিভিটি-কে কখনওই প্রশ্রয় দিই না। আমি বরং এটাই দেখতে চাই, বহু মানুষ আমাদের সাপোর্টও করছেন - আর তার মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো গুণী সাহিত্যিকও আছেন।"

"কাজেই আমি বিশ্বাস করি না আমরা কোনও ভুল করেছি।"

"কাউকে না কাউকে তো পরিবর্তনের ধারাটা আনতেই হবে, ধরে নিন আমরাই না-হয় সেটা আনলাম?", বলছেন তিনি।

মিমি-নুসরাতকে যারা আক্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে বলিউডের নামী পরিচালক রামগোপাল ভার্মা যেমন আছেন, তেমনি আছেন বিজেপির সমর্থক বলে পরিচয় দেওয়া অনেকেই।

পশ্চিমবঙ্গ থেকেই জিতে আসা বিজেপির নতুন এমপি ও অভিনেত্রী লকেট চ্যাটার্জির শাড়ি-পরা ছবি পোস্ট করে তারা অনেকেই মিমি-নুসরাতকে উপদেশ দিচ্ছেন, পার্লামেন্টে 'সংস্কৃতিবান ভারতীয় নারী'দের কী ধরনের পোশাক পরে আসা উচিত।

বিজেপিরই আর এক পার্লামেন্টারিয়ান ও অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলি কিন্তু এই বিতর্কে তার প্রতিপক্ষ দলের দুই এমপি-র পাশেই দাঁড়াচ্ছেন।

রূপা গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "না, না ওরা বাচ্চা মেয়ে - ওদের পোশাক কিন্তু আমার ভারি পছন্দ হয়েছে। দুজনেই ওয়েস্টার্ন পরেছে - কিন্তু ফর্ম্যাল ড্রেস পরেছে। আমার অন্তত খুব ভাল লেগেছে ওদের পোশাক।"

"পোশাক নয়, তবে যেটা নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলছে বলে মনে হয়, সেটা হল ওদের জেসচার।"

"পার্লামেন্টের সামনে ওরকম হাত উঠিয়ে ছবি তোলানোটা, বিশেষ করে ওদের একজনের, অনেকের বোধহয় ভাল লাগেনি।"

"তবে তার চেয়ে বড় কথা, ওদের ভদ্রলোকের মতো দেখতে লাগছে।"

"ওয়েস্টার্ন, ফর্ম্যাল ড্রেস পরে পার্লামেন্টে আসা তো কোনও অপরাধ হতে পারে না। জেসচারটা অন্যরকম হলে আরও ভাল হত - তবে আমার তো খুব মিষ্টি, খুব সুন্দর দেখতে লেগেছে।"

"ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাও বিশ্বাস করি স্কুলের বাইরে আর কোথাও ড্রেস কোড বা পোশাকবিধি থাকাই উচিত নয়। পার্লামেন্টেও না। আর দেখবেন, শেষ পর্যন্ত এই দুজনই পার্লামেন্টে খুব ভাল পারফর্ম করবে বলেই আমার বিশ্বাস", বলতে এতটুকুও দ্বিধা নেই রূপা গাঙ্গুলির।

ভারতীয় পার্লামেন্টে এর আগেও রেখা, হেমা মালিনী, জয়াপ্রদা, শাবানা আজমি, জয়া ভাদুড়ির মতো ডাকসাইটে অভিনেত্রীরা এসেছেন - তবে তারা সবাই সব সময় শাড়ি পরেই অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।

শিবসেনার মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা চর্তুবেদী কিন্তু মিমি নুসরাতের পোশাকের তারিফ করে বলেছেন, "এখন সময় বদলাচ্ছে - কাজেই পার্লামেন্টে ওই দুজনের আধুনিক পোশাক আমার খুবই ভাল লেগেছে।"

কিন্তু অনেকের আবার মত হল, পার্লামেন্ট যেহেতু একটা সিরিয়াস আলোচনার কেন্দ্র - সেখানে শাড়ির মতোই শালীন ও মার্জিত পোশাকই একমাত্র মানানসই।

মিমি চক্রবর্তী অবশ্য আদৌ একমত নন।

তিনি বলছিলেন, "দেখুন, যারা ওভাবে ভাবেন তাদের ভাবনাচিন্তা আমি বদলাতেও পারব না, আবার তাদের কথার উত্তরও দিতে যাব না।"

"কিন্তু আমার যে পরিবেশে বেড়ে ওঠা, যা পড়াশুনো বা শিক্ষাদীক্ষা তাতে এটুকু বুঝি যারা লোকে কী পরে গেল, স্টেজে হাসল কি না, কী বলল এসব দিয়ে মানুষকে 'জাজ' করেন তাদের নিয়ে কথা বলাই বোধহয় উচিত নয়।"

"পাশাপাশি এটাও বলব, একজন পুরুষ এমপি টি-শার্ট আর জিনস পরে পার্লামেন্টে গেলে তা নিয়ে তো কোনও কথা হয় না? অথচ একজন মেয়ে এমপি সেটা পরে গেলেই গেল গেল রব ওঠে!"

"নারীদের ক্ষমতায়ন, নারীদের সমানাধিকার নিয়ে এত বড় বড় কথা বলা হয়, কিন্তু এসব দেখেশুনে মনে হয় আমরা বোধহয় সে দিকে এক পা-ও এগোতে পারেনি", হতাশা আর ক্ষোভ ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে।

দিল্লিতে টপ-জিনস পরে পার্টিতে যোগ দেওয়ার জন্য এর আগে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে।

এখন পার্লামেন্টে নারী এমপি-দের কী ধরনের পোশাককে রুচিশীল বলা যাবে, অধিবেশন শুরুর আগেই সে বিতর্ক উসকে দিলেন সদ্য রাজনীতিতে পা-রাখা দুই বাঙালি অভিনেত্রী - যাদবপুর ও বসিরহাট যাদের জিতিয়ে দিল্লি পাঠিয়েছে। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ