কারা এই ভেনেজুয়েলার জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৪৯

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ঘোষণা করেছেন, সে দেশে বেসামরিক জনতাকে নিয়ে গঠিত যে রিজার্ভ সেনাবাহিনী আছে তাতে এ বছরের মধ্যেই আরও দশ লক্ষ বাড়তি সদস্য নিয়োগ করা হবে।

গত শনিবার তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এই ন্যাশনাল মিলিশিয়ার কুড়ি লক্ষ সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত তিরিশ লক্ষ করা হবে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট উগো চ্যাভেজ সে দেশে এই মিলিশিয়া বাহিনী প্রথম তৈরি করেছিলেন - যার অনেক সদস্যর বয়সই পঞ্চাশেরও বেশি।

ভেনেজুয়েলার মিলিশিয়ার এই প্রবীণ সদস্যরা সবাই একবাক্যে বলছেন, এবারের লড়াইয়ের জন্য তারা সবাই প্রস্তুত। যুদ্ধ হলে হোক, তারা মোটেই যুদ্ধকে ভয় পান না।

এটাই হল ভেনেজুয়েলার জাতীয় মিলিশিয়া বা রিজার্ভ সেনাবাহিনী - সরকারি পরিসংখ্যান বলছে এখনই যার মোট সদস্য সংখ্যা কুড়ি লাখের বেশি। ফলে সশস্ত্রবাহিনীর বিভিন্ন শাখার মধ্যে তারাই বৃহত্তম।

তারা নিয়মিত কুচকাওয়াজ করেন, এবং দেশ আক্রান্ত হলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলে তারা শপথও নিয়েছেন।

বাহিনীর রিজার্ভ সেনা, ৫৩ বছর বয়সী মহিলা ডরিস বলছিলেন, "আমাদের দেশে বাইরে থেকে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ হলে দেশের লোককে রক্ষা করতে আমাদের মিলিশিয়া এগিয়ে আসবে।"

"কোনও বিদেশি রাষ্ট্র এসে আমাদের অপদস্থ করে যাবে, তা আমরা হতে দেব না। কারণ আমরা ভেনেজুয়েলান, আর এই দেশটা আমাদের।"

২০০৭ সালে যে ধরনের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে তখনকার প্রেসিডেন্ট উগো চ্যাভেজ এই বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, সম্প্রতি ঠিক সেই ধরনের হামলার কথাই শোনা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, "ভেনেজুয়েলা কিন্তু খুব দূরে নয় - সেখানকার লোকজন দুর্দশায় পড়েছে, মারা যাচ্ছে।"

"আমরা ভেনেজুয়েলার জন্য অনেকগুলো রাস্তার কথাই ভাবছি - আর তার মধ্যে সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও একটা।"

৬২ বছর বয়সী রিজার্ভিস্ট আলফ্রেডো মোরালেস কিন্তু মার্কিন হামলা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নন।

তিনি বলছিলেন, "আমরা অন্যরকম যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের বাহিনীতে অনেক দক্ষ স্নাইপার বা চোরাগোপ্তা বন্দুকবাজ আছে।"

"কিউবানদের কাছ থেকে, এবং চীনা ও নিকারাগুয়ানদের কাছ থেকে আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণও নিচ্ছি।"

এই বাহিনীর অনেকেরই বয়স পঞ্চাশের বেশি, কিন্তু তাতে কোনও পরোয়া নেই এই রিজার্ভিস্টদের।

প্রবীণা ডরিস যেমন বলছিলেন, "কম বয়সে আমি সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুযোগ পাইনি। ফলে এখন এই বাহিনীতে যোগ দিতে পেরে আমি খুব গর্বিত।"

"প্রেসিডেন্ট চ্যাভেজ এর মাধ্যমে দেশের বয়স্ক নাগরিকদের মর্যাদা দিয়েছেন, যাদের আগে কেউ পাত্তা দিত না।"

ভেনেজুয়েলার সামরিক প্যারেডগুলোতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে নিয়মিতই হাজির থাকতে দেখা যায়।
সাধারণ মানুষজনও এই বাহিনীকে নিয়ে বেশ গর্বিত।

তারা কেউ বলছেন, বাহিনীর কুচকাওয়াজ দেখলে তাদের গর্বে বুক ভরে ওঠে - কারণ তারা তো এ দেশেরই নারী-পুরুষ, এ দেশের যোদ্ধা।

কেউ আবার বলছেন, "এরাই ভেনেজুয়েলার আসল শক্তি!"

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলা থেকে নজর সরানোর হুমকিও দিচ্ছেন অনেকেই। আমেরিকাকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তারা বলছেন, তাদের সাম্রাজ্যবাদী বুটের পায়ের ছাপ যেন এ দেশে না-পড়ে!

তবে ভেনেজুয়েলার অনেকেই আবার বিশ্বাস করেন, এই মিলিশিয়া বাহিনী যত না দেশের সুরক্ষার জন্য - তার চেয়েও বেশি হয়তো নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে বাঁচানোর জন্য। আর সে জন্যই বোধহয় প্রেসিডেন্ট ফের এই বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি করছেন। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ