আজকের শিরোনাম :

আসাঞ্জের ওপর যে কারণে ক্ষেপেছে ইকুয়েডর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:০৬

উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জ ২০১২ সাল থেকে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে বসবাস করছিলেন। ধর্ষণের অভিযোগে সুইডেনে একটি মামলা এড়াতে আসাঞ্জ ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন।

তার দিক থেকে এ আশঙ্কাও ছিল যে ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে সুইডেনে পাঠানোর পর সেখান থেকে তাকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া হতে পারে। লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসের বাইরে সবসময় পুলিশ অবস্থান করত যাতে আসাঞ্জ সেখান থেকে বের হলেই তাকে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু ৭ বছর পর ইকুয়েডর কেন আসাঞ্জকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দিল।

আসাঞ্জের ওপর থেকে ইকুয়েডর কেন সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে? লন্ডনে ইকুয়েডরের রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে দূতাবাসে আমন্ত্রণ জানিয়ে জুলিয়ান আসাঞ্জকে তাদের হাতে তুলে দেন।

এর আগে ইকুয়েডর সরকার আসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করে। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো বলেছেন, জুলিয়ান আসাঞ্জের আচার-ব্যবহারের কারণে তাদের ধৈর্যের সীমা একেবারে শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে।

সম্প্রতি ভ্যাটিকান সম্পর্কিত কিছু দলিলপত্র ফাঁস করে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এসব দলিলপত্র ফাঁস করা হয়।

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এসব কাগজপত্র ফাঁস করার মাধ্যমে বিশ্ব নিশ্চিত হয়েছে যে উইকিলিকসের সঙ্গে আসাঞ্জের এখনো সম্পর্ক আছে এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করছে।’

প্রেসিডেন্ট আরও অভিযোগ করেন, আসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসের নিরাপত্তা ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছিল। এ ছাড়া দূতাবাসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখা এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন আসাঞ্জ।

ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানেও তিনি বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। সে বক্তব্যের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, আসাঞ্জ দূতাবাসের ভেতরে স্কেটবোর্ডিং করতেন এবং ফুটবল খেলতেন। এ নিয়ে তিনি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অবজ্ঞা করেছেন।
ইকুয়েডর দূতাবাস ৭ বছর তাকে আশ্রয় দিলেও জুলিয়ান আসাঞ্জ কোনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন না। বরং ইকুয়েডর দূতাবাসের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে তার ওপর নজরদারি করছেন।

ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান আরও বলেছে, জুলিয়ান আসাঞ্জকে দূতাবাসের ভেতরে রাখার জন্য ইকুয়েডর সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ২০১২ থেকে ৭ বছরে আসাঞ্জের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৬০ লাখ ডলার খরচ করতে হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে তার চিকিৎসা, খাবার এবং জামা-কাপড় বাবদ। এ ছাড়া জুলিয়ান আসাঞ্জের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবার বিষয়টি ইকুয়েডর দূতাবাসের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়েছিল। কারণ দূতাবাসের ভেতরে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ব্রিটিশ সরকার লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে আসাঞ্জকে এমন কোনো দেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে না যেখানে তাকে নির্যাতন করা হতে পারে অথবা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে।

আসাঞ্জ গ্রেফতার হবার মাত্র একদিন আগেই উইকিলকস বলেছে, তাদের সহ-প্রতিষ্ঠাতার লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসের ভেতরে ব্যাপক গুপ্তচরবৃত্তি করেছে।

দূতাবাসের ভেতরে আসাঞ্জ কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না- এসব নিয়ে ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ এবং জুলিয়ান আসাঞ্জের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছিল।

তবে দূতাবাসের ভেতরে ঠিক কী ঘটেছে সেটি পরিষ্কার নয়। তবে এ নিয়ে জুলিয়ান আসাঞ্জের দিক থেকে ভিন্ন দাবিও আছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ