মেয়ের ধর্ষণকারীকে হত্যা করে ‘সিংহী মা’ হলেন যে নারী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:০২

নকুবঙ্গা কাম্পি দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিচিত হয়ে উঠেছেন একজন ‘লায়ন মামা’ অর্থাৎ ‘সিংহ মা’ হিসেবে। তার মেয়ের তিন ধর্ষণকারীর একজনকে হত্যা এবং বাকি দুজনকে মেরে আহত করার পর লোকজন তাকে এভাবেই ডাকতে শুরু করে।

এ ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল, কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের কারণে তার বিচার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে এখন তিনি তার মেয়ের সেরে ওঠার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করার সময় পেয়েছেন।

নকুবঙ্গা কাম্পি কাছে যখন ফোনটা হলো তখন মধ্যরাত। ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। রাতে বেজে উঠলো। ফোনের ওপাশে তার মেয়ে সিফোকাজি। নকুবঙ্গার কাছ থেকে ৫০০ মিটার দূরে। সিফোকাজি তার মাকে জানালেন যে তিনজন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে এবং তাদের তারা সবাই বেশ ভালো মতোই চেনে।

খবরটা শুনে নকুবঙ্গা প্রথমেই তার মেয়েকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন। কিন্তু ওপাশ থেকে তিনি কোনো সাড়া পেলেন না। মা নকুবঙ্গা জানতেন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন কেইপ প্রদেশের প্রত্যন্ত এই গ্রামটিতে পৌঁছাতে তাদের অনেক সময় লাগবে।

সিফোকাজি ভেবেছিলেন এ রকম একটা সময়ে সাহায্যের জন্য হয়তো তার মা-ই একমাত্র আছেন, যিনি এগিয়ে যেতে পারেন।

নকুবঙ্গা বলেন, ‘আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি যেতে বাধ্য হলাম কারণ সে তো আমারই মেয়ে। আমি ভাবছিলাম যখন আমি পৌঁছাব তখন হয়তো দেখব সে মরে পড়ে আছে। কারণ সে তো ধর্ষণকারীদের চিনত। ওই লোকগুলো যেহেতু তাকে চেনে, সে কারণে ওরা নিশ্চয়ই আমার মেযেকে মেরে ফেলত- যাতে সে ধর্ষণের ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে না পারে।’

সিফোকাজি কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা করতে ওই গ্রামেরই আরেকটি বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তার বন্ধুরা তাকে একা রেখে বাড়ির বাইরে চলে যায়। রাত দেড়টার দিকে আশেপাশের আরেকটি বাড়ি থেকে তিনজন মাতাল পুরুষ এসে তাকে আক্রমণ করে।

নকুবঙ্গা যে বাড়িতে থাকেন তাতে বেডরুম ছাড়াও আছে আরো দুটো ঘর। ঘুম থেকে ওঠে তিনি কিচেনে গিয়ে সেখান থেকে একটি ছুরি হাতে নিলেন।

‘ছুরিটা আমি নিয়েছিলাম আমার নিজের জন্য। রাতের অন্ধকারে যখন রাস্তা দিয়ে ওই বাড়িতে হেঁটে যাবো, ভেবেছিলাম ওটা আমার জন্য নিরাপদ হবে না। খুব অন্ধকার ছিল বাইরে। মোবাইল থেকে টর্চের আলো জ্বালিয়ে পথ দেখে দেখে আমাকে যেতে হয়েছিল।’

নকুবঙ্গা যখন ওই বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছালেন তখন তিনি মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলেন। বাড়িটির বেডরুমে ঢোকার পর মোবাইল ফোনের টর্চের আলোতে তিনি দেখলেন সেই ভয়াবহ দৃশ্য- তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হচ্ছে।

‘খুব ভয় পেয়ে যাই। কোনো রকমে দরজার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম তারা ওখানে কী করছে। আমাকে দেখে তারা আমার ওপর আক্রমণ চালাতে ছুটে এলো। ঠিক ওই মুহূর্তে আমার নিজেকে বাঁচানোর কথা মনে হয়েছিল।’

তার পর কী কী হয়েছিল নকুবঙ্গা সে বিষয়ে আর বিস্তারিত বলতে চাইলেন না।

এই মামলার বিচারের সময় বিচারক আদালতে বলেছিলেন, ‘নকুবঙ্গার সাক্ষ্য থেকে বোঝা যায় যে তিনি কতোটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। কারণ তিনি দেখতে পেলেন যে তার মেয়েকে তার চোখের সামনে ধর্ষণ করা হচ্ছে।’

‘তিনি বলেছেন যে তিনজন পুরুষের একজন তার মেয়েকে ধর্ষণ করছিল, আর দু'জন প্যান্ট খোলা অবস্থায় পাশেই দাঁড়িয়েছিল। তারা অপেক্ষা করছিল তাদের পালা কখন আবার আসবে।’

বিচারক এম্বুলেলো জলওয়ানা বলেন, ‘তিনি যে খুব ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন সেটা বোঝা যায়।’


এটা পরিষ্কার যে ওই পুরুষরা যখন নকুবঙ্গাকে আক্রমণ করে তখন তিনিও তার ছুরি দিয়ে পাল্টা আঘাত করেছিলেন। যখন তারা পালাতে উদ্যত হয় তখন তিনি ছুরি মারেন।

তাদের একজন জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ধর্ষণকারীদের দুজন গুরুতর আহত হয় এবং অন্যজন মারা যায়।

ওই লোকগুলো কতটা আহত হয়েছিল নকুবঙ্গা সেটা দেখার জন্য ওই বাড়িতে আর অবস্থান করেননি। বরং তার মেয়েকে নিয়ে চলে যান কাছেই এক বন্ধুর বাড়িতে।

পুলিশ এসে নকুবঙ্গাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো স্থানীয় একটি পুলিশ স্টেশনে। সেখানে একটি সেলে তাকে বন্দি করে রাখা হলো।

নকুবঙ্গার আইনজীবী বুলে টনিস বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ পর তিনি যখন তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, মনে হয়েছিল তারা জীবনের হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাদের দারিদ্র এতটাই প্রকট যে তারা ভাবছিল একজন জেলখানায় চলে গেলে আরেকজনের তখন কী হবে। তার পাশে তো দাঁড়ানোর কেউ থাকবে না। বিচার ব্যবস্থা তাদের জন্যে- যাদের কাছে অর্থ আছে।’

তিনি যখন মা ও মেয়ের সাথে কথা বলছিলেন তখন তারা ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। তার মনে হলো ওই ঘটনা যেন তাদের মুখের কথাও কেড়ে নিয়েছে।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ