আজকের শিরোনাম :

ভারতে বিজেপি বধের পথ খুঁজতে কলকাতার মঞ্চে বিরোধীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:০১ | আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:২২

ভারতের আসন্ন নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্য নিয়ে কংগ্রেস সহ কুড়িটিরও বেশী বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ শনিবার কলকাতায় একসাথে এক মঞ্চে উঠে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

কয়েক লক্ষ মানুষ হাজির হয়েছিলেন তাদের কথা শুনতে।

কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ডাকা ঐ জনসভায় প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী, নানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শক্তিশালী নেতা সহ ভারতের শীর্ষ বিরোধী দলীয় নেতারা হাজির হয়েছিলেন।

এই জোট বাঁধার প্রচেষ্টাটা শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে, নানা উপলক্ষ্যে বিরোধী নেতা নেত্রীরা মিলিতও হয়েছেন, কিন্তু এতজন শক্তিশালী বিরোধী নেতা কয়েক লাখ মানুষের সামনে কোনও জনসভায় এর আগে হাজির হন নি।

সিনিয়ার সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিষ মৈত্র বিবিসিকে বলেন, "এর আগেও জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে অ-কংগ্রেসী নেতাদের কনক্লেভ হয়েছে কলকাতায়। কিন্তু স্বাধীনতার পরে এতজন শীর্ষ বিরোধী দলীয় নেতা কোনও সভায় হাজির হয়েছেন, একটি মাত্র এজেন্ডাকে সামনে রেখে, এ ইতিহাস বোধহয় নেই।"

মাসখানেক ধরেই এই সভার প্রস্ততি চলছে - একদিকে যেমন চলেছে প্রচার, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জী নানা রাজ্যে বিজেপি বিরোধী দলনেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই সভায় তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।

দুপুরের দিকে সভামঞ্চে দেখা গেল যে দেশের এমন কোনও প্রান্ত নেই, যেখান থেকে বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলের নেতারা হাজির হন নি।

এসেছিলেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের দুজন শীর্ষ নেতাও। আর গুরুত্বপূর্ণভাবে বিজেপির বিদ্রোহী তিন নেতা - প্রাক্তণ অর্থ মন্ত্রী যশওয়ান্ত সিনহা, অরুণ শৌরি আর এখনও বিজেপিতেই থাকা অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা।

সভার একেবারের গোড়ার দিকে ভাষণ দিতে গিয়ে যশওয়ান্ত সিনহা যে কথার খেই ধরিয়ে দিলেন, পরে অনেকেই সেই একই সুরে ভাষণ দিয়েছেন।

মি. সিনহার কথায়, "সব সিনিয়ার নেতাদের একটা বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে একজনই মাত্র প্রার্থী লড়াই করবেন। 'একের বিরুদ্ধে এক', এভাবে যদি লড়া যায়, তাহলেই বিজেপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।"

২০১৪ সালের নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, ৩০ শতাংশের কিছু বেশী ভোট পেলেও বিজেপির আসনসংখ্যা ছিল তিনশোরও বেশী। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ভোট ভাগাভাগির সুযোগেই বিজেপি বহু আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পেরেছিল।

কংগ্রেসের সংসদ সদস্য অভিষেক মনু সিংভি সেই সূত্রেই বলছিলেন, "সাম্প্রতিক যে কোনও নির্বাচনের ফলাফল দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে যে ভোট ভাগাভাগির একমাত্র ফায়দা ওঠায় বিজেপি। এই বহুদলীয় মঞ্চে হাজির সব নেতা নেত্রীদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে বিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয়। যেখানে ভোট ভাগ হওয়া আটকানো গেছে, সেখানেই বিজেপিকে পরাস্ত করা গেছে।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্য মনে করেন, বিরোধীরা এক হতে পারলে বিজেপির সমুহ বিপদ।

"রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ আর ছত্তিশগড়ের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনগুলোর আগে পর্যন্ত বিজেপির সঙ্গে ভোটের লড়াইতে কংগ্রেস পিছিয়েই থাকছিল, অন্যদিকে বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলো জোট বাঁধার ফলে ২০১৪ ওই ল্যান্ডস্লাইড জয়ের ঠিক পরেই বিহারে বিজেপিকে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল। মমতা ব্যানার্জী সেই হিসাবটা মাথায় রেখেই আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে বিজেপি বিরোধী জোটের কথা বলতে শুরু করেন। আজকের সমাবেশে এতগুলো আঞ্চলিক দলকে আনতে পেরে সেদিক থেকে সফল হয়েছেন মিজ ব্যানার্জী।"

কয়েকদিন আগে উত্তরপ্রদেশের দুই চির প্রতিদ্বন্দী দল সমাজবাদী পার্টি আর বহুজন সমাজ পার্টি বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী জোটের ঘোষণা দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং বহুজন সমাজ পার্টির এক শীর্ষ নেতা শনিবারের সমাবেশে ছিলেন।


এক হওয়া কি সম্ভব হবে?
কিন্তু সব রাজ্যেই যে সেইভাবে অ-বিজেপি দলগুলো জোট বাঁধতে পারবে, এমন সম্ভাবনা এখনও নেই। সেইসব রাজ্যের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও।

এখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, তাই রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা শনিবারের সভা থেকে দূরে ছিলেন। আর বামফ্রন্ট তো স্বাভাবিকভাবেই সভায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে নি।

কিন্তু দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেটা শনিবারের সভায় অনেকেই মনে করিয়ে দিয়েছেন।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা বলছিলেন, "প্রথমে তো নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের স্বার্থত্যাগ করতে হবে নেতাদেরই। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা ভোটের পরে দেখা যাবে। আগে থেকেই যেন কেউ আশা না করতে থাকেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন।"

বিজেপি এই ইস্যুতেই বারে বারে বিরোধীদের জোট বাধার প্রচেষ্টাকে কটাক্ষ করে আসছে যে, বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী পদে কে বসবেন!

শনিবারের সভায় এসেছিলেন প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া এবং তার ছেলে, কর্ণাটকের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মি কুমারস্বামী। মহারাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও অনেকবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শারদ পাওয়ারও এসেছিলেন। আবার হাজির হয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও।

প্রত্যেকেই তাদের ভাষণে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অপশাসন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর প্রচার সর্বস্ব সরকার চালানোর অভিযোগ তোলেন।

সমাবেশে যেসব আঞ্চলিক দলগুলো এসেছিল, তার প্রতিটিই নিজের রাজ্যে শক্তিশালী দল। কলকাতার সমাবেশের পরে বিরোধী দলগুলোও ঘোষণা করেছে যে নিজের নিজের রাজ্যেও এভাবেই বিজেপি বিরোধী সমাবেশ তারা করবে।

বিশ্লেষক শুভাশিষ মৈত্রর কথায়, "শনিবারের সভায় আসা সব প্রস্তাব হয়তো বাস্তবায়িত হবে না, কিন্তু যে জোট বাধার স্পিরিটটা দেখা গেছে, সেটা বুঝতে হবে।"

তার কথায় - "বলটা সবে গড়াতে শুরু করেছে, কোথায় থামবে, বা গোল করতে না পারলেও বিরোধী দলগুলো যে একজায়গায় হওয়ার চেষ্টা করছে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ বিজেপির কাছে।"

সূত্র : বিবিসি বাংলা

এবিএন/রাজ্জাক/জসিম/এআর

এই বিভাগের আরো সংবাদ