আজকের শিরোনাম :

ভারতে বন্যার পানি বাঁচিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১৪:০৫

ঢাকা, ২৭ মে, এবিনিউজ : ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রবল বৃষ্টিপাত বা দীর্ঘায়িত শুষ্ক মৌসুমের কারণে অনেক সময় কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা বা খরার মতো সমস্যার মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। ফলে তাদের ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ ক্ষেত্রে অনেক সময় কৃষকরা ঐ জমি পরিত্যাগ করতে বা কৃষিকাজ বাদে অন্য ধরণের কাজ খুঁজতে বাধ্য হন।

উত্তর-পশ্চিম ভারতের গুজরাটের একজন কৃষক মাধবন বলছেন, একসময় তার পুরো পরিবারের অন্ন সংস্থান হতো যেই জমিতে কৃষিকাজের মাধ্যমে, সেই জমি এখন লবণের মিহি আস্তরণে আবৃত।

তিনি বলেন, ‘একসময় যে জমিতে শুধু ঘন সবুজের সমারোহ ছিল, এখন সেটিই মরুভূমির মতো।’

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষিজমি এমন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে নৈরিতা ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক উদ্যোক্তাদের সংস্থা।

সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ত্রুপ্তি জৈন আর বিপ্লব খেতান পাল এই সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। বিপ্লব বলেন, ২০০১ সালে গুজরাটের ভূমিকম্পের পর হঠাৎ করে ঐ এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং পানিশূণ্যতার সৃষ্টি হয়। এর পরপরই বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয় আর বন্যা হয়। ওই বন্যার পর মাসের পর মাস জলাবদ্ধতা ছিল যার ফলে কৃষকদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এরপরই আমি এই সমস্যার সমধান খোঁজার চেষ্টা করতে থাকি।

তিনি বলেন, ‘তখন আমি বুঝতে পারি প্রবল বর্ষণকে কাজে লাগিয়েই আসলে শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।’

বিপ্লব ও ত্রুপ্তি বিভিন্ন জলাধারে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা শুরু করেন যেন ওই পানি শুষ্ক মৌসুমে কাজে লাগানো যায়।

ত্রুপ্তি বলেন, তখনই আমাদের মাথায় ভুঙরুর পরিকল্পনা আসে। এটি মাটির নিচে পানি ধরে রাখার একটি পদ্ধতি। কৃষকরা গ্রীষ্ম ও শীতে ওই পানি ব্যবহার করতে পারবে।

ভারতের গুজরাট ও অন্যান্য অঞ্চলের মাটিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য পানি ঢুকতে পারে না এমন সাদা অথবা বাদামি আস্তরণ তৈরি হয়। ফলে মাটির উপরিভাগে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

বিপ্লব বলেন, এই পানি লবণাক্ত মাটিতে মিশে মাটিতে উপস্থিত খনিজ পদার্থও।

প্রতিবছর ১ কোটি ২০ লাখ হেক্টর (২ কোটি ৯০ লক্ষ একর) কৃষিজমি মুরুভূমিতে পরিণত হয়। এসব জমিতে ২ কোটি টন ফসল উৎপাদন করার সুযোগ থাকে। তখন ওই এলাকায় বসবাসকারী কৃষকদের অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

জাতিসংঘের মরুকরণ প্রতিরোধ সম্মেলনের (ইউএনসিসিডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মরুকরণের প্রভাবে বিশ্বের সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের বাসস্থান ও কর্মসংস্থান হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

ভুঙরু সেচ প্রকল্প
ভুঙরু একটি গুজরাটি শব্দ, যার অর্থ ‘নল’। যেসব স্থানে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে সেসব এলাকায় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের কিছু পাইপ প্রবেশ করানো হয়। বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি এসব পাইপের মধ্যে দিয়ে মাটির নিচের প্রাকৃতিক জলাধার সঞ্চিত হয়। পরে শুষ্ক মৌসুমে এই পানি ব্যবহার করা হয়। ফলে বর্ষার সময়ও কৃষকরা ফসল ফলাতে পারেন কারণ মাটি অতিরিক্ত সিক্ত থাকে না। গ্রীষ্মে বা শীতে যখন পানির স্বল্পতা তৈরী হয় তখন পাম্পের মাধ্যমে মাটির নিচে জমা থাকা পানি তুলে সেচকাজে ব্যবহার করা সম্ভব বলে জানান ত্রুপ্তি।

একটি ভুঙরু ইউনিটের মাধ্যমে ৮ থেকে ১০ হেক্টর জমিতে সেচকাজ পরিচালনা করা সম্ভব। প্রকল্পের অবস্থান ও ব্যপ্তি বিচারে একটি ভুঙরু প্রকল্প স্থাপন করতে ৭৫০ থেকে ১৫০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

এখন পর্যন্ত ভারতে ও ভারতের বাইরে ৩৫০০ ভুঙরু প্রকল্প স্থাপন করেছে নৈরিতা।
সূত্র : বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ