আজকের শিরোনাম :

দক্ষিণ ভারতের শবরীমালা মন্দিরে নারীরা এখনো নিষিদ্ধ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৪১

ভারতের কেরালায় যে শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী বয়সের মেয়েদের প্রবেশাধিকারকে কেন্দ্র করে গত কয়েকমাস ধরে তুমুল বিতর্ক আর আন্দোলন চলছে, সেই মন্দিরে এই প্রথমবারের মতো চারজন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি প্রবেশ করেছেন।

প্রথমে তাদের মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলেও পরে পুলিশ ও মন্দির কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর তারা মন্দিরে ঢুকে দর্শন করতে পেরেছেন।

মন্দিরের প্রধান পুরোহিত যখন নিশ্চিত হন যে 'তারা কোনওভাবেই ঋতুমতী নন বা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই' - তখনই ওই চারজনকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়।

বস্তুত শবরীমালায় দশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সী নারীদের ঢোকার অনুমতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রায় তিনমাস হতে চলল, কিন্তু ভক্তদের তুমুল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে আজ পর্যন্ত ওই হিন্দু মন্দিরে ওই বয়সী কোনও নারী ঢুকতে পারেননি।

সোমবার ওই মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করেন পুরুষ শরীর থেকে নারীতে রূপান্তরিত হওয়া চারজন ট্রান্সজেন্ডার অনন্যা, ত্রুপ্তি, রেনজুমল ও অবন্তিকাও - তবে তারাও তীব্র বাধার সম্মুখীন হন।

কিন্তু পরে কেরালা পুলিশের সঙ্গে আলোচনাক্রমে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত যখন নিশ্চিত হন তারা কোনওভাবেই ঋতুমতী নন বা তাদের হওয়ার সম্ভাবনাও নেই - তখন ওই চারজনকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়।

প্রথাগত কালো পোশাক পরে ও 'ইররুমুদিকেট্টু' নামে সাবেকি উপচার নিয়ে তারা মঙ্গলবার বিকেলে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করেন।

তাদেরই একজন বিবিসিকে পরে জানান, শবরীমালায় ঢুকতে পেরে তারা ভীষণই খুশি । "আমরা ট্রান্সজেন্ডার হলেও যেভাবে আজ ভগবান আয়াপ্পার দর্শন করতে পারলাম তাতে আজ আমাদের জীবন সার্থক।"

ওই চারজনের অন্যতম ত্রুপ্তিও পরে বিবিসি তামিল বিভাগকে বলেন, ওই মন্দিরে ঢোকার জন্য যে সব রীতি-রেওয়াজ পালন করতে হয় সেগুলো তারা সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন।

ক্রুপ্তি বলেন, "আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির ও পরিতৃপ্তির একটা দিন।"

"মন্দির দর্শনের জন্য আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি ছিল সর্বাঙ্গীণ - এবং তার পরেও পুলিশ-প্রশাসন ও মন্দির কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছে তাতে তাদের ধন্যবাদ জানাই।"

তবে অ্যাক্টিভিস্টরা অনেকেই মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সেখানে এখনও যে ওই মন্দিরে মহিলারা ঢুকতে পারেননি - তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

তবে ঘটনা হল, ট্রান্সজেন্ডারদের মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রে নিয়মটা পরিষ্কার নয় - এই যুক্তিতে কেরালা পুলিশও প্রথমে তাদের সাহায্য করতে অস্বীকার করেছিল।

পরে অবশ্য তারা যখন পুলিশের মহানির্দেশক মনোজ আব্রাহামের সঙ্গে দেখা করেন তার পরেই তাদের মন্দিরে ঢোকার পথ প্রশস্ত হয়।

মি. আব্রাহাম এখনও দাবি করছেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শবরীমালায় যারাই ঢুকতে চাইবেন পুলিশ তাদেরই সাহায্য করবে - এবং সে ক্ষেত্রে কোনও বাধাই মানা হবে না।

তবে বাস্তবতা হল, মন্দিরে ঋতুমতী মেয়েদের প্রবেশ আটকাতে রাজ্যের বিজেপি নেতারা এখনও অনশন কর্মসূচী চালাচ্ছেন।

তা ছাড়া শবরীমালায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির জন্য হাইকোর্ট একটি তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দিলেও কোনও কিশোরী বা যুবতী এখনও মন্দিরে ঢুকতেই পারেননি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ