আজকের শিরোনাম :

পাচার হওয়া নারী নিজেই এখন পাচারকারী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:৩০

মিসেস বি, যখন তাকে বিক্রি করে দেয়া হয় তখন তার বয়স ৩৬ বছর। এরপর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন একজন নারী পাচারকারী।

‘আমি কান্নায় ফেটে পড়লাম। এটা ছিল খুবই অন্যায্য। পুরুষদের কাছে আমাকে দতুলেদ দেয়া হতো যেখানে উত্তর কোরিয়াতে আমার স্বামী এবং সন্তান আছে। আমার মনে হতো ভুল দেশে জন্ম হওয়ার কারণে আমাকে এই নোংরা জগতে আসতে হয়েছে।’ কথাগুলো বলছিলেন দমিসেস বিদ।

২০০৩ সালে তাকে যখন চীনের কিছু লোকের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয় তখন তার বয়স ছিল ৩৬ বছর। ওই নারী উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত পার হয়ে চীনে পৌঁছান। ভেবেছিলেন কোনও বাড়িতে বয়স্কদের দেখাশোনার লোক হিসেবে কাজ জুটবে তার। তাকে একজন দালাল অন্তত তেমনটাই বলেছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল ডাহা মিথ্যা কথা।

মিসেস বিদর পরিকল্পনা ছিল তিনি এক বছর সেখানে কাজ করে টাকা জমাবেন এবং তারপর উত্তর কোরিয়াতে ফিরে যাবেন। সেই টাকা-পয়সা দিয়ে দেশে থাকা তার স্বামী এবং দুই সন্তানের খাওয়া-পরা চলে যাবে। নতুন করে বিয়ে বা স্বামী পাওয়ার কোন ধরনের চিন্তাই ছিলনা তার মাথায়।

চীনের জিলিন প্রদেশের চাংচুনে তাকে এবং উত্তর কোরিয়ান আরেকজন পাঁচজন নারীকে এক চীনা পুরুষের কাছে ‘তুলে দেয়া’ হয়। দালালটি তাকে তখন বলে ‘একজন চীনা লোকের সাথে কেবল এক বছর থাকো তারপর পালিয়ে যেও।’

যে লোকটির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল তার প্রতি একসময় মায়া অনুভব করতে শুরু করেন মিসেস বি। দশবছর ধরে ওই লোকটির সাথে একসাথে থাকেন এই নারী।
তাকে যার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল সেই চীনা লোকটির সাথে তার সম্পর্কের ধরণ কি ছিল? সেটি কি ‘ভালবাসা’?

এমন প্রশ্ন করা হলে দমিসেস বিদ বলেন, ‘আমি মনে করি এটা মায়া, দুজন মানুষের একে অপরের প্রতি মায়া। আমার কখনই মনে হয়নি এটা দভালবাসাদ ছিল।’

তিনি জানান তাকে কিনে নেয়া লোকটি ছিলেন অত্যন্ত চমৎকার মানুষ। তিনি লোকটির সাথে চীনের প্রত্যন্ত যে এলাকায় বাস করতেন সেখানে খুব অল্প মানুষই ভালোবাসা নিয়ে কথাবার্তা বলতেন। ভালোবাসা বিষয়ক আলোচনা উত্তর কোরিয়াতেও সমানভাবে অনুপস্থিত ছিল।

মিসেস বি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম যে আমি সন্তান ধারণে সক্ষম কিন্তু যেহেতু আমার সন্তানদের কাছে উত্তর কোরিয়াতে আমার ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা তাই আমি আবার বাচ্চা নিতে চাইলাম না। এটা শুনে সে(চীনা নাগরিক) বলেছিল দঠিক আছেদ। এজন্য তার প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ বোধ করছিলাম।’

যেহেতু আমার জন্য সে সন্তানের মুখ দেখতে পেলো না, তাই দায়িত্ববোধ থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে তার মৃত্যু পর্যন্ত তার পাশে থাকব আমি।

২০১৩ সালে মিসেস বি তার ছোট ছেলে এবং উত্তর কোরীয় স্বামীকে দক্ষিণ কোরিয়াতে চলে যেতে সাহায্য করেন, তবে তারা সেখানে যাওয়ার আগে চীনে আসেন এবং তাদের সাথে এক মাসের বেশি থাকেন।

মিসেস বি বলেন, ‘আমরা সবাই একই কক্ষের ভেতর ঘুমাতাম, আমি, আমার চীনা স্বামী, আমার উত্তর কোরিয়ান স্বামী এবং আমার ছোট ছেলেটি।’

মিসেস বি বলেন, উত্তর কোরিয়া থেকে পালানোর সময় ৮০% নারী পাচারের অভিজ্ঞতার স্বীকার হয় এবং তিনি কেবল সেইসব নারীদের মধ্যে একজন।

মিসেস বি প্রাথমিকভাবে একটি গরুর খামারে চাকরি করতেন। মাসে নয় মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রোজগার করতেন। তিনি ওই ফার্মে কাজ করার সময় একজন দালালের সহায়তায় নিজের সন্তান আর উত্তর কোরিয়ান স্বামীকে একবার দেখার সুযোগ পান চীন-উত্তর কোরিয়া সীমান্তে।

সেখানে স্বামীকে অসহায় ও দরিদ্র অবস্থায় দেখে হতবাক হয়ে যান তিনি। এরপরই অর্থের জন্য তিনি অবতীর্ণ হন পাচারকারীর ভূমিকায়।

মিসেস বি বলেন, ‘পরিবারের জন্য কিছু একটা করতে হবে -এটাই তখন আমার মাথার ভেতর ছিল। আমাকে প্রচুর টাকা-পয়সা রোজগার করতে হবে। কিন্তু আমার কোন জাতীয়তা ছিলনা, পরিচয় ছিল না সেসময় , এবং ভালো কিছু রোজগারের মত অনেক কাজই আমি কখনো করতে পারতাম না।’

২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন উত্তর কোরীয় নারীকে চীনা পুরুষদের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি।

তিনি স্বীকার করেন এটা মানব পাচার ছিল কিন্তু জোর দিয়ে বলেন তিনি তাদের সাথে প্রতারণা করেননি যেটা তার সাথে করা হয়েছিল। এসব নারীকে চুক্তি করেই আনা হতো।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ