আজকের শিরোনাম :

ইন্দোনেশিয়ায় নব্য ধনীদের ‘চরম বিলাসী’ জীবনযাপন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৫০

ইন্দোনেশিয়ায় অসম্ভব ধনী একটি শ্রেণির উত্থান ঘটেছে। আর তাদের হাতে থাকা অঢেল টাকা খরচ করার বিচিত্র সব কর্মকান্ড প্রায়ই খবর হয়ে বেরুচ্ছে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে।

ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। এ দেশে এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সাথে সাথে লক্ষ করা যাচ্ছে, অতিশয় বড়লোক একটি শ্রেণির উত্থান।

তাদের নানা কর্মকান্ডের একটিতে গিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিক রেবেকা হেন্সকে। তিনি এক রিপোর্টে লিখেছেন ইন্দোনেশিয়ার এ নব্য ধনীরা কেমন জীবনযাপন করেন।

রেবেকা হেন্সকে লিখছেন, আমি গিয়েছিলাম এক পার্টিতে। একটি ৬ বছরের মেয়ের জন্মদিনের পার্টি। তবে তার বৈশিষ্ট্য ছিল, ওই পার্টির থিম হচ্ছে কুকুর।

কুকুর এমন একটি প্রাণী, যা ঐতিহ্যগতভাবেই এ দেশে ঠিক পছন্দের প্রাণী নয় এবং তাদের সেভাবে যত্নআত্তি করাও হয় না। কিন্তু কুকুরকে ‘থিম’ বানানো ছাড়াও আরো বিস্ময় ছিল ওই পার্টিতে। যার জন্মদিন- সেই বাচ্চা মেয়েটির পরিবার পার্টির আয়োজন করতে যা করেছিলেন তা-ত কিছু কম অবাক-করা নয়।

নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদেও প্রধান সড়ক থেকে যেখানে নিয়ে গেল তা যেন একটা অন্য জগৎ। দেখলাম, জাকার্তার সবচেযে দামী ও অভিজাত জায়গা মেনটেংয়ের একটা খালি জায়গাকে একটা পার্কে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে আসল ঘাস এবং বড় বড় গাছ এনে বিছানো হয়েছে, সাথে বসানো হয়েছে কুকুরের জন্য নানা-রকম বাধা পার হবার একটি খেলার কোর্স।

একটা কোণায় এ অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় আনা কুকুরদের রাখা হয়েছে। কুকুরের যতœ নিচ্ছেন যে লোকটি তিনি তাদের স্নান করাচ্ছেন, কুকুরকে মাসাজ দিচ্ছেন বা তার গা-মালিশ করছেন।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে বাচ্চা মেয়েটির অভিভাবকরা বরফ-দেয়া কফিতে চুমুক দিচ্ছেন। দিনের আরও পরের দিকে পরিবেশন করা হলো ওয়াইন।

ইন্দোনেশিয়ায় অ্যালকোহলের ওপর উচ্চ হারের কর রয়েছে। তার মানে হলো ওয়াইন এখানে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

এই কৃত্রিম পার্কের মাঝখানে রয়েছে অনেকগুলো কুকুরের আকৃতির বেলুন। একজন লোক বুদবুদ ওড়াচ্ছেন।

এই পার্টিটি অক্টোবর মাসের কথা। আমি তখন সবেমাত্র ইন্দোনেশিয়ার পালুর সুনামির ধ্বংসলীলা ও প্রাণহানির ওপর রিপোটিং করে ফিরেছি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল - তার বিপরীতে মনে হচ্ছিল এখানে যেন অদ্ভূত, পরাবাস্তব কিছু দেখছি।

‘এটা যদি ৬ বছরের মেয়ের জন্মদিন হয়, তা হলে তার ১৮ বছরের জন্মদিনে কি থাকবে?’ আমি আমার পাশের আরেক অভিভাবককে জিজ্ঞেস করলাম।

তিনি বলেন, ‘আসলে এখানে যা হচ্ছে তা মেযেটি চায়নি, চেযেছেন তার অভিভাবকরা।’

আমরা মেয়েটির জন্য যে উপহার নিয়ে গিয়েছিলাম- আমাদের তার চেয়ে তিনগুণ বড় উপহার ভর্তি পার্টি ব্যাগ দেয়া হলো।

আমি জানি না, কেন আমি এই পার্টি দেখে বিস্মিত হলাম। কারণ আমার ছেলেমেয়েরা ইন্দোনেশিয়ার যেসব উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের সাথে একই স্কুলে যায় - সেখানে এমন পার্টি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

একটি পরিবারের কথা জানি- যারা হলিউডের ব্লকবাস্টার ছবি নতুন করে সম্পাদনা করার জন্য একটি ফিল্ম কোম্পানি ভাড়া করেছিল, যাতে ছবির মধ্যে বিশেষ বিশেষ দৃশ্যে তাদের মেযেকে দেখানো হয়, যার জন্মদিনে এটার বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছিল। বাচ্চাদের জন্য প্রদর্শনীটি হয়েছিল একটি নামিদামি হোটেলের বলরুমে- সিনেমা হলের সাইজের পর্দায়।

সেই জন্মদিনের পার্টির আগে আমি ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত পাপুয়া প্রদেশের শিশু স্বাস্থ্য সংকট দেখে ফিরেছি। সেখানে তখন হামের প্রাদুর্ভাবে বহু অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু মৃত্যু হচ্ছিল।

সেপ্টেম্বর মাসে ক্রেজি রিচ এশিয়ান্স নামে একটি ছবি মুক্তি পাবার পর এখানকার অনেক লোক টুইটারে তাদের পরিচিত ‘ক্রেজি রিচ’ ইন্দোনেশিয়ানদের নানা গল্প লিখে জানাতে শুরু করেন। তাদের অনেকে ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়ার বাসিন্দা।

একজন শিক্ষক লিখেছিলেন, তার এক ছাত্রের পরিবারের কথা। তারা টিকা দেবার জন্য জাপানে যায়, ছুটি কাটাতে যায় ইউরোপে।

এই শিক্ষিকাটি এখন এ নিযে একটি বই লিখছেন, এবং কথা হচ্ছে যে এর ওপর একটি সিনেমাও তৈরি হতে পারে।

সম্প্রতি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরোয় যে সুরাবায়ায় একটি বিয়েত দেশ বিদেশ থেকে আসা অতিথিদের জন্য একটা ড্র-এর ব্যবস্থা ছিল - যার প্রথম পুরস্কার ছিল একটি জাগুয়ার স্পোর্টস কার।

গত দুই দশকে ইন্দোনেশিয়ার দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে। দেশটির আছে ব্যাপক প্রাকৃতিক সম্পদ- কাঠ, পাম অয়েল, কয়লা, সোনা ও তামা। তার সাথে সমন্বয় হয়েছে নিম্ন করহার এবং শিথিল শ্রম আইনের।

দেশটিতে এখন প্রতি পাঁচজনের একজন হচ্ছেন উচ্চ মধ্যবিত্ত। তাদের বাস বিশেষ করে দেশের পশ্চিমাংশে। তারা মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যে এমন অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে - যা তাদের বাবা-মায়েরা কল্পনাও করতে পারতেন না।

তাই হয়তো তারা মনে করেন, সেই অর্থ দেখিয়ে বেড়ানোটা খুবই স্বাভাবিক এবং এমনকি ‘প্রয়োজনীয়।’

বলাবাহুল্য ইন্দোনেশিয়ায় সবার জীবন কাহিনি এমন নয়। কিন্তু যারা গরিব- তাদের বেলায়ও বলা কঠিন যে তাদের পরের প্রজন্ম কীভাবে বেড়ে উঠবে ।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ