আজকের শিরোনাম :

ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া উচিত ছিল : হাইকোর্টের রায়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:০৬

ভারতের এক হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ধর্মের ভিত্তিতে যেহেতু দেশভাগ হয়েছিল, তাই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।

কেউ যেন ভারতকে আরেকটি ইসলামিক দেশে পরিণত করার চেষ্টা না করেন, তা হলে সেটা হবে ভারত আর বিশ্বের ধ্বংসের দিন, এমন কথাও লেখা হয়েছে মেঘালয় হাইকোর্টের ওই রায়ে।

এখনো পাকিস্তান, বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধসহ বেশ কয়েকটি জাতির মানুষের ওপর অত্যাচার করা হয়, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, নিজের রায়ে এ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি সুদীপ রঞ্জন সেন।

এ রায় নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতারা যেমন এ রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনই আইনজীবীদের সংগঠন এ বিচারপতিকে সব বিচারসংক্রান্ত কাজ থেকে দূরে রাখার আর্জি জানিয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমেও যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি হয়েছে এ রায় নিয়ে।

বিতর্কিত এ রায়টি দেয়া হয়েছে একটি রিট পিটিশনের মামলায়, যেখানে মেঘালয়ের এক পুরনো বাসিন্দা আমন রাণা কোন প্রয়োজনে মেঘালয় সরকারের কাছ থেকে ডমিসাইল সার্টিফিকেট (রাজ্যে বসবাসের সার্টিফিকেট) চেয়েও তা পাননি।

সেই মামলাটির রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি সেন লিখেছেন, এ ধরনের সার্টিফিকেট পেতে নাগরিকদের সমস্যা হচ্ছে ‘ভারতবর্ষের জন্মলগ্ন’ থেকেই। তাই দেশ এবং দেশভাগ নিয়ে সঠিক অবস্থাটা রায়ের মাধ্যমে জানাতে চেয়েছেন তিনি।

বিচারপতি সেন তার রায়ে লিখেছেন, ‘একটা সময়ে গোটা দেশটাই হিন্দু রাজত্বের অধীনে ছিল। কিন্তু মুঘলরা এসে ভারতের বিভিন্ন অংশ দখল করে যখন শাসন করতে শুরু করল, তখন অনেক বলপূর্বক ধর্মান্তরও করা হয়েছে।’

এর পর তিনি লিখছেন, ‘দেশভাগের সময়ে যে লাখ লাখ হিন্দু এবং শিখদের হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার চালানো হয়েছে এবং তাদের যে জোর করে পিতৃপুরুষের জমিজায়গা ছেড়ে আসতে বাধ্য করা হয়েছে এবং প্রাণ বাঁচাতে তারা ভারতে এসেছেন, এসব তথ্য নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।

এর পর, রায়ের চার নম্বর অনুচ্ছেদে বিচারপতি যে মন্তব্যটা করেছেন, সেটা নিয়েই গোল বেঁধেছে। তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তান নিজেদের ইসলামিক দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং যেহেতু ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতেই ভাগ করা হয়েছিল, তাই তারও উচিত ছিল হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে নিজেকে ঘোষণা করা, তবে সেটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবেই রয়ে গেছে।’

দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে যে প্রতিবেশী দেশগুলিতে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

মেঘালয় হাইকোর্টের রায়েও সেই একই প্রসঙ্গ এসেছে।

‘এখনো পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খৃস্টান, পার্সি, খাসি, জয়ন্তিয়া এবং গারোরা অত্যাচারিত হচ্ছে এবং তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। যেসব হিন্দুরা দেশভাগের সময়ে এসেছেন, তাদের এখনো বিদেশি বলে গণ্য করা হয়। এটা আমার বিচারে অত্যন্ত অযৌক্তিক, অন্যায় এবং স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী,’ রায়ের এ অংশটির পরেই বিচারপতি লিখেছেন যে তিনি এ সংক্রান্ত কয়েকটি বই পড়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম তথাগত রায়ের লেখা একটি বই।

ঘটনাচক্রে, ত্রিপুরার গভর্নর তথাগত রায় এখন মেঘালয় রাজ্যেরও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এবং তিনি এ সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়ার আগে পর্যন্ত বিজেপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন।

ওইসব বই থেকে দীর্ঘ উদ্ধৃতি দেয়ার পরে যখন আবার নিজের রায় লিখেছেন বিচারপতি সেন, সেখানে ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন একটি আইন পাশ করে পাকিস্তান, বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি, খৃস্টান, খাসি, জয়ন্তিয়া এবং গারোদের এদেশে নিশ্চিন্তে থাকার ব্যবস্থা করেন।’

‘তাদের ভারতে আসার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা যেন বেঁধে না দেয়া হয়, কোনো নথিপত্রও যেন না চাওয়া হয়। এর পরও যারা ঐসব দেশ থেকে আসবেন, তাদেরও যেন নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।’

রায়ের শেষ দিকে বিচারপতি লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস শুধু নরেন্দ্র মোদিজীর নেতৃত্বাধীন এ সরকারই বিষয়টার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন এবং আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতাজীও জাতীয় স্বার্থে সেটা সমর্থন করবেন।’

রায়ের কপি সরাসরি মেঘালয়ের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সেন।

এই রায়টি জনসমক্ষে আসার পরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

লোকসভার সদস্য আসাউদ্দিন ওয়াইসি সংবাদ সংস্থা আই এএনএসের কাছে মন্তব্য করেছেন, ‘এটা কী ধরনের রায়! বিচার বিভাগ এবং সরকারের উচিত এই রায়টির দিকে নজর দেয়া। ভারত কোনোদিনই ইসলামিক রাষ্ট্র হবে না। তা বহুত্ববাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রই থাকবে।’

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য বিবিসিকে বলেছেন, ‘আরএসএসের হিন্দু রাষ্ট্রের যে মতবাদ রয়েছে, এই বিচারপতির রাজনৈতিক বিশ্বাসও সে রকমই। আমাদের সংবিধানের মূল ভিত্তিই হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু বিচারপতি সেনের সাম্প্রদায়িক যে চিন্তাভাবনা রায়ে প্রকাশ পেয়েছে, সেটি সংবিধানের মূল ভাবনার বিপরীত। একটি সাংবিধানিক আদালতের বিচারক হওয়ার নৈতিক যোগ্যতা তিনি হারিয়েছেন।’

ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছে অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়ন দাবী জানিয়েছে সেনকে সবরকম বিচারিক কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।

এই বিচারপতিকে অপসারণের জন্য সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনারও দাবি তুলেছেন অল ইন্ডিয়া লইয়ার্স ইউনিয়ন। এ রায় নিয়ে বিতর্ক চলছে সামাজিক মাধ্যমেও।

এস আইয়ার নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওয়াও! একটি অকুতোভয় রায়, যেখানের নিজেদের দেশেই হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো, ভারত স্বাধীন হওয়ার ৭১ বছর পরে।’

বানিয়া নামের আরেকজন টুইট করেছেন, ‘আরও আশ্চর্যজনক যে এটা একজন বাঙালীর দেয়া রায়। আমি তো ভেবেছিলাম তারা সবাই ইন্টেলেকচুয়াল হয়ে গেছে।’

অ্যান্থনি জোসেফ লিখেছেন, ‘তো আমরা এই ব্যক্তিকে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছি।’
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ