যুবরাজ সালমানের শৈশব কেমন ছিল?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৩৮
সৌদি আরবের বিতর্কিত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে কিছু দিন আগে পর্যন্তও খুব কম লোকই চিনতেন। কিন্তু ভবিষ্যৎ সৌদি রাজা হিসেবে তার অভিষেক রক্ষণশীল সৌদি সমাজ সংস্কারের নানা উদ্যোগ, ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ এবং সবশেষ জামাল খাসোগজি হত্যাকান্ড- এগুলোর সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে যাওয়ার কারণে সারা বিশ্বের নজর এখন তার দিকে।
কিন্তু কীভাবে বেড়ে উঠেছিলেন এ প্রিন্স সালমান? তার শৈশব সম্পর্কে লোকে কতটুকু জানে?
এর ওপরই খানিকটা আলোকপাত করেছেন বিবিসি আরবি বিভাগের রাশিদ সেক্কাই- যিনি শিশু প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের গৃহশিক্ষক ছিলেন, তাকে ইংরেজি শেখাতেন।
সম্প্রতি তিনি বর্ণনা করেছেন তার সেই সময়কার স্মৃতি। ‘সেটা ১৯৯৬ সাল। আমি তখন জেদ্দার নামকরা স্কুল আল-আনজালে পড়াই। তখন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন প্রিন্স সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ- যিনি এখন সৌদি আরবের বাদশাহ এবং যুবারাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পিতা।’
‘প্রিন্স সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ তখন সাময়িকভাবে তার পরিবার নিয়ে জেদ্দায় এসেছেন, এবং তার দরকার হয়েছিল তার সন্তানদের জন্য একজন ইংরেজির শিক্ষক।’
‘তিনি যোগাযোগ করলেন আমি যে স্কুলে পড়াতাম সেই স্কুলের সাথে। তখন আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো রাজকীয় প্রাসাদে। আমার ছাত্র হলেন তার প্রথম বিয়ে থেকে জন্মানো কয়েকজন রাজপুত্র। প্রিন্স তুরকি, প্রিন্স নায়েফ, প্রিন্স খালিদ এবং প্রিন্স মোহাম্মদ।’ ‘আমি তখন জেদ্দার একটা উঠতি এলাকায় একটা ফ্ল্যাটে থাকি। প্রতিদিন সকাল বেলা সাতটার সময় একজন শোফার (ড্রাইভার) এসে আমাকে আল-আনজাল স্কুলে নিয়ে যেতো। বিকেলের দিকে স্কুল শেষ হলে এই ড্রাইভারই আমাকে নিয়ে যেতো রাজপ্রাসাদে।’ ‘প্রাসাদের গেটের কড়া পাহারা পার হয়ে যাবার পর গাড়িটি অনেকগুলো চোখ-ধাঁধানো বাগানওয়ালা ভিলা পার হয়ে রাজকীয় প্রাসাদের সামনে পৌঁছাতো। সামনের নিখুঁতভাবে সাজানো বাগানের পরিচর্যা করছে সাদা পোশাক পরা মালীরা।’ ‘সেখানে একটি কার পার্ক দেখলাম- তাতে দাঁড়িয়ে আছে বহু বিলাসবহুল গাড়ি। একটা গাড়ি দেখলাম গোলাপি রঙের - মনে হলো ওটা একটা ক্যাডিলাক। এই প্রথম আমি নিজের চোখে ক্যাডিলাক দেখলাম।’ ‘রাজকীয় দুর্গে ঢোকার পর আমাকে স্বাগত জানালেন প্রাসাদের পরিচালক মানসুর আল-শাহরি। মধ্যবয়স্ক এই ব্যক্তি প্রিন্স মোহাম্মদের খুবই প্রিয় ছিলেন।’ ‘প্রিন্স মোহাম্মদকে মনে হলো আমার কাছে পড়ার চাইতে প্রাসাদের রক্ষীদের সাথে সময় কাটানোর ব্যাপারেই তার বেশি আগ্রহ। ভাইদের মধ্যে সে-ই বয়েসে সবচেয়ে বড় হওয়ায় সে যা খুশি তাই করতে পারে - এমনই মনে হতো।’ ‘বয়েসে ছোট যে প্রিন্সরা, আমি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারতাম। কিন্তু মোহাম্মদ সেখানে হাজির হলেই পরিস্থিতি হয়ে যেতো অন্য রকম।’ ‘আমার মনে আছে, আমার পাঠদানের সময় মোহাম্মদ একটা ওয়াকি-টকি ব্যবহার করত- যা সে রক্ষীদের কোনো একজনের কাছ থেকে ধার করেছিল। সে এটাকে ব্যবহার করতো আমাকে নিয়ে নানা রকম মন্তব্য করার জন্য, তার ভাই এবং প্রাসাদরক্ষীদেও জোক শোনানোর জন্য।’ ‘‘কদিন মোহাম্মদ বলল, তার মা তাকে বলেছেন যে আমাকে দেখে নাকি ‘একজন সত্যিকারের ভদ্রলোক’ বলে মনে হয়। আমি এটা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলাম। কারণ আমার মনে পড়ে না যে কখনো আমি তাকে দেখেছি, যেহেতু সৌদি রাজপরিবারের মেয়েরা অপরিচিতদের সামনে আসে না। প্রাসাদে একমাত্র নারী যাকে আমি দেখেছিলাম, সে একজন ফিলিপিনো আয়া।” ‘আমাকে যে কেউ দেখছে এ ব্যাপারটা আমি আগে বুঝতে পারি নি। কিন্তু সৌদি সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী তখন আমাকে দেয়ালে লাগানো কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখালেন। তার পর থেকে পড়ানোর সময় আমি আত্মসচেতন হয়ে গিয়েছিলাম।” ‘কিছুদিনের মধ্যেই মোহাম্মদ এবং তার ভাইদের আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেল। তারা ছিল রাজপুত্র, এবং তাদের জগত ছিল অর্থ-বিত্ত-বিলাসে ভরা। কিন্তু তাদের সাথে আমার স্কুলের ছাত্রদের বিশেষ কোন তফাৎ ছিল না। তাদের জানার আগ্রহ ছিল কিন্তু খেলাধূলা করতেই বেশি ভালোবাসতো।’ ‘একদিন প্রাসাদের পরিচালক মানসুর আল-শাহরি আমাকে বললেন ভবিষ্যৎ রাজার সাথে দেখা করতে। কারণ তিনি তার সন্তানদের শিক্ষায় কতটা অগ্রগতি হলো তা জানতে চান।’
‘আমি ভাবলাম, প্রিন্স মোহাম্মদের দুষ্টামির ব্যাপারে কিছু করার এটা একটা সুযোগ হলো
আমি প্রিন্স সালমানের অফিসের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশে দাঁড়ানো ছিলেন যুবরাজদের অন্যান্য শিক্ষকরা। মনে হলো, প্রাসাদের আদবকায়দা সম্পর্কে আমার চাইতে তারা বেশি ওয়াকিবহাল।’ ‘প্রিন্স সালমান আসার সাথে সাথে তারা উঠে দাঁড়ালেন, এবং আমি দেখতে লাগলাম কিভাবে তারা রিয়াদের গভর্নরের সামনে মাথা নত করলেন, তার হাতে চুমু খেলেন, দ্রুতগতিতে প্রিন্সদের নিযে কিছু কথা বললেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেন।’
‘যখন আমার পালা এলো- আমি তাদের মতো মাথা নত করতে পারলাম না। আমি কখনো এটা করি নি। আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং ভবিষ্যৎ রাজার সাথে করমর্দন করলাম। আমার মনে আছে প্রিন্স সালমানের মুখে ফুটে ওঠা বিস্ময়সূচক মৃদু হাসির কথা। কিন্তু তিনি ব্যাপারটা উপেক্ষা করেছিলেন।’ ‘আমি তার সাথে কথা বলার সময় প্রিন্স মোহাম্মদের কথা তুলিনি। কারণ ততক্ষণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে আমি এ কাজ ছেড়ে দেবো এবং যুক্তরাজ্যে ফিরে যাবো। পরে আল-শাহরি আমাকে রাজকীয় আদবকায়দা পালন করতে ব্যর্থ হবার জন্য আমাকে অনেক বকাঝকা করেছিলেন।’ ‘আমার ছাত্রদের মধ্যে প্রিন্স মোহাম্মদ ছাড়া প্রিন্স খালিদ- যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। তবে অন্য প্রিন্সরা জনসমক্ষে ততটা পরিচিত নন। সৌদি রাজপুত্রদের শিক্ষাদানের এই সময়টা ছিল আমার জীবনের একটা অনন্য পর্ব।’
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
‘তিনি যোগাযোগ করলেন আমি যে স্কুলে পড়াতাম সেই স্কুলের সাথে। তখন আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো রাজকীয় প্রাসাদে। আমার ছাত্র হলেন তার প্রথম বিয়ে থেকে জন্মানো কয়েকজন রাজপুত্র। প্রিন্স তুরকি, প্রিন্স নায়েফ, প্রিন্স খালিদ এবং প্রিন্স মোহাম্মদ।’ ‘আমি তখন জেদ্দার একটা উঠতি এলাকায় একটা ফ্ল্যাটে থাকি। প্রতিদিন সকাল বেলা সাতটার সময় একজন শোফার (ড্রাইভার) এসে আমাকে আল-আনজাল স্কুলে নিয়ে যেতো। বিকেলের দিকে স্কুল শেষ হলে এই ড্রাইভারই আমাকে নিয়ে যেতো রাজপ্রাসাদে।’ ‘প্রাসাদের গেটের কড়া পাহারা পার হয়ে যাবার পর গাড়িটি অনেকগুলো চোখ-ধাঁধানো বাগানওয়ালা ভিলা পার হয়ে রাজকীয় প্রাসাদের সামনে পৌঁছাতো। সামনের নিখুঁতভাবে সাজানো বাগানের পরিচর্যা করছে সাদা পোশাক পরা মালীরা।’ ‘সেখানে একটি কার পার্ক দেখলাম- তাতে দাঁড়িয়ে আছে বহু বিলাসবহুল গাড়ি। একটা গাড়ি দেখলাম গোলাপি রঙের - মনে হলো ওটা একটা ক্যাডিলাক। এই প্রথম আমি নিজের চোখে ক্যাডিলাক দেখলাম।’ ‘রাজকীয় দুর্গে ঢোকার পর আমাকে স্বাগত জানালেন প্রাসাদের পরিচালক মানসুর আল-শাহরি। মধ্যবয়স্ক এই ব্যক্তি প্রিন্স মোহাম্মদের খুবই প্রিয় ছিলেন।’ ‘প্রিন্স মোহাম্মদকে মনে হলো আমার কাছে পড়ার চাইতে প্রাসাদের রক্ষীদের সাথে সময় কাটানোর ব্যাপারেই তার বেশি আগ্রহ। ভাইদের মধ্যে সে-ই বয়েসে সবচেয়ে বড় হওয়ায় সে যা খুশি তাই করতে পারে - এমনই মনে হতো।’ ‘বয়েসে ছোট যে প্রিন্সরা, আমি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারতাম। কিন্তু মোহাম্মদ সেখানে হাজির হলেই পরিস্থিতি হয়ে যেতো অন্য রকম।’ ‘আমার মনে আছে, আমার পাঠদানের সময় মোহাম্মদ একটা ওয়াকি-টকি ব্যবহার করত- যা সে রক্ষীদের কোনো একজনের কাছ থেকে ধার করেছিল। সে এটাকে ব্যবহার করতো আমাকে নিয়ে নানা রকম মন্তব্য করার জন্য, তার ভাই এবং প্রাসাদরক্ষীদেও জোক শোনানোর জন্য।’ ‘‘কদিন মোহাম্মদ বলল, তার মা তাকে বলেছেন যে আমাকে দেখে নাকি ‘একজন সত্যিকারের ভদ্রলোক’ বলে মনে হয়। আমি এটা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলাম। কারণ আমার মনে পড়ে না যে কখনো আমি তাকে দেখেছি, যেহেতু সৌদি রাজপরিবারের মেয়েরা অপরিচিতদের সামনে আসে না। প্রাসাদে একমাত্র নারী যাকে আমি দেখেছিলাম, সে একজন ফিলিপিনো আয়া।” ‘আমাকে যে কেউ দেখছে এ ব্যাপারটা আমি আগে বুঝতে পারি নি। কিন্তু সৌদি সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী তখন আমাকে দেয়ালে লাগানো কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখালেন। তার পর থেকে পড়ানোর সময় আমি আত্মসচেতন হয়ে গিয়েছিলাম।” ‘কিছুদিনের মধ্যেই মোহাম্মদ এবং তার ভাইদের আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেল। তারা ছিল রাজপুত্র, এবং তাদের জগত ছিল অর্থ-বিত্ত-বিলাসে ভরা। কিন্তু তাদের সাথে আমার স্কুলের ছাত্রদের বিশেষ কোন তফাৎ ছিল না। তাদের জানার আগ্রহ ছিল কিন্তু খেলাধূলা করতেই বেশি ভালোবাসতো।’ ‘একদিন প্রাসাদের পরিচালক মানসুর আল-শাহরি আমাকে বললেন ভবিষ্যৎ রাজার সাথে দেখা করতে। কারণ তিনি তার সন্তানদের শিক্ষায় কতটা অগ্রগতি হলো তা জানতে চান।’
‘আমি ভাবলাম, প্রিন্স মোহাম্মদের দুষ্টামির ব্যাপারে কিছু করার এটা একটা সুযোগ হলো
আমি প্রিন্স সালমানের অফিসের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশে দাঁড়ানো ছিলেন যুবরাজদের অন্যান্য শিক্ষকরা। মনে হলো, প্রাসাদের আদবকায়দা সম্পর্কে আমার চাইতে তারা বেশি ওয়াকিবহাল।’ ‘প্রিন্স সালমান আসার সাথে সাথে তারা উঠে দাঁড়ালেন, এবং আমি দেখতে লাগলাম কিভাবে তারা রিয়াদের গভর্নরের সামনে মাথা নত করলেন, তার হাতে চুমু খেলেন, দ্রুতগতিতে প্রিন্সদের নিযে কিছু কথা বললেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেন।’
‘যখন আমার পালা এলো- আমি তাদের মতো মাথা নত করতে পারলাম না। আমি কখনো এটা করি নি। আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং ভবিষ্যৎ রাজার সাথে করমর্দন করলাম। আমার মনে আছে প্রিন্স সালমানের মুখে ফুটে ওঠা বিস্ময়সূচক মৃদু হাসির কথা। কিন্তু তিনি ব্যাপারটা উপেক্ষা করেছিলেন।’ ‘আমি তার সাথে কথা বলার সময় প্রিন্স মোহাম্মদের কথা তুলিনি। কারণ ততক্ষণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে আমি এ কাজ ছেড়ে দেবো এবং যুক্তরাজ্যে ফিরে যাবো। পরে আল-শাহরি আমাকে রাজকীয় আদবকায়দা পালন করতে ব্যর্থ হবার জন্য আমাকে অনেক বকাঝকা করেছিলেন।’ ‘আমার ছাত্রদের মধ্যে প্রিন্স মোহাম্মদ ছাড়া প্রিন্স খালিদ- যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। তবে অন্য প্রিন্সরা জনসমক্ষে ততটা পরিচিত নন। সৌদি রাজপুত্রদের শিক্ষাদানের এই সময়টা ছিল আমার জীবনের একটা অনন্য পর্ব।’
খবর বিবিসি বাংলা এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ