আজকের শিরোনাম :

ভারতে ইভিএম নিয়ে বাড়ছে সন্দেহ ও অবিশ্বাস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:১৩

বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে যখন অন্তত ৬টি সংসদীয় আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে, তখন প্রতিবেশী ভারতে কিন্তু ইভিএম নিয়ে নতুন করে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়ছে।

বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, ‘মোদির ভারতে ইভিএমের হাতে রহস্যজনক সব ক্ষমতা দেখা যাচ্ছে।’

মঙ্গলবার পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা পর্যন্ত ইভিএম যন্ত্র পাহারা দেওয়ার ব্যাপারে দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকতেও বলেছেন রাহুল গান্ধী।

ইভিএম ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে কংগ্রেস, আর এ প্রশ্নে সিপিএম বা আম আদমি পার্টির মতো বিরোধ দলগুলিও তাদের সমর্থন জানাচ্ছে।

ফলে বিগত প্রায় দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারিফ কুড়িয়ে আসার পর ভারতে ইভিএমকে ঘিরে সংশয় এখন তুঙ্গে।

দেশের ৫ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সবে শেষ হলো, আর সেখানে বহু জায়গাতেই ইভিএম ‘রহস্যজনক আচরণ’ করেছে বলে দাবি করছে বিরোধী দল কংগ্রেস।

দলের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী বলছেন, ‘কোথাও দেখা গেছে ইভিএম-বোঝাই স্কুলবাস ভোটের দুদিন পর পর্যন্ত উধাও ছিল, আবার কোথাও বা ইভিএম নিয়ে ভোটকর্মীরা বাইরে হোটেলে গিয়ে মদ্যপান করছেন।’

এসব কথিত অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছে তারা।

দলের সিনিয়র নেতা কমলনাথ কমিশনের সঙ্গে দেখা করে এসে জানান, যে সব রিটার্নিং অফিসারের কেন্দ্রে ইভিএম নিয়ে অনিয়ম হয়েছে তাদের বরখাস্ত করার ও গণনা প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছি আমরা।

সাবেক আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বালও ওই দলে ছিলেন। তিনি বলেন ‘নির্বাচন কমিশনের হাতে যে ইভিএম যন্ত্রগুলো ট্র্যাক করার কোনও ক্ষমতাই নেই তা এসব ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেছে।’

এদিকে শুক্রবার ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাজস্থানে বিজেপির প্রার্থী জ্ঞানচন্দ পারখের বাড়ির ভেতরেই দেখা যাচ্ছে একটি ইভিএম যন্ত্র - যে ভিডিওটি টুইট করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল লিখেছেন, ‘এ দেশে হচ্ছেটা কী?’

এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সে কথা জানিয়েও সহকারী নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনার এক বিচিত্র ব্যাখ্যা দিয়েছেন!

তিনি বলেছেন, ওই ইভিএমটি না কি রিজার্ভ ছিল, মানে বুথের কোনও যন্ত্র কাজ না-করলে তবেই সেটি কাজে লাগানো হতো।

কিন্তু এসব ঘটনা অবাধ নির্বাচনের পরিপন্থী, সে কথা বলছে বিরোধী দল সিপিএমও।

দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘সুষ্ঠু ও বাধাহীন নির্বাচন আয়োজন করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শুধু নয়, সাংবিধানিক ম্যান্ডেটও।’

ফলে তিনি মনে করছেন সেই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে কমিশনকেই তার মোকাবিলা করতে হবে।

সমস্যা হলো, ভারতে পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচনের সময় ইভিএম নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠেই চলেছে। কোথাও কোথাও সেই একমাস বা দুই সপ্তাহ আগে ভোট হয়ে গেছে, তার পর থেকে ইভিএমগুলো রাখা আছে স্ট্রংরুমে।

স্ট্রংরুমের বাইরে কখনও ল্যাপটপ নিয়ে পাহারারত সেনা জওয়ান বা মোবাইল সংস্থার কর্মীরা ধরা পড়ছেন, আর তার পরই শোরগোল শুরু হয়ে যাচ্ছে ইভিএম যন্ত্রগুলো হ্যাক করার কোনো চেষ্টা হচ্ছে না তো?

বাইরে দলীয় কর্মীরা দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন, আর কোথাও কোথাও ভেতরে সিসিটিভি যে কিছুক্ষণ কাজ করেনি, তা স্বীকার করেছে কমিশনও।

এর পরও মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের দাবি, ‘কংগ্রেস নির্বাচনকে একটা তামাশায় পরিণত করতে চাইছে - কারণ নির্বাচন কমিশনের মতো একটা সাংবিধানিক সংস্থান নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কারোরই লাভ হবে না।’


ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার টিএস কৃষ্ণমূর্তি অবশ্য মোটেও এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন।

তিনি বলছেন, ‘নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এ জাতীয় প্রশ্ন উঠলে অবশ্যই কমিশনের উচিত স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া। কারণ এ অভিযোগগুলো কোনও ব্যাখ্যাসাপেক্ষ নয় বরং কিছু কথিত ঘটনাকে ঘিরে।’

তদন্তে ত্রুটি প্রমাণিত হলে পুনর্র্নিবাচনের নির্দেশও দেওয়া উচিত বলে কৃষ্ণমূর্তির অভিমত; কিন্তু দেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখনো সে রকম কোনো অভিপ্রায়ই দেখায়নি।

আর তাতে আরও গভীর বিতর্কের ঘেরাটোপে জড়িয়ে পড়ছে ভারতের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে পরিচালিত নির্বাচনী প্রক্রিয়া।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ