আজকের শিরোনাম :

মন্দির অবমাননার জন্য মুসলিম নারীকে মুরতাদ ঘোষণা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:১৯

ভারতের কেরালায় শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন, এমন এক মুসলিম নারী অ্যাক্টিভিস্টকে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেছে সেখানকার প্রভাবশালী এক মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন।

রাজ্যের প্রভাবশালী ধর্মীয় সংগঠন 'দ্য কেরালা মুসলিম জামাত কাউন্সিল' ঘোষণা করেছে- রেহানা ফাতিমা নামে ওই নারীর মুসলিম নাম ব্যবহার করার আর কোনও অধিকার থাকবে না।

'লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্তর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার জন্যই' কাউন্সিল রেহানা ফাতিমার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে হাতিয়ার করে গত সপ্তাহে যে হাতেগোনা কয়েকজন নারী কেরালার শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন, রেহানা ছিলেন তাদেরই একজন।

গত শুক্রবার, মন্দির খোলার পর তৃতীয় দিনে রেহানা ফাতিমা ও তার সঙ্গী কবিতা জাক্কালা নামে এক নারী সাংবাদিক শতাধিক পুলিশকর্মীর পাহারায় শবরীমালা মন্দিরের পাঁচশো মিটারের মধ্যে পৌঁছেও গিয়েছিলেন।

কিন্তু পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ওই মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করার আগেই তুমুল বিক্ষোভের মুখে তাদের ফিরে আসতে হয়।

এদিকে রেহানা ফাতিমা যখন শবরীমালার অভিমুখে ট্রেক করছেন, সে দিনই দুজন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী মোটরবাইকে চেপে এসে তার কোচি-র বাসভবনে হামলা চালায়।

সে সময় রেহানা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, "আমার জীবনের ওপরও হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। এমন কী আমার বাচ্চারা নিরাপদে আছে কি না সেটাও জানি না!"

কিন্তু রেহানা ফাতিমা যেভাবে শবরীমালায় ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, তার তীব্র নিন্দা জানাতে থাকে বিজেপি-সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী দল।

তামিলনাডুতে বিজেপির সভাপতি টি সৌন্দরারাজন টুইট করেন, "শবরীমালা হল বিশ্বাসীদের উপাসনার জায়গা। কিন্তু বহু বছর ধরেই অবিশ্বাসী ও অ্যাক্টিভিস্টরা সেখানে গিয়ে অন্যের ধর্মবিশ্বাসকে নষ্ট করতে চাইছে।"

"অ্যাক্টিভিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মবেশে অন্য ধর্মের মৌলবাদীরাও যেভাবে এখন সেখানে ঢুকতে চাইছে, আমি তাতে স্তম্ভিত। হিন্দুদের এভাবে আঘাত করার চেষ্টা অতি নিন্দনীয়।"

কেরালার খ্রিষ্টান বিধায়ক পি সি জর্জও দাবি তোলেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট করার অপরাধে ভারতীয় দন্ডবিধির ১৫৩(এ) ধারা অনুযায়ী রেহানা ফাতিমাকে গ্রেফতার করা উচিত।

শবরীমালা মন্দিরে নারীদের ঢুকতে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। অক্টোবর, ২০১৮
এর পরই 'দ্য কেরালা মুসলিম জামাত কাউন্সিল' সিদ্ধান্ত নেয় যে রেহানা ফাতিমাকে ইসলাম থেকেই বহিষ্কার করা হবে।

কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এ পুকুঞ্জু এক বিবৃতিতে বলেন, "তিনি যা করেছেন সেটা হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী।"

"এর আগেও তিনি 'কিস অব লাভ' (প্রকাশ্যে চুম্বন) প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। নগ্ন হয়ে সিনেমাতেও নেমেছেন। এরপর কোনও মুসলিম নাম নিয়ে চলার অধিকার তার নেই বলেই আমরা মনে করি।"

কাউন্সিল শুধু এতেই থেমে থাকেনি, এর্নাকুলাম সেন্ট্রাল মুসলিম জামাত-কেও নির্দেশ দিয়েছে রেহানা ফাতিমার পরিবারের (স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে) 'মহল্লু সদস্যপদ'ও যেন খারিজ করে দেওয়া হয়।

ইতিমধ্যে রেহানা ফাতিমা নিজে দ্য হিন্দু পত্রিকাকে জানিয়েছেন, "আমি শবরীমালা মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি, কারণ আমার মুসলিম নামকে ব্যবহার করে তিনি ধর্মীয় আবেগকে উসকানি দিচ্ছেন ও দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছেন।"

রেহানা আরও দাবি করেন, শবরীমালা একটি ধর্মনিরপেক্ষ তীর্থস্থান এবং সেখানে সব ধর্মের মানুষেরই প্রবেশাধিকার আছে।

শবরীমালা মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করার আগে হিন্দু তীর্থযাত্রীরা যেভাবে ৪১ দিন ধরে উপবাস করে থাকেন, সেভাবে তিনিও নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন বলে জানিয়েছেন রেহানা ফাতিমা।

রেহানা ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএলের একজন কর্মী। এ বছরের মার্চ মাসে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেও তিনি তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।

ওই ছবিতে তাকে দেখা গিয়েছিল নিজের স্তনদুটি তিনি শুধুমাত্র দুটুকরো তরমুজ দিয়ে ঢেকে ক্যামেরার সামনে এসেছেন।

তার কিছুদিন আগেই কেরালার কোঝিকোড়ে একজন মুসলিম অধ্যাপক বলেছিলেন, "যে মুসলিম নারীরা হিজাব পরেন না, তারা নিজেদের স্তনদুটো কাটা তরমুজের মতো তুলে ধরতে চান।"

সেই মন্তব্যের প্রতিবাদেই রেহানা ফাতিমা ওই ছবি পোস্ট করেছিলেন বলে সে সময় জানান। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ