আজকের শিরোনাম :

সৌদির স্বীকারোক্তি খাসোগজিকে খুন করা হয়েছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:১৫ | আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৮, ২০:১২

ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের মধ্যে ঘুষোঘুষির এক পর্যায়ে সাংবাদিক জামাল খাসোগজি মারা যান- এই ব্যাখ্যার দুদিন না যেতেই নতুন আরেক তত্ত্ব হাজির করেছে সৌদি আরব সরকার।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবের বলছেন মার্কিন টিভি ফক্স নিউজকে বলেছেন, সাংবাদিক খাসোগজিকে খুন করা হয়েছে।

তবে তিনি বলেন যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান সেই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেননি। তার কথা, নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু 'দুর্বৃত্ত' নিজেদের সিদ্ধান্তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

তুর্কি মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

কিন্তু সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ এই ব্যাখ্যার পরপরই তুরস্কের একটি সরকার সমর্থিত পত্রিকায় চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হয়েছে যাতে ঐ হত্যাকাণ্ডে পেছনে যুবরাজ সালমানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ইয়েনি সাফাক নামে যে পত্রিকাটি গত দু-সপ্তাহ ধরে এ নিয়ে খবর ফাঁস করছে, তারা লিখছে, হত্যাকাণ্ডের পরপরই প্রভাবশালী সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহের আব্দুল-আজিজ মুতরেব ইস্তাম্বুল থেকে যুবরাজ সালমানের অফিসে চার বার টেলিফোনে কথা বলেছিলেন।

পত্রিকাটি আরো বলছে, মুতরেব ওয়াশিংটনেও একটি ফোন কল করেছিলেন, এবং "সম্ভবত ঐ ফোনটি তিনি করেছিলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত খালেদ বিন সালমানকে।" রাষ্ট্রদূত খালেদ বিন সালমান যুবরাজ সালমানের ছোট ভাই।

এই ঘটনা নিয়ে যে ১৮ জনকে সৌদি আরবে আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেবও রয়েছেন।

বিবিসির তুর্কি ভাষা বিভাগ বলছে, ইয়েনি সাফাক যে তথ্য ফাঁস করেছে, তা কি ফোন কলে আড়ি পেতে পাওয়া, নাকি হত্যাকান্ডের কথিত অডিও রেকর্ডিং থেকে পাওয়া তা এখন নিশ্চিত নয়।

পত্রিকাটি সূত্র গোপন রেখেছি। অবশ্য এ পর্যন্ত এ নিয়ে তুরস্ক এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে যেসব তথ্য ফাঁস হচ্ছে, তা সূত্র গোপন রেখেই করা হচ্ছে।

ইয়েনি সাফাক গতকাল (রোববার) খবর দিয়েছিল, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটের মধ্যে তাকে হত্যা করার আগে মি খাসোগজিকে টেলিফোনে যুবরাজ সালমানের সাথে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সময়, যুবরাজ তাকে সৌদি আরকে ফেরার কথা বলেন। মি খাসোগজি যখন তাতে রাজী হননি, তখনই তাকে হত্যা করা হয়।

বিবিসি তুর্কি বিভাগের সাংবাদিকরা বলছেন, এটা পরিষ্কার যে তুরস্কের সরকার চাইছে এসব ঘটনা ফাঁস হোক, এবং ইয়োনি সাফাক পত্রিকা সেই কাজই করছে।

ইয়েনি সাফাক পত্রিকার ফাঁস করা সর্বশেষ এসব তথ্য নিয়ে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এখনও কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি।

তবে ঘুষোঘুষির সময় মি খাসোগজি দুর্ঘটনাবশত মারা যান বলে রোববার সৌদি আরবের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক।

প্রেসিডেট এরদোয়ানের একজন উপদেষ্টা ইয়াসিন আকতে বলছেন, 'সৌদিরা তুরস্কের বুদ্ধিমত্তাকে উপহাস করছে।'

তিনি বলেন, সৌদি এই ব্যাখ্যায় কোনো সত্যই উদঘাটিত হয়নি, বরঞ্চ নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি নিজে সংসদে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে "নগ্ন সত্য" প্রকাশ করবেন।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবের ফক্স নিউজের সাথে সাক্ষাৎকারে বলার চেষ্টা করেছেন, কিছু মানুষ নিজের সিদ্ধান্তে এই অপরাধ ঘটিয়েছে এবং এর সাথে সৌদি নেতৃত্বের কোনো সম্পর্কই নেই।

"এই মানুষগুলো তাদের ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছে..অবশ্যই সাংঘাতিক ভুল হয়েছে এবং কেউ ভুল ঢাকতে গিয়ে আরো ভুল করেছে তারা।"

"আমরা সত্য উদঘাটনে এবং অপরাধীদের সাজা দিতে বদ্ধপরিকর।"

মি খাসোগজির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সৌদিদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দেওয়া পরস্পরবিরোধী নানা ব্যাখ্যা তাদের পশ্চিমা মিত্ররাও গ্রহণ করেনি।

শনিবার ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যিনি সৌদি রাজপরিবারের বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত, বলেছেন, সৌদিদের বিভিন্ন বক্তব্যে "মিথ্যা" এবং "প্রতারণা" রয়েছে।

ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, মি খাসোগজির হত্যাকাণ্ড নিয়ে তারা সৌদি আরবের কাছ থেকে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা চায়।

তবে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ সৌদি রাজপরিবারের সমর্থনে কথা বলেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে - মিশর, কুয়েত, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ