ফের সামরিক শক্তি অর্জনের পথে জার্মানি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৯
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে জার্মানি প্রতিরক্ষার জন্য প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সামরিক জোটের ওপর নির্ভর করেছে। অনেকটা ইচ্ছায়, অনেকটা অনিচ্ছায়।
সম্প্রতি ন্যাটো জোট নিয়ে আমেরিকার ক্রমবর্ধমান অনীহার কারণে জার্মানি বহুদিন পর সামরিক খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ন্যাটো বাহিনীতে আরও প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে।
লিথুয়ানিয়া বেলারুশ সীমান্তে মোতায়েন ন্যাটো ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মানি। রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছোট এ সদস্য দেশকে আশ্বস্ত করতেই লিথুয়ানিয়াতে ন্যাটো এখানে সৈন্য মোতায়েন করেছে।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী উরসুলা ফন দের লেইন বিবিসিকে বলেন, প্রতিরক্ষা নিয়ে জার্মানির নীতিতে বদল হচ্ছে এবং লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটো বাহিনীর নেতৃত্ব তারই একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। আগে আমরা ভাবতাম, আমাদের ইতিহাসের কারণে আমরা প্রতিরক্ষা নিয়ে, সামরিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবো না। কিন্তু এখন রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিধর একটি দেশ হিসেবে আমরা আর বসে থাকতে পারি না। আমরা এখন মনে করছি আমাদের ইতিহাসের কারণেই আমাদের ভূমিকা নিতে হবে।’
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দশকের পর দশক ধরে জার্মানি সামরিক খাতকে অবজ্ঞা করেছে। সৈন্য সংখ্যা, প্রশিক্ষণ, আধুনিক অস্ত্র, সামরিক বাজেট- এসব বিষয় তাদের অগ্রাধিকারের অনেক নিচুতে ছিল। সুতরাং ন্যাটোতে নেতৃত্ব পর্যায়ে আসতে চাইলে তাদের ক্ষমতা এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। কুঠান্সে কথাই বলছিলেন ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক কনস্টানয স্টেনজেমুলার। বলেন, ‘নব্বই দশকের শেষ দিকে থেকে জার্মান সেনাবাহিনী শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা শুরু করছে। তবে ন্যাটো জোটের অন্য অনেক সদস্য দেশের সমান্তরালে পৌছুতে তুলনায় আরও অনেক দূর যেতে হবে। তার জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট অনেক বাড়াতে হবে, চেষ্টা আরও অনেক জোরদার করতে হবে।’
স্টেনজমুলার বলেন, বর্তমান জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত দুই বছর ধরে সেটাই করার চেষ্টা করছেন।
রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলের ঘটনা জার্মানির মনোভাব পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তার দুই বছর পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ায় জার্মানির সেই মনোভাব আরও শক্ত হয়েছে।
বিবিসির কাছে তা স্বীকার করেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন দের লেইন। বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার ঘটনার একটা প্রভাব তো রয়েছেই। সেটা ছিল একটা সতর্ক সঙ্কেত। কারণ ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি বলেছিলেন, নেটো অকেজো একটি জোট। এ কথা শুনে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো শঙ্কিত হয়ে পড়ে। সে কারণেই আমরা তাড়াতাড়ি করে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ইউনিয়ন গঠন করি। সিদ্ধান্ত নিই, আমাদেরকে ইউরোপের প্রতিরক্ষায় আরও শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।’
তবে জার্মান মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে জার্মানদের মধ্যে এখন বিতর্ক চলছে।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেন, নেটো জোটে ইউরোপীয়রা যথেষ্ট দায় নিচ্ছেনা। বিশেষ করে জার্মানির ব্যাপারে তিনি খুবই নাখোশ ।
বার্লিনে গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন্সের গবেষক রিকা ফ্রাঙ্কা বলেন, ন্যাটো জোটের অন্য সদস্যদের জন্য জার্মানি খারাপ একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল। এসব দেশ বলছিল জার্মানির মতো ধনী দেশ যদি প্রতিরক্ষায় খরচ না করে, গুরুত্ব না দেয়, তা হলে আমাদের অপরাধ কোথায়।’
শহরে সামরিক মহড়া
লিথুয়ানিয়াতে মোতায়েন ন্যাটো বাহিনীতে জার্মান সৈন্যদের সঙ্গে রয়েছে চেক, ডাচ ও বেলজিয়াম সৈন্য। তাদের তারা সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে পারছে- এটা প্রমাণ করা জার্মানির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৯ সালে জার্মানি নেটোর দ্রুত মোতায়েন-যোগ্য টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্ব নিতে চলেছে। সন্দেহ নেই যে প্রতিরক্ষা এবং সামরিক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের খোলস থেকে বেরিয়ে জার্মানি আর দশটি বড় দেশের মতো স্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেছে। যদিও তাদের অনেকটা পথ যেতে হবে।
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
লিথুয়ানিয়াতে মোতায়েন ন্যাটো বাহিনীতে জার্মান সৈন্যদের সঙ্গে রয়েছে চেক, ডাচ ও বেলজিয়াম সৈন্য। তাদের তারা সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে পারছে- এটা প্রমাণ করা জার্মানির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৯ সালে জার্মানি নেটোর দ্রুত মোতায়েন-যোগ্য টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্ব নিতে চলেছে। সন্দেহ নেই যে প্রতিরক্ষা এবং সামরিক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের খোলস থেকে বেরিয়ে জার্মানি আর দশটি বড় দেশের মতো স্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেছে। যদিও তাদের অনেকটা পথ যেতে হবে।
খবর বিবিসি এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ