আজকের শিরোনাম :

খাসোগি নিখোঁজ : কী জানা যাচ্ছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৮

মার্কিন প্রবাসী ও সৌদি সরকারের কঠোর সমালোচক জামাল খাসোগি গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে প্রবেশ করেন কিছু তথ্যের জন্য। তার পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি।

তার সঙ্গী আশঙ্কা করছেন তাকে অপহরণ করা হয়েছে অথবা হত্যা করা হয়েছে। ইস্তাম্বুলের কর্তৃপক্ষ মনে করছে সৌদি এজেন্টরা তাকে খুন করেছে। সৌদি আরব অবশ্য জোর দিয়ে দাবি করছে যে খাসোগি আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই দূতাবাস ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

এই নিখোঁজ সম্পর্কে আমরা এখনো পর্যন্ত কতটুকু জানি? আর কী জানি না?

কে এই সাংবাদিক?
খাসোগি একজন নামকরা সাংবাদিক, যিনি অনেক বড় বড় সংবাদ কভার করেছেন। এর মধ্যে আফগানিস্তানে সোভিয়েত অভিযান, ওসামা বিন লাদেনের উত্থান ইত্যাদি। অনেক বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি এসব খবর লেখেন।

গত বছর আমেরিকায় যান স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে এবং ওয়াশিংটন পোস্টে প্রতি মাসে কলাম লিখতেন, যেখানে তিনি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে সমালোচনামূলক লেখা লিখেছেন।

নিজের প্রথম কলামেই তিনি লেখেন যে, যুবরাজ সালমান বাদশাহ সালমানের স্থলাভিষিক্ত হলে খাসোগি ভিন্নমত পোষণের কারণে গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

গুম হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে বিবিসি নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তারা শুধু বিদ্রোহী তা নয়, তাদের স্বাধীন মন রয়েছে।’

ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে তিনি প্রথম প্রবেশ করেন ২৮ সেপ্টেম্বর। সে সময় তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে তার ডিভোর্সসংক্রান্ত কাগজপত্র তুলতে এসেছিলেন তিনি। খাসোগি এর পর ২ অক্টোবর দুপুরের দিকে আবার আসেন দূতাবাসে। স্থানীয় সময় দেড়টার দিকে তার অ্যাপয়নমেন্ট ছিল।

প্রথমবার তার সঙ্গে খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয় বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন তিনি। কোনো সমস্যা হবে না বললেও তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন।

এত কিছুর পরও তিনি তার তুর্কি বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে নিজের দুটো মোবাইল ফোন দিয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, যদি তিনি কনস্যুলেট থেকে বের না হন- তা হলে হাতিস যেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একজন উপদেষ্টাকে ফোন করেন।

খাসোগির অপেক্ষার দূতাবাসের বাইরে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করে থাকেন হাতিস চেঙ্গিস। বুধবার সকালে তিনি সেখান থেকে ফিরে যান।

তুরস্ক কী বলছে?
তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, দূতাবাসের আঙিনার বাইরে সৌদি এজেন্টদের একটি দলের হাতে খাসোগি খুন হয়েছেন। এর পরপরই তার মরদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এ বক্তব্যের সমর্থনে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি তারা।

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে নাম প্রকাশ না করে এক কর্মকর্তা জানান, একটি কমপ্লেক্স অপারেশন আছে এবং সেখানে খাসোগিকে হত্যা করা হয় পৌঁছানোর ২ ঘণ্টার মধ্যেই।

সরকার-সমর্থক তুর্কি সংবাদপত্র সাবাহ বলছে, তারা সন্দেহভাজন ১৫ সৌদি এজেন্ট শনাক্ত করেছেন, যারা গুমের ঘটনার দিন ইস্তানবুলে ঢুকেছিল এবং পরে বেরিয়ে গেছে।

বিবিসি জানতে পেরেছে এ দলের একজন সদস্য মাহের মুটরেব সৌদি গোয়েন্দা-বাহিনীর কর্নেল হিসেব কাজ করতেন এবং লন্ডনের এম্বেসিতে কর্মরত ছিলেন। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে একটি প্রাইভেট বিমানে করে এ এজেন্টদের ৯ জন ওইদিনই এসে পৌঁছোয় বলে খবরে বলা হয়। বাকি সদস্যরা দিনের অন্য সময় একে একে এসে পৌঁছায় দ্বিতীয় আরেকটি বিমানে করে। এর পর তারা দূতাবাস ভবনের কাছাকাছি দুটি হোটেলে অবস্থান নেয়।

তুরস্কের টেলিভিশনের প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সৌদি আরবের লোকজন এয়ারপোর্টে প্রবেশের পর গিয়ে হোটেলে উঠছে। খাসোগির ভিজিটের ১ ঘণ্টা আগে কিছু যানবাহন দূতাবাসে ঢুকতে দেখা যায়।

এর পর আগন্তুকরা প্রাইভেট বিমানে করে দেশ ছেড়ে যায় এবং সেগুলো রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যায় কায়রো ও দুবাই হয়ে, তদন্তকারীরা এমনটাই বলছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়, খাসোগির পৌঁছানোর আগে মার্কিন সামরিক গোয়েন্দারা সৌদি কর্মকর্তাদের কথোপকথন রেকর্ড করেতে জানতে পারেন তারা একটি ষড়যন্ত্র পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করছিল।

সৌদি আরব কী বলছে?
যুবরাজ মোহাম্মদ গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গ নিউজকে বলেছেন, ‘আসলে কী ঘটেছে সেটা জানতে তার সরকার খুবই উদগ্রীব’ এবং খাসোগি কিছু সময় কিংবা ঘণ্টা খানেক পরই দূতাবাস এলাকা ছেড়ে যান। 

‘আমাদের গোপন করার কিছুই নেই’- তিনি উল্লেখ করেন। প্রিন্স মোহাম্মদ এর ভাই এবং আমেরিকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালেদ বিন সালমান ‘ খাসোগি গুম বা হত্যার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা তারা সব ধরনের সহায়তার জন্য উন্মুক্ত এবং ভবনটির ভেতরে একটি তল্লাশি অভিযান চালানো যেতে পারে।

তুরস্ক বলছে তারা তল্লাশি চালাবে কিন্তু তার আগে প্রমাণ দিতে হবে যে মিস্টার খাসোগি যে ভবনটি ছেড়ে গেছেন প্রমাণ দিতে হবে। খাসোগির ছেলে সৌদি মালিকানাধীন আল অ্যারাবিয়া নিউজ আউটলেটকে বলেছেন তার বাবার নিখোঁজের ঘটনা বিদেশি মহলের কারণে ‘রাজনৈতিক’ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ‘মূল ঘটনা হচ্ছে তিনি একজন সৌদি নাগরিক এবং নিখোঁজ রয়েছেন।’

এদিকে সৌদি আরবের নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাসোগি সম্পর্কে জানতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

তুরস্কের কর্তৃপক্ষ বলছে, খাসোগি নিহত হয়েছেন। তবে সৌদি আরব তা অস্বীকার করেছে।

ট্রাম্প বুধবার বলেন, ‘কোনো সাংবাদিকের ক্ষেত্রে, কারো ক্ষেত্রে আমরা এমনটা ঘটতে দিতে পার না।’

হোয়াইট হাউস বলছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং সিনিয়র কর্মকর্তারা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং খাসোগি সম্পর্কে বিস্তারিত খবর নিয়েছেন।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ