আজকের শিরোনাম :

বিয়ের সংজ্ঞা নির্ধারণে রোমানিয়ায় গণভোট

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৩

একজন পুরুষ ও নারীর বিয়েই শুধু বৈধ বিয়ে- এ প্রস্তাবের ওপর হ্যাঁ-না ভোট হচ্ছে রোমানিয়ায়।

শনিবার ও রবিবার দুদিন ধরে এ গণভোটের পরিণতির রোমানিয়ার সংবিধানে বিয়ে এবং পরিবারের সংজ্ঞা বদলে যাবে।

প্রস্তাবের পক্ষের মানুষজন বলছেন, তাদের দেশের পরিবারের ‘ঐতিহ্য’ বজায় রাখতে সংবিধানে বিয়ের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা জরুরী।

প্রস্তাবের বিপক্ষের লোকজন বলছেন, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়লে রোমানিয়ায় সমলিঙ্গের দম্পতি, অবিবাহিত বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের ওপর অবিচার হবে। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বাড়বে।

রোমানিয়ায় সমলিঙ্গের নারী-পুরুষের বিয়ে বা দম্পতি হিসেবে তাদের একত্র বসবাস স্বীকৃত নয়। এ গণভোটের ফলাফলে তা বদলও হবে না। কিন্তু সংবিধানে বৈধ বিয়ে এবং পরিবারের সংজ্ঞা স্পষ্ট হবে।

রোমানিয়ার সংবিধানের ৪৮ ধারায় বলা আছে, ‘স্বেচ্ছায় দুই সঙ্গীর মধ্যে বিবাহবন্ধনই পরিবারের ভিত্তি।’ ওই দুই সঙ্গীকে অবশ্যই নারী এবং পুরুষ হতে হবে- বিষয়টি ততটা স্পষ্ট নয়।

কিন্তু এখন হ্যাঁ ভোট জিতলে সংবিধানের ভাষা হবে- ‘একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে বিয়েই হবে পরিবারের ভিত্তি।’

কোয়ালিশন ফর ফ্যামিলি নামে যে সংগঠনটি হ্যাঁ ভোটের পক্ষে প্রচার চালিয়েছে, তার প্রেসিডেন্ট মিহাই গিওর্গিও- যিনি একজন সাবেক মন্ত্রী- বলছেন, ‘বিয়ে যে শুধু একজন নারী এবং পুরুষের মধ্যেই হতে পারে, এ বিষয়টি আমরা সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চাই।’

রোমানিয়ার সাধারণ আইনে এখনো পরিবার বা বিয়ের সেই সংজ্ঞাই রয়েছে, কিন্তু কিছু মানুষ সেটি সংবিধানে ঢুকিয়ে পোক্ত করতে চাইছে।

কিন্তু এই প্রস্তাবের বিরোধীরা বলছেন, পক্ষে ভোট পড়লে রোমানিয়ায় সমলিঙ্গের দম্পতি, অবিবাহিত বাবা-মা এবং তাদের সন্তানদের ওপর অবিচার হবে, তাদের নাগরিক এবং আর্থ-সামাজিক অধিকার হুমকিতে পড়বে।

মিহাই গিওর্গিও অবশ্য এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন। বলেন, ‘এলজিবিটিদের অধিকার এবং চাহিদার প্রশ্নে কোনো পরিবর্তন হবেনা।’

২০১০ সাল থেকে রোমানিয়ায় সমকামিতা আর কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু সমকামী দম্পতিদের কোনো অধিকার নেই। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় সমকামীদের প্রতি ঘৃণা, প্রকাশ্যে তাদের হেনস্থা হরহামেশাই হয়।

শুধু নারী ও পুরুষের মধ্যে বিয়েই বিয়ে বলে গণ্য হবে- এ প্রস্তাবের পেছনে ব্যাপক জন-সমর্থন রয়েছে রোমানিয়ায়।

গণভোট যাতে হয় সে জন্য গিওর্গিওর দল ৩০ লাখ মানুষের সই জোগাড় করেছিলেন। রোমানিয়ার ১ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই নিজেদের ‘অর্থোডক্স’ খ্রিস্টান হিসেবে পরিচয় দেয়। অর্থোডক্স গির্জা প্রকাশ্যে প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে।

প্রস্তাবের বিপক্ষের লোকজন মানুষজনকে এ গণভোট বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের একটাই ভরসা- ভোটারের সংখ্যা ৩০ শতাংশের কম হলে গণভোট বৈধ হবে না।

রোমানিয়ায় মানুষজনের মধ্যে ভোট দেওয়ার প্রবণতা কম। ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৩০ শতাংশেরও কম মানুষ ভোট দিয়েছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রবিবারের গির্জায় প্রার্থনা থেকে ফেরার পথে প্রচুর মানুষ ভোট দেবেন। ফলে, উপস্থিতির সংকট হবে না।

সমালোচকরা বলছেন, শুধু নারী এবং পুরুষের মধ্যে বিয়ের ভিত্তিতে পরিবারের সংজ্ঞা নির্ধারিত হলে বিয়ে না করে যারা বাবা-মা হয়েছেন- তাদের এবং তাদের সন্তানদের সাংবিধানিক অধিকার হারাবেন ।

ইউরোপীয় সংসদের ৪৭ এমপি রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে এক চিঠিতে লিখেছেন, পরিবারের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারিত হলে বহু শিশুর প্রতি অবিচার হবে।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ