বিধ্বস্ত সিরিয়ার মানুষকে হাসাতে রেডিও আলওয়ান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৩ | আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৯
রেডিও আলওয়ান একটি ছোট্ট, স্বাধীন এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ রেডিও স্টেশন। ২০১৪ সালে সিরিয়ায় এর জন্ম, কিন্তু নির্বাসিত হওয়ায় তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে সম্প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় মাথায় রাখা হয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধ, কষ্ট আর যন্ত্রণার কথা। যে কারণে তাদের পরিকল্পনার বড় অংশ জুড়ে ছিল কীভাবে হাসি ফোটানো যাবে শ্রোতাদের মুখে।
কিন্তু যা বলেছেন, তার মানে দাড়ায় এসে কোন লাভ নেই আর, কেননা আলওয়ানের সব হাসি ঠাট্টা ফুরিয়ে গেছে। রেডিও আলওয়ানের বেহাল দশা কেন?
কারণ আর কিছুই না, সাত বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া কেবল রক্তাক্তই নয়, কোথাও কোথাও শুকিয়ে খটখটেও হয়ে গেছে। ব্যতিক্রমী উপস্থাপনায় খবর আর নানাবিধ ভিন্ন পরিবেশনার অনুষ্ঠান নিয়ে সাজানো এই রেডিওটির অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় সব কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। সিরিয়ার ভেতরকার সব অফিস বিধ্বস্ত, সাংবাদিকদের অনেকে পেশা বদলে ফেলেছেন। কেবল সিরিয়ার ইদলিবে ছয়জন কর্মী আছেন, যারা সেখানকার বাকী বাসিন্দাদের মত অজানা ভবিষ্যতের জন্য আশংকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় বহু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা এনজিওর মত 'রেডিও আলওয়ান'ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন এক সিদ্ধান্তের খড়গের নিচে পড়েছে। গত ইস্টারের সময় মিঃ ট্রাম্প নিয়ম করেন, সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দেশটিতে কর্মরত সকল অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা এনজিওকে ২০ কোটি ডলার অর্থায়ন করতে হবে। এরপর সামি সিদ্ধান্ত নেন ইদলিবে নতুন করে অফিস খোলার, কারণ সেটা তখন অন্যান্য জায়গার তুলনায় নিরাপদ ছিল। কেমন রেডিও স্টেশন আলওয়ান?
রেডিও স্টেশনটি সিরিয়ার মানুষের মনে আশার সঞ্চার করার চেষ্টা করতো। এখন দুজন নারী উপস্থাপক, দুজন পুরুষ উপস্থাপক, আর দুজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আটকে আছে ইদলিবে। নিজেদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে রাসায়নিক হামলার আশংকা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। "ওরা ভীত, কি হবে ধারণা করতে পারছে না। কিন্তু আমরা তো জানি পরিস্থিতি ঘৌটা আর দারার চেয়ে খারাপ হবে। কারণ ইদলিবে লোকের সংখ্যাই অনেক বেশি আর তুরস্ক তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ওখান থেকে কেউ পালাতে পারবে না।" ইদলিব নিয়ে পরাশক্তি দেশগুলো যখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা পাল্টা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, সমাধান ছাড়াই বৈঠকের পর বৈঠক করছেন, তখনো সম্প্রচার চলছে আলওয়ানের। কেবল সংবাদ নয়, এখনও রেডিওতে প্রচার হচ্ছে কবিতা আর সাহিত্যের আসর, রয়েছে সঙ্গীত, সংস্কৃতি আর নারী ইস্যুর ওপর নিয়মিত আলোচনা। এমাকে সামি বলছিলেন, টিমের একজন একটা স্মার্টফোন জোগাড় করেছে, ফলে সামনের সপ্তাহ থেকেই আবারো শুরু হচ্ছে ফোন-ইন, অর্থাৎ যে অনুষ্ঠানে শ্রোতারা সরাসরি মতামত দিতে পারেন। সিরিয়ার সব মানুষের মতো এখন তাদেরও প্রত্যাশা বিনা রক্তপাতে কিংবা যত কম রক্তের বিনিময়ে দেশটিতে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত ইথারে মন ভালো করার পঙক্তিমালা পাঠাতে থাকবে আলওয়ান---বলছিলেন সামি।
সূত্র: বিবিসি এবিএন/জসিম/নির্ঝর
এই বিভাগের আরো সংবাদ