আজকের শিরোনাম :

তিন তালাক শাস্তিযোগ্য অপরাধ: ভারতে নির্বাহী আদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:০৫

মুসলিম সমাজের মধ্যে প্রচলিত তিন তালাক প্রথাকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার একটি অর্ডিন্যান্স বা নির্বাহী আদেশ জারি করেছে।

তিনবার তালাক উচ্চারণ করে স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদ দিলে এই আইন অনুযায়ী মুসলিম পুরুষদের তিন বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানার বিধান থাকছে। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর খোরপোষ পাওয়ারও অধিকার থাকবে।

গত বছরের অগাস্টে এক ঐতিহাসিক রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে আইন প্রণয়নের ভার তারা ছেড়ে দিয়েছিল সরকারেরই ওপর।

এরপর এই প্রথাকে শাস্তিযোগ্য করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার 'দ্য মুসলিম উইমেন প্রোটেকশন অব রাইটস ইন ম্যারেজ অ্যাক্ট' নামে একটি বিলও আনে, যা সাধারণভাবে 'তিন তালাক বিল' নামেই পরিচিতি পায়।

গত বছরের ডিসেম্বরে ওই বিলটি ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়ে গেলেও রাজ্যসভায় সেটি বিরোধীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে।

অনেক বিরোধী দলের নেতাই যুক্তি দেন, ভাল করে খুঁটিয়ে দেখার জন্য বিলটিকে একটি সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো উচিত।

ওই বাধার মুখে বিলটি পাস করাতে না-পেরে সরকার এখন ঘুরপথে সেটিকে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আইনে পরিণত করল। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ভারতের আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এরপর বিরোধী কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, "তাদের দলের সর্বোচ্চ নেত্রী একজন মহিলা (সোনিয়া গান্ধী), তা সত্ত্বেও নিছক ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য তারা পার্লামেন্টে আইন করে এই বর্বর প্রথা বন্ধ করতে রাজি হলেন না, সেটাই আশ্চর্যের ও দু:খের।"

তবে পার্লামেন্টে যে বিলটি আনা হয়েছিল, তার তুলনায় এদিন আনা অর্ডিন্যান্সে শাস্তির বিধান বেশ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

মূল বিলটিতে ছিল তিন তালাক হয়েছে বলে অভিযোগ যে কেউ আনতে পারেন, এমন কী প্রতিবেশীরাও। অর্ডিন্যান্সে অবশ্য বলা হয়েছে কেবল মাত্র তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও তার রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়রাই অভিযোগ আনতে পারবেন।

এমন কী, তিন তালাক দেওয়া স্বামী যদি আপষ মীমাংসায় রাজি থাকেন, তাহলে স্ত্রী-র সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ারও সুযোগ থাকছে অর্ডিন্যান্সে।

অভিযুক্ত স্বামীর এর আগে জামিন পাওয়ারও কোনও সুযোগ ছিল না। কিন্তু অর্ডিন্যান্সটি বলছে, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করতে পারবেন।

কংগ্রেস এর আগে সরকারকে জানিয়েছিল, তারা পার্লামেন্টে বিলটিকে সমর্থন করতে রাজি - যদি কথা দেওয়া হয় যে তিন তালাক দেওয়ার অভিযোগে কোনও স্বামীর জেল হলে সে সময় তার স্ত্রীর আর্থিক ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকারই নেবে।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অবশ্য সে প্রস্তাব মেনে নেয়নি। তবে বিলের সমর্থনে তারা বেশির ভাগ রাজ্য সরকারের সমর্থন পেয়েছে বলেই দাবি করছে।

আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এদিন আরও বলেছেন, শুধুমাত্র ভারতের মুসলিম নারীদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

তার কথায়, "এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণই জেন্ডার জাস্টিস (সব লিঙ্গের জন্য ন্যায়) নিশ্চিত করার জন্য, এর সঙ্গে ধর্ম বা ভোটের রাজনীতির কোনও সম্পর্কই নেই।"

এর আগে ভারতের বেশ কয়েকজন মুসলিম নারী একযোগে তিন তালাক নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।

তাদের বক্তব্য ছিল, শুধু মুখে তিনবার তালাক উচ্চারণ করেই নয়, অনেক সময় ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে বা এসএমএস পাঠিয়েও তালাক দেওয়ার ঘটনা ঘটছে - আর তা চরম দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার ওই নারীদের।

তবে সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার পরও এই ধরনের 'ইনস্ট্যান্ট' বা তাৎক্ষণিক তালাক পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি।

গত অগাস্টে ওই রায় আসার পরও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত সত্তরটি এ ধরনের ঘটনার খবর এসেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ